নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: হকার সমস্যায় কড়াকড়ি হয়েছে রাজ্য সরকার। দরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই মতো, শহর কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী বহু অঞ্চলেই হকার সমস্যা খতিয়ে দেখা হয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেলো না বারাসত শহরও। বৃহস্পতিবার বারাসত পুলিশ এবং মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের ব্রিজের নিচের ফুটপাথ মার্কিং করে দিয়েছিল বারাসত পুরসভা। বারাসতের কলোনী মোড় থেকে ১২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত ব্রিজের নিচে ১৬ ফুট রাস্তা মানুষের পথচলার জন্য মার্কিং করা হয়েছিল এদিন। এবার উচ্ছেদ করা হকারদের বসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করছে বারাসত পুরসভাই। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, উচ্ছেদ করা হকারদের নিজস্ব ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পরবর্তীতে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও একই কথা বলেছেন। তাঁর ভাষাতেও, “সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা হবে না।” এবার সেই নির্দেশ পালনের পথেই হাঁটছে বারাসত পুরসভা। এই সকল কার্য সম্পাদিত হয়েছে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের চতুর্থবারের তৃণমূল সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের তৎপরতায় এবং পরামর্শে।
উল্লেখ্য, বারাসত শহরের হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে উড়ালপুল ব্রিজের নিচে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তাটাই হারিয়ে গিয়েছে হকারদের ব্যবসার দাপটে। ফুটপাত দখল করে দিনরাত চলে ব্যবসা। হকারদের পসরায় ব্রিজের নিচের ফুটপাথ এতটাই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল থেকে অ্যাম্বুলেন্স কোনোটাই ঢুকতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই বারাসতের ব্রিজের নিচে জবরদখল মুক্ত করতে আরও নড়েচড়ে বসে বারাসত পুরসভা। তারপরই নেওয়া হয়েছিল ফুটপাথ মার্কিং এর উদ্যোগ। বারাসত শহরের কে এন সি রোড থেকে কে পি বসু রোড, চাপাডালি মোড় সহ জেলা পরিষদের সামনে হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এসবের থেকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল বারাসত ১২ নম্বর রেলগেটের ব্রিজের নিচের অংশের সরকারি রাস্তা দখল করে হকারদের রমরমা ব্যবসা। কি নেই তাঁদের পসরায়? সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র বিক্রীত হয় এই হকারদের কাছে। দু’শো জনেরও বেশি হকার এইখানে পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসা করেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই, জনসাধারণের যাতায়াতের পথ অবরুদ্ধ হয়েছিল। ফি – বছর পূজো এবং চৈত্র সেলের সময় ব্রিজের নিচের অংশ দিয়ে হাঁটাটাই দায় হয়ে পড়েছিল শহরের বাসিন্দাদের কাছে। হকারদের দাপটে ফুটপাথটাই হারিয়ে গিয়েছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই সমস্যারই সমাধান করে দিলেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়। যদিও, হকারদের বসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও বাতলে দেওয়া হবে পুরসভার তরফ থেকে। সুতরাং, হকারদের ব্যবসায় যে ভাটা পড়বে না বা হকাররা বেকার হবেন না, তা বলাই বাহুল্য।
এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুরপ্রধান এবং পৌরপ্রশাসনের কাছে আবেদন, মানুষের পথ চলার অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের হকার ভাইয়েরা যেভাবে অবিন্যস্ত ভাবে বসে ব্যবসা করতেন, সেখান থেকে তাঁদের সুবিন্যস্ত ভাবে বসার জায়গা করে দিয়ে জনসাধারণের পথ চলার অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বারাসতের কলোনী মোড় থেকে ১২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত ব্রিজের নিচের ১৬ ফুট রাস্তা মানুষের পথচলার জন্য মার্কিং করা হয়েছে। এই মার্কিংয়ের বাইরে কোন হকার বসতে পারবেন না। তাঁদের সুবিন্যস্ত ভাবে ব্রিজের নিচে নির্দিষ্ট পরিসরে বসে ব্যবসা করতে হবে। তাছাড়াও তাঁদের সুবিন্যস্ত ভাবে বসার সুযোগ করে দেবো আমরা।”
বারাসত পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা দেবব্রত পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, “হকার ভাইদের অবিন্যস্ত ভাবে বসায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা বারাসতের দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল। সুষ্ঠভাবে পথ চলা জনসাধারণের মৌলিক অধিকার। এই সমস্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, করোনা অতিমারীর সময় অ্যাম্বুলেন্স এই চত্বরে প্রবেশ করতে না পারায় কয়েকজন রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়। পাশাপাশি বারাসত চত্বরে বেআইনি টোটোর সংখ্যাও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই জোড়া সমস্যার কথা ব্যক্তিগতভাবে আমি বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় এবং সাংসদকেও জানিয়েছিলাম। তাঁরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং সাংসদের পরামর্শে সেই সমস্যারই সমাধান করলো বারাসত পুরসভা। আগামী সাতদিনের মধ্যে উচ্ছেদ হওয়া সকল হকার ভাইদের ওই চত্বরেই সুবিন্যস্ত ভাবে বসার সুবন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে।”
পাশাপাশি, বেআইনি টোটো চিহ্নিত করার বিষয়েও তৎপর হয়েছে বারাসত পুরসভা, জানিয়েছেন দেবব্রত পাল। এদিন অশনি মুখোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (পিডবলুডি) অরুন ভৌমিক, সিআইসি অভিজিৎ নাগ চৌধুরী, সোমেন আচার্য্য। এছাড়াও দেবব্রত পাল, সমীর কুন্ডু সহ বারাসতের পৌরপিতা ও পৌরমাতারাগণ এদিন উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজের নিচের ফুটপাথ দিয়ে সাধারণ মানুষের পথচলার অধিকার ফেরানোয় পুরসভা এবং প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।