হাইকোর্টের নির্দেশে ৬ বছর পর স্কুলে যাবেন শিক্ষক, পাবেন বকেয়া বেতন

মোল্লা জসিমউদ্দিন, কলকাতা: বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সাথে মতবিরোধের জের। ৬ বছর টানা স্কুলে ঢোকা বন্ধ সহকারী প্রধান শিক্ষকের। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই শিক্ষক। আর রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত শিক্ষককে স্কুলে যাওয়ার ছাড়পত্র দিল। আদালত সূত্রে প্রকাশ, বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিয়া। ২০১২ সালে স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপরে ২০১৬ সালে ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান। তারপর থেকেই অশান্তি শুরু। সেই অশান্তির জেরে স্কুলে ঢোকাই বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষকের।

অভিযোগ, পরিচালন সমিতির দিকে। সৌমেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ,’ ২০১৬ সাল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়।’ কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেছিলেন বলে তিনি জানান। সহকারী প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ,’ নির্মাণকাজে তিনি বাধা দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় কমিটিতে।

শুধু তাই নয়, থানাতেও প্রভাব খাটানো হয়। তার ফলে ওই শিক্ষককে পুলিশও শাসানি দেয়। স্কুলে ঢুকলে গ্রেফতার করা হবে বলে’। সৌমেন্দ্রনাথবাবু আরও জানান, ‘স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাঁরই প্রভাবে এই পরিণতি হয় তাঁর। দিনের পর দিন স্কুলে এই ধরণের ঘটনার পরে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি’।


তবে শিক্ষা দফতরও কোনওরকম পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ সৌমেন্দ্রনাথবাবুর। ওই শিক্ষকের আরও অভিযোগ,’পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়’। শেষমেশ তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই পদত্যাগপত্রের ভিত্তিতে স্কুল কোনও সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয়, তিনি ফের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন, তাঁকে যেন স্কুলে যোগদান করানো হয়। সোমবার এই মামলায় সৌমেন্দ্রনাথবাবুর আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী হাইকোর্টে জানান, “স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে না। আজ পর্যন্ত তাঁর মক্কেলকে শোকজ, সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। একজন স্কুলের শিক্ষককে কিছু না জানিয়ে তাঁর বেতন বন্ধ করা সম্পূর্ণ বেআইনী। এমনকি স্কুল যেসব অভিযোগ এনেছিল, তারও কোনও প্রমাণ নেই।

তাছাড়া, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তিন বছর অতিক্রান্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এরফলে রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে বছরের পর বছর বসে থাকতে পারে না”। সহকারী প্রধান শিক্ষক এর আইনজীবীর এহেন সওয়ালে রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি আদালতে । এরপর কলকাতা হাইকোর্ট জানায়,- ‘একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বেতন বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন কি? আইন তো অন্য কথা বলছে। আপনারা এইভাবে বসে থাকতে পারেন না।’ অবশেষে বিচারপতি নির্দেশ দেন, -‘সৌমেন্দ্রনাথবাবুকে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে এবং ২০১৭ থেকে সমস্ত বকেয়া সুদ সমেত শিক্ষককে মিটিয়ে দিতে হবে’। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে খুশি ওই শিক্ষক।