নিজস্ব প্রতিনিধি— বাংলার মোট ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম হাইভোল্টেজ কেন্দ্র হলো ব্যারাকপুর৷ এবার এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং মনোনয়ন পত্র জমা দিতে এলেন বারাসাতে, জেলাশাসকের দফতরে৷ সপ্তাহের শুরুতেই নিজ বাসভবন জগদ্দলের মজদুর ভবন থেকে বেরিয়ে নিকটবর্তী মন্দিরে পুজো দেন৷ পুজো শেষে হুডখোলা গাড়িতে চেপে জনসংযোগের মাধ্যমে বারাসাত জেলাশাসকের অফিসের দিকে রওনা দেন অর্জুন৷ নিজ অবস্থান নিয়ে গর্বিত অর্জুন সিং৷ এর প্রমাণ মিলেছে তাঁর কণ্ঠেই৷ মনোনয়ন দাখিল করার আগে বিজেপি প্রার্থী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘ব্যারাকপুর বিজেপির ছিল, ব্যারাকপুর বিজেপির থাকবে৷’
যাত্রার শুরুটা সুন্দর ভাবে হলেও পথে অর্জুন সিংহের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাধে৷ নির্দিষ্ট পথে যাচ্ছিলেন না অর্জুন, এমনটাই দাবি পুলিশের৷ যদিও শেষ পর্যন্ত বচসার জেরে গাডি় থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন অর্জুন৷ এই প্রসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জেনে শুনে পুলিশ প্রশাসন এ কাজ করেছে৷ এটি নির্বাচন কমিশনকে জানাবো৷’ মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এবং পরে রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ শানান অর্জুন সিং৷ মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘দেব-দেবীর আশীর্বাদ নিয়েই মনোনয়ন দাখিল করতে যাচ্ছি৷’ দেব-দেবীর কাছে ‘তৃণমূল নামক অসুরের শক্তিনাশের’ প্রার্থনা করেন তিনি৷ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘তৃণমূলের কিছু লোক অসুর হয়ে উঠেছে৷ তাঁরা মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ তাঁরা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ ব্যারাকপুরে যে অসুর শক্তি তৈরী হয়েছে যারা মানুষের ওপর নানা ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিনাশ হবেই৷’ মনোনয়ন জমা দিয়ে বেড়িয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব অর্জুন৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে আর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে দুষ্কৃতীদের হাতে৷ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমনই মন্তব্য অর্জুনের৷ তাঁর আরও সংযোজন, ‘বাংলা আসলে বোমার স্তূপের উপর দাঁডি়য়ে রয়েছে৷ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শেখ শাহজাহানের মতো গুন্ডা, ডাকাত, চোর ও দুষ্কৃতীদের বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে৷’
‘ব্যারাকপুরকে বারবার উত্তপ্ত তৃণমূল করে, পুলিশ করে৷ তৃণমূলকে ঠান্ডা করলেই ব্যারাকপুর ঠান্ডা হয়ে যাবে’, মন্তব্য অর্জুনের৷ ব্যারাকপুর মেট্রো রেলের পরিকল্পনা শেষ, কিন্ত্ত তা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত হচ্ছে না৷ এক্ষেত্রেও শাসক দলকেই দোষারোপ অর্জুনের৷ তাঁর ভাষায়, ‘দু বছর ধরে কাজটা আটকে রয়েছে৷ এরা (তৃণমূল) না টাকা নিচ্ছে, না জলের লাইনটা সরাচ্ছে! যার ফলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না৷’ এদিন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন অর্জুন৷ আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন তা উপেক্ষা করে পার্থ ভৌমিক প্রত্যেক পৌরসভাগুলিতে পার্টি মিটিং করছেন, যা নির্বাচন কমিশনের নিয়মাবলীর বিরোধী, এমনই মন্তব্য করেন অর্জুন সিং৷
এদিন বিপুল সংখ্যক মানুষের জনসমর্থন নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান অর্জুন সিং৷ সেই উদ্দেশ্যে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রাখা হয়েছিল জেলাশাসকের দফতর৷ বলাইবাহুল্য একুশের বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকেই বিজেপির পাখির চোখ ছিল লোকসভা ভোট৷ আর এবার সেই বহুপ্রতীক্ষিত লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে৷ ২০শে মে ভোট রয়েছে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে৷ এই কেন্দ্রটি বারংবার উত্তেজিত হয়ে উঠেছে পূর্বেও৷ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রটি অর্জুনের গড় বলেই পরিচিত ছিল৷ কিন্ত্ত এবার তাঁকে টিকিট দেয়নি শাসকদল৷ লোকসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে আক্ষেপের সুরে অর্জুন বলেছিলেন, ‘তৃণমূলে ফেরাটা ভুল হয়েছে৷’ বহু জলঘোলার তিনি ফেরেন গেরুয়া শিবিরেই৷ আর এরপরেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর৷ যে টিকিট তিনি পাননি শাসকদলে থেকে, সেই টিকিট পেয়েছেন বিজেপিতে গিয়ে৷ তাই পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক লড়াইয়ে যে টান টান উত্তেজনা থাকবেই, তা বলাই যায়৷