আক্রান্ত ব্যক্তি ডিজি-কে ই-মেলে অভিযোগ জানাতে পারবেন

ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে নজিরবিহীন নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিনিধি– গত বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানি এখনও বিচারাধীন কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে উঠল লোকসভার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা।

এদিন ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে সরাসরি রাজ্যের ডিজি-কে ই-মেল মারফত অভিযোগ জানাতে পারবেন আক্রান্ত ব্যক্তি। কর্তব্যযোগ্য বা আদালতগ্রাহ্য অপরাধ হলে সঙ্গে সঙ্গে ডিজি স্থানীয় থানাকে উপযুক্ত ধারায় এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেবেন। এফআইআর দায়ের করার পর উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে পুলিশ’। এই নির্দেশ বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চের। ‘রাজ্যে ক’টি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছে? এবং ক’টি ক্ষেত্রে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ? এবং কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবেন রাজ্যের ডিজি’। এই নির্দেশ হাইকোর্টের। এর পাশাপাশি, এফআইআর দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে সেটা রাজ্য পুলিশের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। এই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। একইসঙ্গে এফআইআর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন পড়লে রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী পদক্ষেপ করবে। ‘আমরা রাজ্যের সমস্ত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।’ এদিন তা জানালো কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ। ‘এরাজ্যের ক্ষেত্রে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস কোনও অপরিচিত শব্দ নয়। সরকার যদি রাজ্যবাসীর জীবনরক্ষায় ব্যর্থ হয়, তাহলে আদালত উপযুক্ত নির্দেশ দেবে।’ এই মামলায় জানায় ডিভিশন বেঞ্চ । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছি যে, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’


এদিকে বিচারপতির এই মন্তব্যের পরেই পাল্টা রাজ্যের দাবি,’রাজ্যে আজ পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু আছে। যে গণ্ডগোলের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাও হতে পারে’। এর প্রত্যুত্তরে বিচারপতি বলেন, ‘আগের বিধানসভা ভোটের পর যা হয়েছিল, এখনও তাই হচ্ছে। আপনাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আপনারা কি অস্বীকার করতে পারবেন যে, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস হচ্ছে না? এই রাজ্য ছাড়া আর কোথাও এই অভিযোগ আছে?’ লাগাতার এই প্রশ্নগুলিও করতে থাকেন বিচারপতি।

প্রসঙ্গত অভিযোগ, ভোটের সময় থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন সওয়াল-জবাব চলাকালীন এ মন্তব্যও করতে দেখা যায় মামলাকারীর আইনজীবীকে। পাল্টা বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় জানতে চান, -”আমরা কী করে জানব যে ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে?” উত্তরে মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ”আমাদের কাছে সব তথ্য আছে।’

এরপরই ফের রাজ্যকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, ‘কোন পদ্ধতিতে এটা আটকানো সম্ভব সেটা আমাদের জানান। এমন একটা পদ্ধতির কথা জানান, যাতে মানুষ সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের করতে পারে। স্থানীয় থানায় না গিয়েও মানুষ কিভাবে এফআইআর দায়ের করতে পারবে সেটা জানান। আমরা চাই না, যে ব্যক্তি একবার আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি থানায় গিয়ে আরও হেনস্থার মুখে পড়েন’। এরপর একজন ব্যক্তিও যদি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের শিকার হন, তাহলে তিনি যাতে এফআইআর দায়ের করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ এই মামলার শুনানি পর্বে বলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।

বিচারপতির মন্তব্যের পরেই রাজ্য জানায়, ‘প্রত্যেক থানা, পুলিশ সুপার, ডিজি এবং আইজি-র নিজস্ব ই-মেল আইডি আছে। কেউ থানায় না গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন।’ এরপরই ১০ মিনিটের মধ্যে রাজ্যকে ডিজির ই-মেল আইডি জানানোর নির্দেশ আদালতের। ঠিক ১০ মিনিট পরে রাজ্যের ডিজির ই-মেইল আইডি দিয়ে দেন রাজ্যের আইনজীবীরা।

এদিকে এরপরই আবার মাঠে নামতে দেখা যায় কেন্দ্রকে। ‘রাজ্য যদি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সহযোগিতা না করে, তাহলে আমরা তথ্য পাব কী করে?’ সেই প্রশ্ন তোলা হয় কেন্দ্রের তরফে। ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে,’হিংসা আটকাতে, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে যৌথভাবে কাজ করতে হবে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে’। পুলিশ কোনওভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীও হস্তক্ষেপ করতে পারবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ।