আরজিকর-এ নির্যাতিতা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। সূত্রের খবর, মৃতার ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখার পর এমনই দাবি করেছেন একজন চিকিৎসক। নির্যাতিতা ওই মহিলা চিকিৎসকের শরীরে যে একাধিক আঘাত ছিল এবং তার যে গভীরতা ছিল, তা দেখে নিশ্চিত হয়েছেন ওই চিকিৎসকরা।
পাশাপাশি, মৃতার যৌনাঙ্গে যে পরিমাণ বীর্য পাওয়া গিয়েছে, তা কখনই একজন পুরুষের হওয়া সম্ভব নয়। এব্যাপারে ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী যিনি ওই মহিলা চিকিৎসকের ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখেছেন, তিনি ঘটনার দিন ঠিক কী হয়েছিল, তার একটা আভাস দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কলকাতা পুলিশের দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন। ডাক্তার গোস্বামী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মৃত মহিলা চিকিৎসকের দেহে যেসব আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তার গভীরতা এবং যৌনাঙ্গে উদ্ধার হওয়া বীর্যের পরিমাণ কখনই একজন পুরুষের দিকে ইঙ্গিত করে না। এই যৌন হেনস্থার পিছনে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনাই জোরালো হচ্ছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে শুরু করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ঘুমন্ত অবস্থাতেই ওই মহিলা চিকিৎসকের ওপর হামলা করা হয়েছিল। সেজন্য প্রাথমিকভাবে যতটা প্রতিরোধ করা স্বাভাবিক, তা হয়ত করতে পারেননি তিনি। তবে পরবর্তীকালে হামলার মুখে তিনি পালটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। এই ঘটনা একা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতা চিকিৎসকের পেটে, ঠোঁটে, আঙুলে, বাঁ পায়ে ক্ষত রয়েছে। এমনকি চিকিৎসকের চশমার কাচ ভেঙে চোখে ঢুকে গিয়েছিল। তাঁর মুখ খুব জোরে চেপে ধরে রাখা ছিল। তার মাথা দেওয়ালে বা মেঝেতে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে মৃত চিকিৎসকের গালে ক্ষত রয়েছে। তা হামলাকারীর নখের থেকে হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। এদিকে চিকিৎসকের পালটা লড়াইয়ের চিহ্ন নাকি সঞ্জয়য়ের শরীরেও পাওয়া গিয়েছে।
প্রসঙ্গত ঘটনার পর প্রথমে কলকাতা পুলিশের পক্ষে থেকে প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়েছিল, ঘটনায় মাত্র একজন পুরুষ জড়িত রয়েছে। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখার পর চিকিৎসক সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। একই মত ব্যক্ত করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, এদিন আরজিকর-এর সেমিনার হলে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। প্রথমে ঘটনার তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। ঘটনাকে ঘিরে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সময় পুলিশের ডায়েরি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন দুপুর ১টা নাগাদ পুলিশ সেই কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার পর, তা দেখে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। কার্যত এই মামলার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর সেই মামলার তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-কে অর্পণ করে আদালত। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে ৩৫ বছর বয়সী এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে। যদিও সেই সময় পুলিশ দাবি করেছিল, ঘটনায় একজন মাত্র জড়িত আছে। পরে তারা এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নেয়।