বিভাগীয় এবং ভিজিলেন্স তদন্ত সত্ত্বেও কীভাবে কেন্দ্রের ছাড়পত্র?
খায়রুল আনাম: জেলা বীরভূমের দু’টি লোকসভা কেন্দ্র বীরভূম ও বোলপুর দু’টি-ই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে৷ এরমধ্যে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিনবারের তারকা সাংসদ শতাব্দী রায় চতুর্থবারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন৷ এই কেন্দ্রে বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে, সেই নাম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চ্চাও চলছিল৷ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায় বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ বলেছিলেন, বিজেপির কোনও প্রার্থী নেই৷ কেন দিচ্ছে না, কী করছে, কে আসছে সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে৷ তবে, ফুটবল একা একা তো খেলা যায় না৷ আমি যে বলটা করব, তার বিপরীতে সামনে আর এক জনকে চাই বলটা মারার জন্য৷ এর কয়েক ঘণ্টা পরেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ২১ মার্চ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে আসা ৪৭ বছরের আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধরের নাম ঘোষণা করে৷যিনি এক সময় বীরভূমে কর্মরত ছিলেন৷ দেবাশিস ধর ২০২১ সালে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার থাকাকালীন সময়ে বিধানসভা ভোটে শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালনার ঘটনায় পাঁচ গ্রামবাসীর মৃতু্য হয়৷ সেই সময় থেকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে ছিলেন তিনি৷
সেই দেবাশিস ধরের নাম বিজেপি বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জন্য তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই এনিয়ে রাজনৈতিক স্তরে জোর চর্চ্চা শুরু হয়ে যায়৷ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায় যেমন তারাপীঠে মা তারার মন্দিরে পুজো দিয়ে ভোট প্রচার শুরু করেন তেমনি, দেবাশিস ধরও তারাপীঠে মা তারার পুজো দিয়ে ভোট প্রচার শুরু করেন৷ দুই প্রার্থী-ই কেউ কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনও আক্রমণ করেননি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ৩ এপ্রিল তারাপীঠে দলের কর্মী সভায় যোগ দিতে এসে তিনিও যান তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিতে৷ সেদিন তিনিও দেবাশিস ধরের প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি গোরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যাকে মণ্ডল নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাথে সাথে দেবাশিস ধরের প্রার্থী হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ তারপর থেকেই জেলার ভোট চর্চ্চায় পুনরায় চলে আসে অনুব্রত মণ্ডলের নাম৷
কিন্ত্ত তার পরই বৃহস্পতিবার ৪ এপ্রিল মুুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে নির্বাচনী জনসভা থেকে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি দেবাশিস ধরকে কী ভাবে প্রার্থী করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর থেকেই বীরভূম লোকসভা ভোটে অনুব্রত মণ্ডলকে পিছনে ফেলে দিয়ে সামনে চলে এসেছে দেবশিস ধরের প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গটি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবাশিস ধরের নাম না করেই বলেন, শীতলকুচিতে পাঁচজনকে গুলি করে মারা হয়েছিলো৷ যে লোকটির নির্দেশে এটা ঘটেছিলো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দু’টি তদন্ত চলছে৷ ভিজিলেন্স ক্লিয়ার হয়নি৷
তবু কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছে৷ শীতলকুচিতে গুলি চালিয়ে রক্তের দাগ না মুছে তিনি বীরভূমে গিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন৷ কেন্দ্র কোনও আইনকানুন মানে না৷ এনিয়ে দেবাশিস ধরও এবার মুখ খুলে ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করে বলছেন, শীতলকুচি কাণ্ডে রাজ্যের একটি বড় মাথার বিরুদ্ধে এফআইআর আছে৷ সিবিআই তদন্ত হলে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে৷ সেই সাথে তিনি জানিয়ে দেন যে, আমার হাতে কোনও রক্ত নেই৷ ঘটনাটির তদন্ত করছে সিআইডি৷ দোষি হলে কী আমি এখানে থাকতে পারতাম-এই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷ সেইসাথে ভোট প্রচারেও অভিনবত্ব এনেছেন দেবাশিস ধর৷ অন্য প্রার্থীরা যখন গাড়িতে ঘুরছেন তখন তিনি কৃষি প্রধান জেলাতে ভোট প্রচারে নেমে পড়েছেন ট্রাক্টরের স্টিয়ারিং হাতে৷