দলীয় নেতৃত্বদের ‘নম্র এবং সহানুভূতিশীল’ হওয়ার পরামর্শ অভিষেকের 

বিগত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নিয়ে কিছু তৃণমূল নেতৃত্বদের একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য চাপ বাড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদলের উপর। এই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বদের সংযত থাকার বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যাঁরা ন্যায়বিচারের আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের যে ভাষায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি এবং নেতাদের একাংশ আক্রমণ করতে শুরু করেছেন, এক্স পোস্টে সোমবার তার সমালোচনা করে ‘ফোঁস’ বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি।
তবে কি বলেছেন তিনি? ওই পোস্টে অভিষেক লিখেছেন, “দলীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমি তৃণমূলের সকলকে অনুরোধ করছি চিকিৎসক বা নাগরিক সমাজের উদ্দেশে কটু কথা না বলার জন্য। প্রত্যেকেরই প্রতিবাদ করার এবং নিজের মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।”
এরপরই বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক লিখেছেন, “এটাই পশ্চিমবঙ্গকে অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে আলাদা করেছে। আমরা বুলডোজার মডেল এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের কৌশলের বিরুদ্ধে আন্তরিক ভাবে লড়াই করেছি।” পাশাপাশি আরজি কর কাণ্ডের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, “এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করার এখনই সময়। বাংলাকে অবশ্যই এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়াতে হবে এবং যতক্ষণ না অপরাধীদের শাস্তি হয় এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উভয়ের দ্বারা একটি ধর্ষণ-বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত থামবে না।”
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে সামান্য হলেও ব্যাকফুটে গিয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, অভিনেত্রী তথা সোনারপুরের বিধায়ক লাভলি মৈত্র, অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকার সহ তৃণমূলের অনেকেই আন্দোলনকারী চিকিৎসক এবং নাগরিক সমাজকে আপত্তিকর ভাষার আক্রমণ করেছেন।
যদিও ইতিমধ্যেই নিজ বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং কাঞ্চন মল্লিক। অশোকনগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বর্তমান কাউন্সিলরের স্বামী অতীশ সরকার ‘মা-বোনেদের ছবি বিকৃত করে টাঙিয়ে’ দেওয়ার কথা বলে নিজ ভুলের মাশুল গুনেছেন। অভিষেক সোমবারই দল থেকে এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছেন অতীশকে। এবার এক্স পোস্টে বিশেষ বার্তা দিয়ে দলীয় নেতৃত্বদের বিশেষ পরামর্শ দিলেন তিনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব কর্তৃক বিতর্কিত মন্তব্যই অশনি সংকেত হতে পারে দলের ক্ষেত্রে। এই আবহে ব্যতিক্রমী অবস্থান স্পষ্ট করলেন অভিষেক। ‘সেনাপতি’ সুলভ আচরণ প্রদর্শন করে দলীয় নেতা, কর্মীদের ‘নম্র এবং সহানুভূতিশীল’ হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।