‘ইন্ডিয়া’তে মমতার নির্দেশে সর্বভারতীয় স্তরের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছেন অভিষেক, একাধিক বৈঠকের ইঙ্গিত?

নিজস্ব প্রতিনিধি– দেশব্যাপী বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ভালো ফলাফলের পেছনে রয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। তার পাশাপাশি রয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসও। তবে নির্বাচন শেষে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের তরফ থেকে সর্বভারতীয় মুখ হয়ে উঠছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রতিটি বৈঠকে এর আগে যোগ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবার মমতার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অভিষেক। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সর্বভারতীয় ভূমিকায় এবার সক্রিয় হতে দেখা যাবে অভিষেককে। গত বুধবার থেকে দলের পক্ষ থেকে একাই ইন্ডিয়ার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক। এবার তাঁর এই ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তাহলে পৃথক কোনও সমীকরণ কি তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার রাতে জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাংলোয় ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার গোটা দিনই অভিষেক দফায় দফায় দিল্লি এবং মুম্বই গিয়ে বৈঠক করেন অকংগ্রেসি আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে। প্রথমে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ফুল নিয়ে দিল্লিতে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের বাড়িতে পৌঁছে যান। তাঁর সঙ্গে আলোচনা চলে প্রায় ৪০ মিনিট। এরপর দিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউতে নিজের বাসভবনে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আসেন আম আদমি পার্টির দুই শীর্ষ নেতা সঞ্জয় সিংহ এবং রাঘব চড্ডা। ওইদিন বিকেলেই অভিষেক কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন মুম্বইয়ে। রাতে মাতোশ্রীতে পৌঁছে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। ইন্ডিয়ার বৈঠকের পরও কেন এই পৃথক বৈঠক বা সাক্ষাতের প্রয়োজন পড়ল, সেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও এই প্রশ্নে আমল না দিয়ে তৃণমূল এটাকে ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ’ বলে দাবি করেছে।

প্রসঙ্গত কংগ্রেসের প্রাপ্ত আসন এখন অন্য বিরোধীদের তুলনায় এতটাই বেশি যে, কংগ্রেসকে নেতৃত্বে না রেখে কোনও বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভবই নয়। কিন্তু সংখ্যার বিচারে কংগ্রেসকে অগ্রাহ্য করতে না পারলেও বাংলায় ২৯টি আসনে জয়ী তৃণমূলও কারও ‘দাদাগিরি’ যে মেনে নেবে না, তা স্পষ্ট তৃণমূলেরই এক শীর্ষ নেতার বক্তব্যে। তিনি জানান,”তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র বিরোধী দল, যারা নিজের দমে লড়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আসন নিয়ে এসেছে। কারও মুখাপেক্ষী হয়নি। ফলে অন্য কোনও বিরোধী নেতা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তার হুবহু অনুসরণ করে যাব। বিষয়টি এমন হবে না। তবে এটাও ঠিক, আমরা ইন্ডিয়া মঞ্চের সবাই এক স্বরে কথা বলব।” সুতরাং এর থেকেই স্পষ্ট, একই জোটের মধ্যে থেকে দিল্লিতে আওয়াজ তুললেও ‘জনবিরোধী’ কোনও সিদ্ধান্তে সম্মতি জানাবে না তৃণমূল, মেনে নেবে না কোনও একক দলের ‘দাদাগিরি’।


দলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করেছেন, সিপিএম এবং কংগ্রেসের জোটের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি আসনে বিজেপি জেতার সুযোগ পেয়েছে। ভোটের শতকরা হিসাব তুলে ধরে জহর বলছেন, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ-উত্তর, তমলুক, বিষ্ণুপুর এবং পুরুলিয়ায় কংগ্রেস এবং বাম সম্মিলিতভাবে এতটাই ভোট কেটেছে যে, জয় পাওয়া সহজ হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র। এই প্রশ্নও উঠছে যে, সিপিএম-এর সঙ্গে সম্মুখ সমরের ফলে যেখানে কেরলে আসন হারাতে হচ্ছে কংগ্রেসকে, তাদের সঙ্গে দিল্লিতে বসে এতটা ‘আদিখ্যেতার’ প্রয়োজন কী! সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। কেন্দ্রে সবার হাত একজোটে থাকলেও রাজ্যের চিত্রটা পৃথক। তবে এই জল্পনায় ইতি টেনেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট নিজেই। তাদের বক্তব্য, সরকার গঠন করা নয়, বরং এনডিএ বিরোধী শক্তিশালী জোট হিসেবে কাজ করাই এখন ইন্ডিয়ার মূল লক্ষ্য। তবে রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে এসপি, তথা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অখিলেশের সম্পর্ক এখন মাখনের মতো মসৃণ। এই সুসম্পর্ক রাজ্যের আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত ধরে রাখতে চাইবেন অখিলেশ ও রাহুল। এটাই স্বাভাবিক। প্রিয়ঙ্কা নিজেও এসপি-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ফলাফলের জন্য এবং ইন্ডিয়া জোটকে সফলভাবে কার্যকর করার জন্য। অন্যদিকে অখিলেশও ইন্ডিয়া জোটের ভূমিকাকে তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে। তৃণমূলের তরফ থেকে রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করার জন্য দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নিজেও।

সুতরাং, একদিকে যেমন অভিষেক হয়ে উঠছেন ইন্ডিয়া জোটের এক অন্যতম মুখ, তেমনি অন্যদিকে জোটের অভ্যন্তরে কোনও নির্দিষ্ট একটি দলের ‘দাদাগিরি’ দমনেও আগামী দিনে নেবেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।