• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

৩৫, ২৫, না ৩০! বাংলায় আসন নিয়ে শাহি বিভ্রান্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি– ভূপতিনগর ঘটনায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ এরই মধ্যে চলতি বছরে প্রথমবার বাংলার রাজনৈতিক পারদ চড়াতে আসলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ বালুরঘাটে দাঁড়িয়েই ভূপতিনগর নিয়ে শাস্তির নিদান দেন শাহ৷ বালুরঘাট এবং মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার, খগেন মুর্মুর সমর্থনে আয়োজিত সভায় বঙ্গবাসীকে আশ্বস্ত করে শাহ বললেন, “সবাইকে (ভূপতিনগর ঘটনার দোষীদের) উল্টো করে ঝুলিয়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি– ভূপতিনগর ঘটনায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ এরই মধ্যে চলতি বছরে প্রথমবার বাংলার রাজনৈতিক পারদ চড়াতে আসলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ বালুরঘাটে দাঁড়িয়েই ভূপতিনগর নিয়ে শাস্তির নিদান দেন শাহ৷ বালুরঘাট এবং মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার, খগেন মুর্মুর সমর্থনে আয়োজিত সভায় বঙ্গবাসীকে আশ্বস্ত করে শাহ বললেন, “সবাইকে (ভূপতিনগর ঘটনার দোষীদের) উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে, আপনারা চিন্তা করবেন না৷”

“একটি পাখিও অবৈধ অনুপ্রবেশ করার সাহস পাবে না”, দাবি শাহের৷ তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ চলতে থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ অসমেও এমন অনুপ্রবেশের সমস্যা ছিল৷ এখন আসামে সীমানা তৈরি হওয়ায় অনুপ্রবেশের কোনও সমস্যা আর নেই৷ বাংলায় বিজেপি ৩০ পার করলেই বাংলা থেকেও এই সমস্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এমনটাই বলেন শাহ৷ এবার ৩৭০ পার করে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবেন, অনুমান শাহের৷ তাঁর ভাষায়, ২০১৪ সালে বাংলার মানুষ বিজেপিকে দুটি সিট দিয়েছিল, ২০১৯ এ তা বেড়ে হয় ১৮টি ফলে নরেন্দ্র মোদি ৩০০ এর বেশি সিটে জিতেছিলেন৷ এবার ১৮ থেকে বাডি়য়ে ৩০টির বেশি সিট করতে হবে এবং বিজেপিকে ৩৭০ পেরোতে সাহায্য করতে হবে৷

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ বিজেপিকে ৩৫টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন৷ তারপর বারাসতের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, “৪২ এ ৪২ চাই৷” লোকসভা ভোটের প্রথম দফা শুরুর ঠিক ৯ দিন আগে বাংলায় প্রথম নির্বাচনী সভা করতে এসে বুধবার বালুরঘাটের বুনিয়াদপুরের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেই টার্গেট আরও কমিয়ে দিয়ে বললেন, “এবারে বিজেপির আসন ১৮ থেকে বাডি়যে ৩০ করতে হবে!”

অসমের উদাহরণ টেনে শাহ বলেন, “অসমে অনুপ্রবেশ খতম করেছে,বাংলায় লোকসভা ভোটে ৩০ আসন পেলে এখানে সীমান্ত টপকে কোনও ‘পরিন্দা’ও ঢুকতে পারবে না৷” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “সারা দেশে বিজেপির ৩৭০টি আসন নিশ্চিত করতে হবে৷ সেজন্য বাংলা থেকে ৩০টি আসনে জিততে হবে৷” তৃণমূলের দাবি, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, বিজেপির এই সম্ভাব্য আসন সংখ্যা ততই কমতে শুরু করবে! যদিও গেরুয়া শিবিরের পাল্টা দাবি, সাংগঠনিক ক্ষমতার ভিত্তিতে ফলাফলের নূ্যনতম সংখ্যাটাই উনি বলেছেন৷

এর আগে সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহ জানিয়েছিলেন, বাংলায় এবারে বিজেপি ২৫টির বেশি আসন পাবে৷ অমিত শাহের কথায়, “গতবারে আমরা বাংলা থেকে ১৮টা আসনে জিতেছিলাম৷ এ বার ২৫টির বেশি আসন পাব৷”

বিজেপি শিবিরের দাবি, শাহ এদিন সেই সংখ্যাটা ৩০-এ নিয়ে গিয়েছেন৷ অর্থাৎ ভোটের আগে সম্ভাব্য জয়ের আসনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের৷

রাজ্যের দারিদ্রতার মূল কারণ হিসেবে শাহ দায়ী করেছেন কমিউনিস্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেসকেই৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলার দই, তাঁতের শাডি়, সিল্ককে প্রসিদ্ধ করতে হলে বাংলার বুকে পদ্ম ফোটাতে হবে৷

“তোষণের রাজনীতির জন্য রাম মন্দির হতে দেয়নি” বালুরঘাটের মঞ্চ থেকে সুর চড়ান অমিত শাহ৷ তিনি বলেন, “৫ বছরের মধ্যেই আমরা রাম মন্দিরের কাজ পুরো শেষ করেছি৷ ৫০০ বছর পর রামলালা নিজের বাডি়তে নিজের জন্মদিন পালন করবেন৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৩৭০ সরানোর জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছেন৷ কংগ্রেস, তৃণমূল এর বিরোধিতা করেছিল৷ মোদিজি ৩৭০ সরিয়েছেন৷”

বালুরঘাট থেকে কংগ্রেসকে কটাক্ষের তীর ছোড়েন অমিত শাহ৷ তিনি বলেন, “কংগ্রেস পার্টির এমন হাল হয়েছে যে ওরা বলছে মুসলিম পার্সোনাল ল থাকা দরকার, ইউসিসি সরে যাওয়া দরকার৷ তাদের ম্যানিফেস্টোয় থাইল্যান্ডের ছবি লাগিয়ে দিয়েছে৷ পুরো দেশের একটাও ছবি তারা পায়নি৷

এর কারণ হল রাহুল গান্ধী বারবার থাইল্যান্ড যায় ছুটি কাটাতে৷ এই দলের দেশের মানুষ এবং দেশের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই৷” পাশাপাশি সিএএ নিয়েও খোলসা করেন শাহ৷ তাঁর ভাষায়, “ভয় না পেয়ে যত শরণার্থী আছেন সকলে আবেদন করুন সিএএ পোর্টালে৷ কারও নাগরিকত্ব চলে যাবে না৷ এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন৷ এটা কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না৷ বিরোধীরা যতই বিরোধ করুক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেনই৷” ভূপতিনগর ঘটনা প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুর চড়িয়ে শাহ বলেন, “একসময় বাংলায় রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনা যেত, এখন বোমা বন্দুকের আওয়াজ পাওয়া যায়৷”

তিনি আরো বলেন, “এই তদন্তভার হাইকোর্ট দিয়েছিল এনআইএ কে৷ আর মুখ্যমন্ত্রী সেই এনআইএ-র নামে এফআইআর করে তাদের থামাতে চাইছে৷ এই ঘটনায় দোষীদের সবাইকে উল্টো করে টাঙিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে, আপনারা চিন্তা করবেন না” বালুরঘাটে দাঁড়িয়েই কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি অমিত শাহের৷ সন্দেশখালি ঘটনা নিয়েও সরব হন অমিত শাহ৷ তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতানোর অর্থ হল সন্দেশখালির মত ঘটনা হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া৷” সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন আগামী ১৯ তারিখ স্নান করে পূজা দিয়ে পদ্ম ফুলে ছাপ দিতে হবে৷ পাশাপাশি শাহের বার্তা, “আপনারা এত জোরে বোতাম টিপবেন যাতে বালুরঘাটে বোতাম টিপলে তার কারেন্ট লাগে কলকাতায়৷”

এদিনের বালুরঘাটের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যের খতিয়ান তুলে শাহ বলেন, ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য সীমা থেকে বের করে এনেছেন মোদী সরকার৷ ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিয়েছেন৷ ১২ কোটি শৌচালয় বানানো হয়েছে৷ ৪ কোটি বাডি় দেওয়া হয়েছে৷ ১০ কোটি মানুষকে উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, ১৪ কোটি পরিবারকে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তিন তালাক সমাপ্ত হয়েছে৷ তাছাড়াও বাংলা বাদে দেশের সকল গরীব মানুষ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পাচ্ছেন৷