নিজস্ব প্রতিনিধি– ডায়মন্ড হারবারে জয়ের রণকৌশল নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যে রকম ফলাফল ছিল, ঠিক সেই রকমই ফলাফল বজায় রাখতে হবে লোকসভাতেও৷ জেলাওয়াডি় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে করা বৈঠক থেকে ঠিক এমনই নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মাফিক আমতলা কার্যালয়ে বিষ্ণুপুর বিধানসভা এবং সাতগাছিয়া বিধানসভার নেতা কর্মীদের সাথে বৈঠকে বসেন অভিষেক৷
এই বৈঠক থেকেই অভিষেক স্পষ্ট জানান, “বিধানসভা ভোটে বিষ্ণুপুর বিধানসভা আসন ভাল ব্যবধানে ছিল৷ সেই ভাল রেজাল্ট লোকসভাতেও বজায় রাখতে হবে৷ তবে প্রচারে খামতি রাখা যাবে না৷ সব গ্রামে, ওয়ার্ডে প্রচারে যেতেই হবে৷ সকলের সাথে কথা বলতে হবে৷” কোন উপায়ে জনসাধারণের কাছে দলীয় কর্মীরা নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেবেন তার উপদেশও দেন যুবরাজ৷ এ প্রসঙ্গে বৈঠক থেকে তিনি বলেন, প্রতি পরিবারের কাছে গিয়ে বলতে হবে তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে এবং থাকবে৷ নির্বাচন মিটে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই আবাসের টাকার ব্যবস্থা করবে রাজ্যই৷ বরং বিজেপি নিজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে৷
বাংলায় ১০০ দিনের কাজের এবং আবাসের টাকা আটকে রেখেছি বিজেপি, এটিই বোঝাতে হবে মানুষকে৷
তৃণমূল যুবরাজ নিজ ঘর ডায়মন্ড হারবারে বিরোধীদের জন্য এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন৷ তাই ভোটযুদ্ধের ময়দানে সেনা সাজাতে নেমে পড়েছেন তিনি৷ দলীয় কর্মীদের নিয়ে শুরু করেছেন ম্যারাথন বৈঠক৷ আজ অর্থাৎ শুক্রবার এই বৈঠকের তৃতীয় এবং সর্বশেষ দিন৷ বৈঠকের প্রথম দিনেই যথেষ্ট কড়া ভাষায় দলীয় কর্মীদের নিজেদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন, জবাব চেয়েছিলেন একাধিক প্রশ্নের৷
পাশাপাশি সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে৷ ৪ লক্ষ টার্গেটে পৌঁছতে কেবল সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শোনা নয় পাশাপাশি তাদের মন পড়ার ওপরও জোর দিচ্ছেন তৃণমূল সেনাপতি৷ পুরোনো ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবে সাজিয়েছেন ‘অভিষেক স্ট্রাটেজি’৷ তাই বারংবার দলীয় কর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তার সমস্যা সমাধানের জন্য উপদেশ দিচ্ছেন অভিষেক৷ নির্বাচন শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে৷ হাতে সময় থাকলেও বিলম্ব করতে রাজি নন অভিষেক৷ যে সকল কেন্দ্রে বিরোধীদের দাগ কাটার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুবরাজ৷ তাঁর ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ কে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছেন তিনি, উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেই জনসাধারণকে বোঝাবেন দলীয় কর্মীরা৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এখনও বিরোধী শূণ্য ডায়মন্ড হারবার৷ কোন কারণে বিরোধীরা এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারছেন না, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা নির্বাচন৷ সেই মতো রাজনৈতিক ভীত মজবুত করতে ব্যস্ত প্রত্যেক রাজনৈতিক দল৷ এর মধ্যেই গেরুয়া শিবিরকে এক্স-বাণে বিদ্ধ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এক্সবার্তার মাধ্যমে অভিষেক তাঁর ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ এর কথা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিজেপিকে৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিষেক এক্সবার্তায় লিখেছেন, ৩৫০ ঘন্টা অর্থাৎ প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো, বিজেপি আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের উপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে লজ্জা পাচ্ছে৷ বাংলা এর অপেক্ষায় রয়েছে৷ বাংলা আর কিছু চায় না, শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা প্রত্যাশা করে৷
সম্প্রতি রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি দাবি করেছিলেন, বাংলায় আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের টাকা পাঠানো হয়েছে৷ সেই টাকা নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতি করেছে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতেই অভিষেক রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানান গেরুয়া শিবিরকে৷ নির্বাচনী প্রচারে বেড়িয়ে ময়নাগুড়ির সভা থেকে এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ আদেও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্র থেকে আবাস ও ১০০ দিনের কাজের টাকা বাংলায় এসেছে কিনা তার প্রমান দিতে বলেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করে৷ কিন্ত্ত এই চ্যালেঞ্জ এর ৩৫০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো সাড়া নেই বিজেপির৷
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবিতে গত বছর রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সঙ্গে করে জব কার্ড হোল্ডারদেরও নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্ত্ত সেখানে কৃষিভবন থেকে অভিষেকদের টেনে হিঁচডে় বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ তারপর রাজ্যে ফিরে এসে রাজভবন সংলগ্ন এলাকায় ধর্নায় বসেন অভিষেক৷ পরে এই বিষয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি৷ কিন্ত্ত সুরাহা কিছুই হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার একশ দিনের কাজের বকেয়া মেটাতে শুরু করেন৷ এদিকে, চব্বিশের নির্বাচনের জন্য প্রচারে নেমে তৃণমূল যুবরাজ নিজেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন৷ বাংলার মানুষের আবাসের টাকা রাজ্য সরকারই দেবে, কেন্দ্রের কাছে হাত পাততে হবে না বাংলার মানুষকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক৷ চলতি বছরের ডিসেম্বরে আবাসের আবেদনকারীরা আবাসের টাকা পাবেন, এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷