মোল্লা জসিমউদ্দিন: কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এসএসসি মামলায় যখন প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে৷ সেখানে গত সপ্তাহে এবং চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে দফায় দফায় তিন হাজারের কাছাকাছি নিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের হস্তক্ষেপে ২৬ বছর পর আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের জট কাটল৷ সিঙ্গল বেঞ্চ জানিয়েছে ‘৪০৯ জন কর্মী সুপারভাইজার পদে নিয়োগ নিয়োগ করে থমকে গেলে চলবে না৷ মোট ১৭২৯ জনকে নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে’৷ পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯ সালে৷ ৩৪৫৮টি আইসিডিএস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে নির্দেশনামায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে৷ অভিযোগ, রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের জন্য শুধুমাত্র ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩০৩৬ শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে৷ রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে দুশোর বেশি অঙ্গনওয়ারি কর্মী তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন ৫০ শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিতে হবে৷ কিন্ত্ত রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে যায় বলে অভিযোগ৷ অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের প্রমোশনাল সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ ১১৫২ জনের একটি মেধাতালিকাও প্রকাশ করা হয়৷ যারা পরবর্তীতে ভাইভাতে বসতে পারবে৷ অভিযোগ, প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সরাসরি চালু রাখে রাজ্য৷ তাই মেধা তালিকাভুক্ত ২০০ অঙ্গনওয়ারির কর্মী ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে৷ তবে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ৷
মামলাকারীদের একাংশের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে৷ কিন্ত্ত হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য তা না মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে৷ যা সম্পূর্ণ বেআইনি৷ যাতে ৫০ শতাংশ সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করা হয়’, সেই মোতাবেক নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালত দাবি জানান আশীষ বাবু৷ এদিন এই মামলার শুনানির পর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন৷ ‘যেহেতু বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই, তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসি-কে ৫০ শতাংশ সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে৷ ৩৪৫৮ শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯ জনকে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ ১২ এপ্রিল যে ৪০৯ জনের প্রমোশনাল পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে, তার নিয়োগ সরকার চালিয়ে যেতে পারবে৷ বাকি শূন্যপদে ১১৫২ জনের মেধাতালিকা থেকেই নিয়োগ করতে পারবে’৷ যেহেতু এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন, তাই রাজ্য সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা৷
আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের জট কাটল ২৬ বছর পর৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এবার চাকরি পেতে চলেছেন ১৭২৯ জন চাকরিপ্রার্থী৷ ‘৪০৯ জন কর্মী সুপারভাইজার পদে নিয়োগ করলেই শুধু হবে না৷ মোট ১,৭২৯ জনকে নিয়োগ করতে হবে’৷ মঙ্গলবার এই মামলার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট এর সিঙ্গল বেঞ্চ৷ মামলাকারীর দাবি, আইসিডিস সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে৷ তারপর আর কেউ এই পদে নিয়োগ পাননি৷ ২০১৯ সালে ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল৷ সেই সময়ে ৩,৪৫৮টি আইসিডিস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ কেন্দ্র জানিয়েছিল, মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের জন্য ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩, ০৩৬ শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তারা৷ এই নিয়োগের বিরোধিতা করেই দু’শ জন অঙ্গনওয়ারির কর্মী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ তাদের এও অভিযোগ, বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৫০ শতাংশ শূন্যপদে পদোন্নতির ভিত্তিতেই অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের থেকেই নিতে হবে৷ কিন্ত্ত রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করেছে৷ সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হওয়ার পর ১,১৫২ জনের একটি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত অভিযোগ, প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সরাসরি চালু করে দেওয়া হয়৷ তাই মেধা তালিকাভুক্ত ২০০ অঙ্গনওয়ারির কর্মীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ মামলাটি শুনানি হলেও সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ৷ আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে৷