নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার রাতেও শিয়ালদহ এলাকায় এনআরএস হাসপাতালের সামনে গণপিটুনির শিকার এক যুবক। হাতে আইন না তুলে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিকেলেই নবান্ন থেকে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা। তারপরও খোদ কলকাতায় যেভাবে একাংশ মানুষ হাতে আইন তুলে নিয়েছেন তাতে উদ্বিগ্ন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে জেলাতেও।পরিস্থিতির মোকাবিলায় এবার নবান্ন থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ পৌঁছল জেলায় জেলায়। প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার, রেল পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার-সহ পদস্থ আধিকারিকদের উদ্দেশে বুধবার এডিজি আইন শৃঙ্খলার তরফে এক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তাতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্য জুড়ে গণপিটুনির ঘটনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইদানিং তা আরও বেড়েছে। হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। প্রতিটি থানার পুলিশকে এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশকেও আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে বা এই জাতীয় ঘটনার সম্ভাবনার কথা শুনলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
আরও বেশি করে সচেতনতা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় ক্লাবগুলিকে এ বিষয়ে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও বাড়তি নজরদারির কথা বলা হয়েছে।
পুলিশের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, বেশ কিছুক্ষেত্রে ভুয়ো খবরও ছড়ানো হচ্ছে। কারা এই ধরনের ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও চক্র পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এবিষয়েও নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এর নেপথ্যে আন্ত-রাজ্য চক্রের যোগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে অভিযানের কথাও বলা হয়েছে। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে বিশেষত, নারী ও শিশুদের প্রতিও বাড়তি নজরদারির কথা বলা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ঘটে চলা একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও। সূত্রের খবর, এবিষয়ে মঙ্গলবার নবান্নে পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পুলিশ প্রশা্সনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এরপরই শীর্ষ আধিকারিকদের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়।
সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা বলেন, “জনগণকে বলব, হাতে আইন তুলে নেবেন না। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে পুলিশকে জানান। কিন্তু তা না করে হাতে আইন তুলে নিলে আমরা বরদাস্ত করব না।”
গণপিটুনির ঘটনায় মৃতদের পরিবারের একজন সদস্যকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি এবং পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করে রাজ্য।
হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ না হওয়ায় এবার কড়া হাতে মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ।