ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু হবে চলতি বছরেই
নিজস্ব প্রতিনিধি— চব্বিশের নির্বাচনে ঘাটাল রক্ষায় শাসকদলের তুরুপের তাস ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান৷ বহু বছরের প্রতিক্ষিত এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকে সামনে রেখেই ভোট বৈতরণী পেরতে বদ্ধপরিকর ঘাসফুল শিবির৷ আবাসের পর এবার ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে অভিষেকের নতুন ঘোষণা হলো ঘাটাল থেকেই৷ দেবের সমর্থনে প্রচারে বেড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুধু ঘোষণা নয়, হাতে কলমে শুরু করে দেবে তৃণমূল সরকার৷’’ প্রথমে ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘যদি এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে কোনো সদুত্তর না পাই তাহলে কারোর দয়া দাক্ষিণ্যে আমরা বেঁচে নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই দেবকে পাশে নিয়ে বলেছেন, ঘাটালের মাস্টার প্ল্যান তিনি করে দেবেন৷ আমি বলে যাচ্ছি, এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা ওই প্ল্যানের কাজও শুরু করে দেব৷ আমি কথা দিয়ে গেলাম৷ আর আমি কথা দিলে কথা রাখি৷ বারোশো কোটি, তেরোশো কোটি, পনেরোশো কোটি যাই লাগুক রাজ্য সরকারই তা দেবে৷ ঘাটালের মাটিতে আগামী নির্বাচন ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানকে সামনে রেখেই হবে৷’’ এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ঘাটালের সাংসদ টলিউড তারকা দীপক অধিকারী তথা দেব বারংবার চেষ্টা করেও এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে পারেননি৷ কেন্দ্র পিছপা দিয়েছে৷ কিন্ত্ত এবার রাজ্য সরকারই তা করে দেখাবে৷
‘‘এবার ঘাটাল থেকে ব্যবধান তিন লক্ষ করতে হবে’’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এমনই বার্তা দেন তৃণমূল যুবরাজ৷ পাশাপাশি এদিনের সভা থেকে অভিষেক মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁর পূর্ব প্রতিশ্রুতির কথাও৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যে যে বিধানসভায়, পঞ্চায়েতে বা পুরসভায় আপনারা তৃণমূলের হাত শক্ত করবেন, সেখানে সেখানে ডিসেম্বরে আবাসের টাকার প্রথম কিস্তির অর্থ পৌঁছে যাবে৷’’ অভিষেক বিজেপিকে তাঁর নিজের দেওয়া ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ এর কথা মনে করিয়ে বলেন, ‘‘প্রায় এক মাস হতে চললো বিজেপির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই৷ বিজেপির দাবি, তারা ক্ষমতায় এলে ৩০০০ টাকা লক্ষীর ভান্ডার হিসেবে দেবে৷ তারা সতেরোটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে৷ অন্তত একটি রাজ্যের সকল মহিলাদের দেড় হাজার টাকা দিতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো৷’’
এ প্রসঙ্গেই তৃণমূল সেনাপতি বলেন, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের একশো দিনের কাজের টাকাও দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের৷ ‘‘বিজেপি ভোট চাইতে আসলে দশটি নয়, পাঁচটি নয়, মাত্র দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন৷ এক, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল তা দেয়নি কেন? দুই, এই মেদিনীপুরের বীর সন্তান বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি বিজেপি নেতার নেতৃত্বে মিছিল করে ভাঙা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কেন?’’ সাধারণ মানুষকে বিজেপি নেতৃত্বদের এই দুটি প্রশ্ন করার আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ কেন্দ্রীয় সংস্থা ব্যবহার করেই বাংলার ভোট নিজের দিকে টানছে বিজেপি, দাবি অভিষেকের৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যেদিন দেব বললো দল আমাকে যেখান থেকে লড়তে বলবে সেখান থেকে লড়বো আর তার পরের দিনই দেব কে ইডি ডেকে পাঠালো৷’’
ভূপতিনগর ঘটনা প্রসঙ্গেও ঘাটাল থেকে সরব হয়েছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘২৬ মার্চ এনআইএ -এ আধিকারিকের সাথে দেখা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব আর ২৭ মার্চ থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দলীয় নেতাদের নোটিশ পাঠাতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷’’ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, রবিবার এই ঘটনা প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমান স্বরূপ কিছু নথি পোস্ট করে অভিষেক লেখেন, ‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি বহাল থাকার মধ্যেও এনআইএ-র সঙ্গে সাজশ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বঙ্গ বিজেপি৷ এসব সত্ত্বেও চুপ করে রয়েছে নির্বাচন কমিশন৷’
এই ঘটনায় এনআইএ রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় টু্যইট করে জানায়, তাদের যাবতীয় কার্যাবলী আইনি ভাবেই সংঘটিত হয়েছে৷ তবে এর পাল্টা টু্যইট করেছেন অভিষেকও৷ তিনি এনআইএ -র কাছে জবাব চেয়েছেন, মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চলাকালীন ২৬ শে মার্চ জিতেন্দ্র তিওয়ারি ধনরাম সিং এর বাড়ি গিয়েছিলেন কিনা এবং তাঁর হাতে বাড়িতে প্রবেশের সময় একটি পার্সেল ছিল কিন্ত্ত ৫২ মিনিট পর বেড়িয়ে আসার সময় তাঁর হাত খালি ছিল৷ এই বিষয়টি এনআইএ কে স্পষ্ট করার আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ পাশাপাশি ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিরণকেও আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “ছয় – আট মাস আগে আমার দফতরে এসেছিলো৷ দলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ তিনি অস্বীকার করেন এই বিষয়টি৷ প্রমান হিসেবে তারও সিসিটিভ ফুটেজ আছে৷ আগে খড়্গপুর সামলান তারপর ঘাটাল সামলাবেন৷”
রবিবাসরীয় ঘাটালের পথে পাশাপাশি দেখা গেলো তৃণমূল কংগ্রেসের দুই যুবনেতা দেব-অভিষেক কে৷ রবিবার ঘাটালের রোড-শোতে একই গাডি়তে একসঙ্গেই দেখা গেল তাঁদের৷ তৃণমূল সেনাপতির ও দেবের গাড়িকে কেন্দ্র করে তৈরী হয় জনসমুদ্র৷ এই জনপ্লাবন স্পষ্ট জানান দেয়, ঘাটালের মানুষের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে অভিনেতা দেবের ওপরে৷ রোড শো চলাকালীন বাজতে থাকে তৃণমূলের নতুন থিম সং ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’৷ সাধারণ মানুষের দিকে হাত নাড়িয়ে প্রতিবার্তা দেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক এবং দেব৷