মথুরাপুর থেকে শাহকে জবাব
নিজস্ব প্রতিনিধি – গেরুয়া শিবিরের দিকে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া, বঙ্গীয় রাজনীতিতে কোনও নতুন বিষয় নয়৷ এবার অভিষেক সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেই৷ পাশাপাশি আক্রমণ শানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও৷ মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের মাটিতে পা রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেখান থেকেই রাজনৈতিক আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে৷ সেদিনই অর্থাৎ মঙ্গলেই মথুরাপুরের জনসভা থেকে তাঁর পাল্টা জবাব দেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, “আজ অমিত শাহ বাংলায় এসে সভা করে বলেছেন আমার নাকি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে! আমি বলি, আমার কোনও পদ লাগবে না৷ আমি মানুষের কর্মী৷ সাংসদ হয়ে মানুষের কাজ করেছি, যেদিন থাকবো না সেদিনও করবো৷” এরপরই অভিষেক পরপর তিনটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন শাহের দিকে৷ “তিনটে সুযোগ দিচ্ছি৷ করতে পারলে করো, লড়তে পারলে লড়ো, ধরতে পারলে ধরো নয়তো মুখ বন্ধ করে ফ্লাইট ধরে দিল্লি চলে যাও”, মন্তব্য অভিষেকের৷ তাঁর চ্যালেঞ্জগুলি নিম্নরূপ৷
প্রথমত, “বাংলার ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা গায়ের জোরে আটকে রেখেছে বিজেপি৷ ছেড়ে দিন৷ ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে যাবে না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবে৷” দ্বিতীয়ত, “এক মাসের মধ্যে গরিব মানুষের বাড়ির আটকে রাখা টাকা ছেড়ে দিন, রাজনীতি থেকে অবসর নেবো৷” তৃতীয়ত, “ডায়মন্ড হারবারে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় এখনও আসেনি৷ আপনি নিজে এসে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করুন, রাজনীতি ছেড়ে দেবো৷”
এখানেই শেষ নয়, এরপরও ক্রমাগত আক্রমণ করে যান শাহকে৷ ‘জেল খাটা আসামী’ বলে কটাক্ষ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে৷ অভিষেক বলেন, “আপনারা রাজনীতির মধ্যে ‘রাজ’-এ বিশ্বাসী, কিন্ত্ত আমরা নীতিতে৷ তৃণমূল কংগ্রেস নাকি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বানাতে চায়! আদতে আপনি আপনার অন্তরের সুপ্ত বাসনা বলছেন৷ আপনার ছেলেকে বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট বানাতে চান৷ সবাই আপনার মতো নয়, আপনি নিজে কখনও আন্দোলন করেননি৷
আপনার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে৷ আজ ইডি, সিবিআই কাউকে ডাকলে আপনারা তাঁকে চোর বলেন! আপনি নিজে জেল খাটা আসামী৷ আপনাদের কাছে আমাদের নীতি আদর্শের কথা শিখতে হবে না৷” এরপরই আক্রমণের তীর যোগীর দিকে৷ তাঁকে ‘ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, ‘যোগী আদিত্যনাথ দেশের মধ্যে সবচেয়ে ব্যর্থ, সাম্প্রদায়িক মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর আমলে হাথরাস থেকে লখিমপুরের মতো ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্ত্ত ওপর দিকে, ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহর কলকাতা৷ এটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরই বলছে৷’ যোগী এবং শাহের উদ্দেশ্যে অভিষেকের মন্তব্য, ‘এরপর বাংলায় এলে হাতে শ্বেতপত্রটা রাখবেন৷ আমায় এক ঘন্টা সময় দেবেন আমি আপনার মঞ্চে যাবো৷ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে৷’ বিজেপির ‘পরিযায়ী নেতারা’ বাংলায় এসে বাংলাকে অপমানিত করছেন, দাবি অভিষেকের৷ বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলার কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সেনাপতি বলেন, যোগী আদিত্যনাথ বীরভূমকে বলছেন বীরভূমী, বালুরঘাটে এসে অমিত শাহ বলেন বেলুরঘাট, গঙ্গাসাগরের মেলাকে জাতীয় মেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে আবেদন করলেও তা করা হয়নি, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা থেকে বিবেকানন্দকে অপমান, বাংলার মানুষের হকের টাকা বন্ধ করে দেওয়া এসব কারণেই তৃণমূল ‘বাংলা বিরোধী’ তকমা দিয়েছে বিজেপিকে৷
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহারাষ্ট্র থেকে বলেছেন, ওই রাজ্যকে বাংলা হতে দেবেন না৷ এই প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি অভিষেকের আক্রমণ বিজেপিকে৷ অভিষেকের ভাষায়, ‘বাঙালি হতে গেলে, বা কোনও রাজ্যকে বাংলা করতে গেলে আপনাদের নেতৃত্বদের একশো বার জন্ম নিতে হবে৷’ কটাক্ষ বিজেপির ইস্তাহারকেও৷ যারা প্রতিবাদ করছে তাঁদের সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিজেপি, এক দেশ এক নির্বাচনের কথা বলছে এঁরা অর্থাৎ দেশের সংবিধানকে বদলাতে চাইছে বিজেপি, সেই কারণেই চারশো পাড়ের দাবি তুলছে, দাবি যুবরাজের৷ এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছেন সুরাটের কথা, যেখানে লোকসভা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপিই জয়লাভ করছে৷ সভামঞ্চ থেকে রাজ্য বিজেপিকেও আক্রমণ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, ‘বিজেপি ভোট চাইতে আসলে বলবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ করে গেছে, ১০ বছরে বিজেপির রিপোর্ট কার্ড পেশ করতে হবে৷’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘এখানে তো সপ্তম দফায় নির্বাচন, এখনও এক মাস সময় আছে তাই বিজেপি নেতাদের পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না৷ সাত দিন আগে মুখ দেখাতে আসবে৷’ পাশাপাশি এদিন নির্বাচন কমিশনকে ‘বিজেপি নিয়ন্ত্রিত’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ বিধানসভা নির্বাচনে আট দফায়, তারপর লোকসভা নির্বাচনেও সাত দফায় নির্বাচন করে মানুষকে বিব্রত করেছে নির্বাচন কমিশন, দাবি তাঁর৷ কারণ হিসেবে তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘বাবু’দের (বিজেপি নেতৃত্ব) সুবিধা অনুযায়ী ভোট করতে হবে! মথুরাপুর সভামঞ্চকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিপুল জনসমুদ্রের উদ্দেশে বার্তা দেন যুবরাজের, ‘পাঁচ হাজার হলেও এই কেন্দ্রের ব্যবধান বাড়াতে হবে৷’ পাশাপাশি মঙ্গলে মঙ্গলবার্তা অভিষেকের, ডায়মন্ড হারবার মডেল মথুরাপুরেও বাস্তবায়িত হবে৷ এদিন মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারের সমর্থনে জনসভা করেন অভিষেক৷ পাথরপ্রতিমা কলেজ মাঠ জুড়ে সৃষ্টি হওয়া জনস্রোত এবং জনসাধারণের ব্যাপক উচ্ছাস তৃণমূল সেনাপতিকে করেছে আত্মবিশ্বাসী৷