• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

১৪ জন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যার নির্মম বর্ণনা সামনে এল

খুঁজে খুঁজে এনে একে একে ১৪ জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে ১৩জন পুলিশ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার নির্মম বর্ণনা সামনে এল। জানা গিয়েছে, হামলার মুখে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তাতে এতটুকুও নরম হয়নি আন্দোলনকারীরা। শেষমেশ প্রাণে বাঁচতে প্রায় ৪০ জন পুলিশ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। থানার ছাদে, পাশের বাড়িতে, শৌচাগারে লুকিয়ে পড়েন কয়েকজন। সব জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে এনে একে একে ১৪ জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসীরা এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, হামলাকারীরা সকলেই অপরিচিত। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বেলকুচি, শাহাজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত এনায়েতপুর থানা। এই থানার শীর্ষকর্তা শাহিনুর আলম। তিনি গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, রবিবার বেলা সাড়ে ১০টার আচমকা একটি বিক্ষোভ মিছিল এসে থানার মধ্যে পাথর ছুড়তে থাকে। বারণ করা হলে তারা এলাকা থেকে চলেও যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবারও একটি মিছিল এসে থানার মধ্যে পাথর ছুড়তে শুরু করে। বারণ করলেও শোনেনি তারা। বাধ্য হয়ে সেই মিছিলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয় থানার তরফে। এরপরে আবারও ফিরে যায় তারা। তবে দুপুর একটা নাগাদ ফের ততীয় দফায় ফিরে আসে মিছিল, পাথর ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে থানায়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েও কোনও লাভ হয়নি। হাজার চার-পাঁচ লোক মিলে ঘিরে ফেলে থানা।শাহিনুর আলম বলেন, এই অবস্থায় তাঁরা সকলে আত্মসমর্পণ করতে চান। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কোনও কথা না শুনে থানায় ভাঙচুর করে গেটে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যে পালানো ছাড়া উপায় ছিল না। তাঁর কথায়, ‘আমরা ৯ জন পুলিশ ছাদের ওপরে গিয়ে জলের ট্যাংকের নীচে লুকিয়ে পড়ি। প্রায় সন্ধে অবধি দমবন্ধ করে লুকিয়ে বসেছিলাম আমরা। অনেকবার যোগাযোগ করি উপরমহলে, কোনও সাহায্য পৌঁছয়নি। সন্ধেয় সেনার হুইসেল শুনে আমরা নেমে আসি।’ তবে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যাঁরা থানার পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে আশপাশের বাড়িগুলোয় গিয়ে প্রাণ বাঁছানোর চেষ্টা করেছিল, তাদের সেখান থেকে ধরে এনে এনে পিটিয়ে মারতে থাকে হামলাকারীরা।

থানার প্রতিটা ঘরে, আসবাবে, গাড়িতে, বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আশপাশের প্রতিটা বাড়িতে তল্লাশি করে খুঁজে বের করে আনে পুলিশদের। স্থানীয় বাসিন্দা নুরজাহান বেগম জানিয়েছেন, হামলাকারীরা কাঠের লাঠি, লোহার রড দিয়ে সবার চোখের সামনে পিটিয়ে মেরেছে পুলিশদের। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুই করতে পারলাম না। সব পুলিশকে টেনেহিঁচড়ে বের করে, পিটিয়ে মেরে, লাশগুলো আমার বাড়ির পাশে এক জায়গায় জমা করে রাখে ওরা। আমার বাড়িতেও তিনজন পুলিশ এসে আশ্রয় নিয়েছিল, আমি ওদের ইউনিফর্ম বদলে সাধারণ ঘরে পরার জামা পরিয়ে দিই। তন্নতন্ন করে খুঁজে, বুঝতে না পেরে চলে যায় হামলাকারীরা।

এনায়েতপুর গ্রামের আর এক বৃদ্ধ বাবু প্রামাণিকের বাড়ির উঠোনেও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। সেই বর্ণনা দিয়ে বাবু প্রামাণিক বলেন, ‘থানা এলাকায় হামলা, গুলির শব্দ চলে বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত। একসময়ে পাঁচ-ছ’জন পুলিশ থানার পেছন দিয়ে দৌড়ে এসে আমার বাড়ির ভেতরে ঢুকে আশ্রয় চান। তাঁরা দৌড়ে গিয়ে বাড়ির পেছন দিকে থাকা বাথরুমের মধ্যে ঢুকে পড়েন। হামলাকারীরাও পিছু পিছু বাড়ির ভেতরে ঢুকে পুলিশদের খুঁজতে থাকে। শেষে বাখরুম থেকে চোখের সামনে টেনে বার করে, আমার চোখের সামনে পিটিয়ে মারল ওদের।’
রবিবার ভয়াবহ এই হামলার পরে ১৩ জন পুলিশের দেহ উদ্ধার করা হয় এনায়েতপুর থেকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও একজন।