সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই দিল্লিতে রওনা হচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে নাম জড়িয়েছে রাজভবনের। জল্পনা শুরু হয়েছে, সুকান্ত, দিলীপের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন কি হল, যার জন্য দিল্লিতে ছুটছেন রাজ্যপাল? তাহলে কি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন কোনও অশনি সঙ্কেত অপেক্ষা করছে? নাকি সুকান্ত এবং দিলীপের নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পাওয়ার পরেই কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন কোনও সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বৈঠকে যাচ্ছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান? সুকান্ত এবং দিলীপের সাক্ষাতের সঙ্গে রাজ্যপালের দিল্লি গমনকে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চাইছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। তবে রাজভবন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকেই দিল্লিতে যাচ্ছেন রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ছাত্র সংগঠনের উদেশ্যে ভাষণ দেন। সেই সময় আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্ম বিরতি নিয়ে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করেন। যা নিয়ে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু কী এমন বলেছিলেন মমতা? যা নিয়ে রাজ্যপাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি?
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এদিন মেয়ো রোডে দলের ছাত্র সংগঠনের সেই সভায় মমতা বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। আজ বলছি, ওই কথা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন।’ তাছাড়া আর জি করের ঘটনার জেরে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে বিজেপি-কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন,’বাংলায় আগুন জ্বললে অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং দিল্লিও জ্বলবে।’ সেই মন্তব্য নিয়েও যথেষ্ট রাজনৈতিক জলঘোলা হয়। মমতার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। আর এই ঘটনার জেরেই মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানান। এখানেই থেমে থাকেননি সুকান্ত মজুমদার। তিনি দিলীপ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মমতার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ জানান।
এরপর রাজভবন থেকে বেরনোর পর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুকান্ত সাংবাদিকদের সামনে বলেন,’রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে থেকে কেউ এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। ওঁর মন্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাতের কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে। অসম, ওড়িশার মতো রাজ্যের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা সে বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা রাজ্যপালকে জানিয়েছি। ওঁকে জানিয়েছি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সাংবিধানিকভাবে আপনারা যা করার করুন।’ সুকান্ত তাঁর চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্য উদ্ধৃত করে দেন। তিনি চিঠিতে লেখেন,’পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নির্লজ্জ মন্তব্যের প্রতি আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এর মাধ্যমে তিনি বদলার রাজনীতিকেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন।’