নিজস্ব প্রতিনিধি— চতুর্থ দফায় বাংলার আটটি আসনে নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে সোমবার৷ ১৩ মে দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিক বৈঠকে এই দিনের গুরুত্ব তুলে ধরেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ চন্দ্রিমার ভাষায়, মানুষ চতুর্থ দফায় নিজ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বাংলায় বামেদের অপশাসন, বামেদের প্ররোচিত করা বঙ্গীয় কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির অত্যাচার চলবে না বাংলায়৷ ভোটদানের মাধ্যমে বাংলার মানুষ পুনরায় ২০২৪-এর ১৩ মে-কে ঐতিহাসিক করে তুলেছেন, দাবি চন্দ্রিমার৷ বহরমপুর এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর এই দুই কেন্দ্রেই নির্বাচন ছিল সোমবার৷ বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ এবং বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের উদ্দেশে এদিন চন্দ্রিমা বলেন, “দুই বিখ্যাত ক্রিকেটার এমন ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন যে সমস্ত কিছুর জবাব তাঁরা দিয়ে দিয়েছেন৷ মনে রাখতে হবে ওই দুই কেন্দ্রের মানুষ সমর্থন করেছেন ওই দুই ক্রিকেটারকে৷”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ৪ঠা জুন (ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন) প্রাক্তন সাংসদে পরিণত হচ্ছেন, দাবি চন্দ্রিমার৷ নির্বাচন শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বহরমপুরের কয়েকটি বুথে রিপোলের দাবি করেছেন অধীর৷ সে প্রসঙ্গেও আক্রমণ করে চন্দ্রিমা বলেন, “ওঁনার নামই অধীর৷ সুতরাং এখনই তিনি হারছেন জেনে অধীর হয়ে গিয়েছেন রিপোলের জন্য৷ তিনি কখনই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বলবেন না, কারণ সেখানে তো যোগসাজশ আছে!” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও এদিন তোপ দেগে চন্দ্রিমা বলেন, “তাঁর কথাগুলি প্ররোচনামূলক৷ তিনি একটি পদে বা চেয়ারে বসে কেন প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেন জানি না৷” সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, “স্লোগানটা কি? নারী শক্তির সম্মান নাকি অপমান? ২০০০ টাকা এবং সামান্য কিছু জিনিসের বিনিময়ে মহিলাদের অসম্মান করার জবাব আজ মহিলারা রাস্তায় নেমে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দিয়েছেন৷” সেই সূত্রেই মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গ তোলেন চন্দ্রিমা৷ মহিলা প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা ১২ জন মহিলাকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছি, তার জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজন পরেনি৷ আজ মহিলারাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন সংবিধান যাঁরা বদলে দিতে চায় তাঁদেরকেই বদলে দিতে হবে৷ ”
বনগাঁ সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, এবার ইন্ডিয়া জোট ৩০০ টির অধিক আসন পেয়ে জিতবে কিন্ত্ত বিজেপি ২০০ টি আসনও পাড় করতে পারবে না৷ সেই একই সুর এবার চন্দ্রিমার গলাতেও৷ কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “ভাবছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সভাগুলো মন দিয়ে শুনবো কখন উঁনি বলেন ৪০০ পাড়! কিন্ত্ত সেসব আর হচ্ছে না৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের ফলাফল কি হতে চলেছে৷ দফায় দফায় বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন হয়েছে, বাকি তিনটিতেও তাই হবে৷ আগের বার ১৮টি আসন পেয়েছিলো বিজেপি, এবার ডবল ডিজিটও পাবে না৷ দেখতে থাকুন৷ “নির্বাচনে দিন মন্তেশ্বরে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ৷ পাথর ছুঁড়ে দিলীপের গাড়ির কাচ ভাঙারও অভিযোগ ওঠে৷ এ প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা বলেন, “কাউকে উত্তপ্ত করা হয়েছিল কিনা জানতে হবে৷ তাঁর কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি নির্বাচন কমিশনে জানাবেন৷ উনি পুলিশকে জানাচ্ছেন কেন? পুলিশ তো নির্বাচন কমিশনের অধীনে! নির্বাচন কমিশনেই জানাক৷ আর তাছাড়াও তিনি হারছেন৷ আমাদের ক্রিকেটার প্রার্থী ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন৷” রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র ঋজু দত্ত বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্যে দিলীপ ঘোষ গুন্ডামি করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের জনরোষের মধ্যে পড়েছেন৷ বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ বলেছিলেন, জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে৷ সেই মডেলকেই অনুসরণ করে দিলীপ ঘোষের নিরাপত্তারক্ষীরা গ্রামবাসীদের ওপর চড়াও হয়েছেন৷ তিনি কি বুঝে গেছেন যে তিনি আর সংসদে ফিরতে পারবেন না? হার বুঝেই কি গ্রামবাসীদের ওপর চড়াও হলেন তিনি?”