মোদির ইলেক্টোরাল বন্ড দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, সাফ জানালেন প্রশান্ত ভূষণ

সুভাষ পাল

ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধোনা করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত ভূষণ৷ এক সময়ে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সহযোদ্ধা প্রশান্ত ভূষণ কেন্দ্রের ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি নিয়ে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন৷ শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, মোদি সরকার দুর্নীতির দায়ে দেশের একের পর এক বিরোধী নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে ভরছে৷ সেই মোদি সরকারের আমলেই ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে৷ অর্থনৈতিক দুর্নীতির জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দেশের বিরোধী দলগুলির তদন্তে আদাজল খেয়ে মাঠে নামলেও, এই বৃহত্তম দুর্নীতি নিয়ে সম্পূর্ণ নীরব থেকেছে৷ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে এই বন্ডের মাধ্যমে৷ যেটা বিভিন্ন কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে ঘুষ হিসেবে দিয়েছে৷ এই বন্ডে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি৷ কারণ এই বিপুল টাকার প্রায় অর্ধেক গেছে বিজেপি-র পকেটে৷

তিনি বলেন, যেসব সংস্থা এই বন্ড কিনেছে, তাদের সরকারি সুবিধা একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে৷ বন্ড বিক্রি করে আদিত্য বিড়লা গ্রূপের ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট পলিসি বদলে দেওয়া হয়৷ ভারতী টেলিকম বিজেপি-কে ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছিল এই বন্ডের মাধ্যমে৷ এর ফলে এই সংস্থাকে নিলাম ছাড়াই স্যাটেলাইট অলটমেন্ট পাইয়ে দেওয়া হয়৷ তিনি আরও বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার বন্ড কিনেছে৷ এরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নানারকমের প্রাণঘাতী ওষুধ তৈরি করে৷ এরা ড্রাগ রেগুলেটরি এক্ট থেকে বাঁচতে কেন্দ্রকে বন্ডের মাধ্যমে ঘুষ দেয়৷ এখন তাদের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে৷ তিনি দাবি করেন, এভাবে প্রায় ৫ লক্ষ কোটির কন্ট্রাক্ট প্রভাবিত হয়েছে৷


দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, যখন এই বন্ড আনা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল, এই বন্ডে বিশেষ একটি নম্বর থাকবে, যা আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ছাড়া ধরা পড়বে না৷ যেহেতু এটা গুপ্ত বন্ড, তাই যদি কেউ বিরোধীদের টাকা দিতে চায়, তা অন্য কেউ জানতে পারবে না৷ কিন্ত্ত এই বন্ড দেওয়ার অধিকারী এসবিআই যেহেতু কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা, সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই সব তথ্য পৌঁছে যায় কেন্দ্রের মোদি সরকারের হাতে৷

এদিনের  বৈঠকে প্রশান্ত ভূষণের সঙ্গে হাজির ছিলেন তাঁর অন্যতম সহযোগী ও সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ, তৃণমূল নেত্রী দোলা সেন, প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত সহ আরও বিশিষ্টজন৷

প্রশান্ত ভূষণের পরে পরেই বক্তৃতা দেন অঞ্জলি ভরদ্বাজ৷ তিনি এই বৈঠকে প্রশান্ত ভূষণের সঙ্গে একই পংক্তিতে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকারের ভূমিকাকে তুলোধোনা করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এই দুর্নীতির রায় না দিলে দেশবাসী জানতেই পারতো না এই সরকারের আমলে এতবড় সংগঠিত দুর্নীতির কথা৷ তবে দুর্ভাগ্যজনক হল আদালতকে এই দুর্নীতির তদন্তে পদক্ষেপ নিতে প্রায় ৬ বছর সময় লেগে গেল৷ অঞ্জলি দেবী এই সাংবাদিক বৈঠকে উল্লেখ করেন, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানিতে জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলিকে যে সব কোম্পানি টাকা দিচ্ছে, তা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দিচ্ছে৷ জনহিতের জন্য এই অর্থ তারা ব্যয় করছে না৷ এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷

তিনি বলেন, এই বন্ড যখন আনা হয়, তখন অরুণ জেটলি বলেছিলেন, এর মাধ্যমে কালো টাকার লেনদেন বন্ধ হবে৷ কিন্ত্ত, কালো টাকা তো বন্ধ হলই না, উপরন্ত্ত দুর্নীতিকে সরকারি পোশাক পরিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হল৷ জাইকাস্টের ওষুধ নিম্নমানের৷ বিহারের রেগুলেটরি অথরিটি সে কথা জানিয়েছিল৷ সেই কোম্পানি ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি-কে টাকা দেয়৷ গুজরাটে এই কোম্পানির ফ্যাক্টরি৷ ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি-কে টাকা দিতেই এই কোম্পানি দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ১৪০ কোটি টাকার বন্ড কেনায় মহারাষ্ট্র সরকার তাদের একটি বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট পাইয়ে দিয়েছে৷

অঞ্জলি দেবী আরও উল্লেখ করেন, ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে এই বিপুল টাকা যে যে কোম্পানি দিয়েছে, এবং যেসব রাজনৈতিক দল তা গ্রহণ করেছে, তার বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনকে পেশ করতে হবে৷ কমিশন সেই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করবে সাধারণ মানুষের জ্ঞাতার্থে৷ কিন্ত্ত রায়দানের এতদিন পরেও এই টাকার প্রায় ২৫ শতাংশ তথ্য এখনও জনসমক্ষে আসেনি৷ অর্থাৎ ২০১৮-এর আগে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বন্ডের তথ্য এখনও পর্যন্ত সামনে আনেনি এসবিআই৷ যেসব সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলা চলছিল, সেইসব সংস্থা বন্ড কেনার পর তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ তিনি বলেন, টাকার অঙ্ক যাই হোক না কেন, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক দুর্নীতি৷