‘ফাঁকা মাঠে’ খেলতে নামছেন অভিষেক
প্রশান্ত দাস: যুদ্ধ জয়ের জন্য সেনাপতি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা রাজা৷ অভিষেক স্ট্র্যাটেজিই তার প্রমাণ৷ বাংলার ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ৷ বিগত বছরগুলিতে এই লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের হাতেই ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় এবারও ভরসা করেছেন অভিষেকের ওপরই, ফের ডায়মন্ড হারবারের গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছেন অভিষেকের হাতে৷ তবে এখনো পর্যন্ত এই কেন্দ্র বিরোধীশূন্য৷ রাজ্যের বিরোধী দলগুলির কেউ এখনও ডায়মন্ড হারবারে নিজ প্রার্থী ঘোষণা করেনি৷ তাহলে কি তৃণমূল সেনাপতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন বিরোধীরা?
২০১৪ সাল থেকে কলকাতার লাগোয়া এই কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন অভিষেক৷ ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় সত্তর হাজারের মতো৷ কিন্ত্ত ২০১৯-এ তা বৃদ্ধি পেয়ে তিন লক্ষ ছাডি়য়ে যায়৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে৷ তিনি দু’ বারের সাংসদ ডায়মন্ড হারবার থেকে৷ বিশেষত ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের এই দুর্দান্ত ফল করার কারণ কি? বারংবার এখানের মানুষ ভরসা করে এসেছেন অভিষেকের ওপর, অভিষেক কর্তৃক গৃহীত ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ প্রজেক্টের ওপর৷ গত দশ বছরে শুধুমাত্র এই কেন্দ্রেই ২৮০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এর মধ্যে অভিষেকের সাংসদ তহবিল থেকে শুরু করে এলাকার বিধায়কদের বিধায়ক তহবিল, জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্প ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পও রয়েছে৷
আগামী দশ বছরে আরও বড় টার্গেট অভিষেকের৷ ডায়মন্ড হারবারে ৫৭০০ কোটি নয়, ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ হবে এমনটাই বলেছিলেন যুবরাজ৷ তাঁর ব্যাখ্যায় প্রতি ঘণ্টায় কাজ হবে দশ লাখ টাকার৷ প্রতি মাসে কাজ হবে ১০০ কোটি টাকার এবং প্রতি বছরে কাজ হবে ১ হাজার কোটি টাকার৷ এটিই তাঁর ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’৷
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে ডায়মন্ড হারবার মডেল ব্যাপকভাবে চর্চিত হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে, উন্নয়নের জোয়ার এসেছে এই কেন্দ্রে৷ তাই জন্যই কি চব্বিশের নির্বাচনে বিরোধীরা পিছপা দিচ্ছেন এই কেন্দ্র থেকে? সম্প্রতি আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলে একাধিক বার হুঙ্কার দিলেও শেষ পর্যন্ত আদৌ ময়দানে নামবেন কি না, তার কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও দাবি করেছিলেন, তিনি অভিষেকের কেন্দ্রে তাঁকে হারাতে সক্ষম৷ কিন্ত্ত বাস্তব চিত্র অন্যরকম৷ বিজেপি-র পরিচিত দাপুটে নেতারা কেউই ওই কেন্দ্রে লড়াইয়ে আগ্রহী নন৷ অভিজ্ঞ নেত্রী সোনালি গুহর নাম নিয়ে বিজেপির অন্দরে আলোচনা হলেও জল্পনা থেকে যাচ্ছে৷ তিনি ছাড়াও বিজেপির যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং অভিজিৎ দাসের নাম বঙ্গ বিজেপির তরফে প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ তবে কার নাম সিলমোহর পড়বে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়৷ বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতায় যদি ডায়মন্ড হারবারে সিপিএমের প্রার্থী থাকে, তা হলে এই আসনে ছাত্রনেতা প্রতিকউর রহমানকে প্রার্থী করার কথা ভেবে রেখেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট৷ সুতরাং বিরোধীদের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার নিয়ে যে একটি সুপ্ত ভীতি রয়েছে তা স্পষ্ট৷ বাস্তবে কোনো হেভিওয়েট নেতা বা নেত্রীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে৷ দরজায় কড়া নাড়ছে চব্বিশের নির্বাচন, এখনও এই কেন্দ্রে কে হবেন প্রার্থী তা নিয়ে চলছে বিরোধীদের মধ্যে টানাপোড়েন৷
অভিষেক নিজ কেন্দ্রকে ঢেলে সাজিয়েছেন৷ মানুষের অভাব অভিযোগ মিটিয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে ডায়মন্ড হারবারের মানুষ অভিষেকের বিকল্প হিসেবে কাউকে চান না৷ গত লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক জয়ী হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে৷ সম্প্রতি বসিরহাটের জনগর্জন সভা থেকে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন ৪ লক্ষ ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে জিতবেন৷ আজ অর্থাৎ বুধবার থেকে আগামী তিনদিন ২৭, ২৮ এবং ২৯ তারিখ ডায়মন্ড হারবারের আমতলার সাত বিধানসভার নেতৃত্বের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠকে বসবেন অভিষেক৷ বেলা তিনটে থেকে চলবে ধারাবাহিক বৈঠক৷ মূলত ভোটের ব্লু প্রিন্ট ওই বৈঠক থেকেই নেওয়া হবে৷ সপ্তম দফায় অর্থাৎ ১ লা জুন নির্বাচন ডায়মন্ড হারবারে৷ কোন মন্ত্রে বিরোধীদের জব্দ করা সম্ভব, এই বৈঠক থেকে সেই পরিকল্পনাই করবেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড৷ আপাতত বিরোধীশূন্য এই কেন্দ্র থেকে কি অভিষেক নিজের টার্গেট পূরণ করে জয়ের মুকুট পরতে পারবেন সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলা৷