নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘উত্তরপ্রদেশে জঙ্গলরাজ চলছে’, যোগীরাজ্যে যৌন নির্যাতনের পর অনগ্রসর সম্প্রদায়ের এক কিশোরীর আত্মহত্যা এবং পুলিশ হেফাজতে দলিত সম্প্রদায়ের এক যুবকের মৃত্যু প্রসঙ্গ তুলে এবার যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে বিঁধলো বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। জোড়া ঘটনায় উত্তাল যোগীরাজ্য। উত্তরপ্রদেশের চিরকূট জেলায় যৌন হেনস্থার শিকার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের এক নাবালিকা। বারংবার থানায় অভিযোগ জানিয়েও, মিলছিল না কোনো সুরাহা। পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ না করায় শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন নাবালিকা। এখানেই শেষ নয়, থানায় অভিযোগ করতে এসে মৃতার বাবা-মাকেও পুলিশি অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়।
অন্যদিকে ওই রাজ্যের ফিরোজাবাদে পুলিশের হেফাজতে এক দলিত যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে ওই দলিতকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পরই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। চিরকূটের ঘটনার নিন্দা করে তৃণমূল নিজ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, “যোগী আদিত্যনাথের জঙ্গলরাজে ধর্ষকেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ অপরাধীদের ছাড় দিচ্ছে। আর বিচার না পেয়ে নির্যাতিতাকে আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। অপরাধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে পুলিশ মৃতার বাবাকেই আটক করেছে। আর এটাই হচ্ছে বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারের অধীনে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও -এর বাস্তব চিত্র!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২৩ জুন সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ বছর ১৬ এর দশম শ্রেণীর পড়ুয়া তথা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ওই নাবালিকা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃতার মা উর্মিলা কুমারী জানান, তাঁর গ্রামেরই দুই ব্যক্তি কর্তৃক বিগত কয়েকমাস ধরেই যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছিলেন তাঁর মেয়ে। মেয়ের মৃত্যুর একদিন আগেও অভিযুক্তরা তাঁর মেয়েকে হুমকি দিয়েছিল। একাধিকবার নিকটবর্তী থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশের চোখে বিষয়টি গুরুত্বহীনই ছিল। নিজের প্রাণ দিয়ে সেই মাসুল গুনতে হল নাবালিকাকে।
উর্মিলার স্পষ্ট অভিযোগ, “পুলিশ যদি আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ করত, তাহলে আমার মেয়ের নিজের জীবন দিতে হত না।” উল্লেখ্য, পুলিশ মৃতা বাবা-মায়ের সাথেও খারাপ আচরণ করে। উর্মিলার আরও অভিযোগ, মেয়ের আত্মহত্যার পর যখন তিনি এবং তার স্বামী থানায় গিয়েছিলেন, তখন পুলিশ তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এমনকি তাদের মারধরও করে। মৃতার বাবা-মায়ের অভিযোগ তো শোনাই হয়না, বরং মৃতার বাবাকেই আটক করে পুলিশ। সম্পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে উর্মিলা বলেন, “আমাদের মেয়ে মারা যাওয়ার পর, আমরা আগের সমস্ত অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সেগুলি একবার পড়েওনি। তারা আমাদের মারধর করে। এমনকি তারা আমার স্বামীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।” এই ঘটনার জেরেই সরগরম যোগীরাজ্যের চিরকূট।
অন্যদিকে, শুধু চিত্রকূটের ঘটনাই নয়, উত্তরপ্রদেশে এক দলিতের মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। পুলিশের হেফাজতে ওই ২৮ বছর বয়সী দলিতকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে দলিতদের উপর অত্যাচার এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন বাইক চুরির অভিযোগে আকাশ নামে ওই দলিত যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন গ্রেফতার হওয়ার তিন দিন পর মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে আকাশের। দুই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির নারী এবং দলিত সুরক্ষা নিয়ে। চিরকূটের ঘটনা প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক অনিল প্রধান দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “বিচার চাইতে গেলেই পুলিশের এই আচরণ এবং মৃতার বাবা-মাকে মারধর করা, এটি নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক!” যোগীরাজ্যে নারী এবং দলিত নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এনসিআরবি সহ একাধিক সংস্থার রিপোর্টও বলে, দলিতের উপর অত্যাচারের ঘটনায় ভারতের মধ্যে ঘটনায় এগিয়ে উত্তরপ্রদেশই। এবার এই নাবালিকা এবং দলিত যুবকের মৃত্যুর ঘটনা যেন ঘুম কেড়েছে উত্তরপ্রদেশের।