বাসুদেব ধর, ঢাকা, ৭ আগস্ট: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা (শেখ হাসিনার পদত্যাগ)
দাবিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলা সংঘাতের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে গত সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপরে ওইদিন গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ মানুষ, নির্বিচারে লুটপাট চালায়। ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত যে বাসভবনে ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ গড়ে তোলা হয়েছিল, তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সারা দেশের থানা ও সরকারি স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। দেশের সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর হাজার হাজার ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক হামলা শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি জেলা থেকে হামলার খবর এসেছে। বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চলছে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। মন্দিরে হামলা হচ্ছে, প্রতিমা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। মহিলারা নিগৃহীত হচ্ছেন। কয়েকজন নিহত হওয়ার খবরও এসেছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্মঘট করে বসেছেন তাদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে। সেনাবাহিনী প্রধান, ছাত্র সমাজ, বিএনপি ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও হামলা চলছে। রাজধানীতে গতরাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর এখনো মন্ত্রিসভা নেই। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হলেও তিনি সরকার প্রধান নন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যত দেশে সরকার আছে তা বলা যাবে না।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় ৫৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়নি। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে পুরো সরকার গঠন ও এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। ড. ইউনূস এখনো ফ্রান্সে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ বিকেলে সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ১৫ জনের মতো। দু-এক জন বেশিও হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস সেন্টারের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ বুধবার বলা হয়েছে,ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
আসুন, আমরা আমাদের এ নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র ও দলমতনির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
ঢাকায় হাইকমিশন থেকে অনেক কর্মকর্তাকে দিল্লি নিয়ে গেল ভারত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের জরুরি নয় এমন অনেক কর্মকর্তাকে ভারতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে তাঁরা ঢাকা থেকে দিল্লি চলে গেছেন। সরকারি সূত্রের বরাতে এ খবর জানানো হয়েছে।
খবর অনুযায়ী, এই সময়ে হাইকমিশনে কর্মরত যেসব কর্মীর উপস্থিতি জরুরি নয়, যাঁরা জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত নন, তেমন কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঢাকায় হাইকমিশন ছাড়াও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে ভারতীয় অ্যাসিসট্যান্ট হাইকমিশন রয়েছে। সেখানেও স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সোমবার বিকেলে ধানমন্ডিতে ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। নির্বিচারে লুটপাট হয়েছে। সবগুলো ভাস্কর্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে।