অন্যায়ের প্রতিশােধ

আবু বকর আল বাগদাদি (File Photo: AFP)

বিশ্বে একজন সন্ত্রাসবাদী কমল। এটাই একমাত্র নিশ্চিত ব্যাপার। কারণ আরও হাজার হাজার সন্ত্রাসবাদী আছে, যদিও ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বকর আল বাগদাদির হত্যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২০-এর নভেম্বরের নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে কিছুটা হলেও প্রাণবায়ু জোগাল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার সম্মুখীন এবং সিরিয়া সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য প্রবলভাবে সমালােচিত। এই অবস্থায় স্বঘােষিত খিলাফত নেতা বাগদাদির হত্যার বিস্তৃত বিবরণ দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানানাে হােয়াইট হাউজের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে ট্রাম্প যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা রীতিমত অমর্যাদাকর।

বাগদাদির অন্যায়ের প্রতিশােধ নেওয়ার বিষয়টি কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা কি আদৌ শােভন? এটা ঠিক যে নিচে হিংস্র কুকুরের দলকে লেলিয়ে দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে মার্কিন বাহিনী এই বিশেষ অভিযানে নেমেছিল, যাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিখুঁত অভিযান আখ্যা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল বাগদাদি ও তার তিন সন্তানকে সেই হিংস্র কুকুররাই কি বন্ধ-মুখ সুড়ঙ্গে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে? এর বর্ণনা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন, সে কুকুরের মত মরেছে, কাপুরুষের মত মরেছে। তাঁর কথায়, ‘বাগদাদি আর্তনাদ ও চিৎকার করতে করতে দৌড়ে একটি বন্ধ-মুখ সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ে। সুড়ঙ্গের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাগদাদি নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

এই ঘটনার পর হােয়াইট হাউজের পক্ষে একথা বলা স্বাভাবিক যে ‘বিশ্ব এখন অনেক নিরাপদ হল। কিন্তু এই ধারণার সঙ্গে বিশ্বের একমত হওয়া কঠিন। যদি ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক ও সিরিয়া একটা জোর ধাক্কা খেয়েছে এবং সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে, তবু এটা ধরে নেওয়া কাল্পনিক ব্যাপার হয়ে যাবে যে আইসিস একেবারে শক্তিশুন্য হয়ে যাওয়ার মত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এটা ঠিক কিছু সময়ের জন্য আইসিস নেতৃত্বহীনতায় ভুগবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চয় ভালােভাবেই জানেন যে উগ্রপন্থার সত্যটাই হল একজন জঙ্গি মরলে দু’জন জন্মায়। শনিবার রাতে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে মার্কিন বাহিনীর অভিযান পাকিস্তানের অ্যাবােটাবাদে মার্কিন বাহিনীর ওসামা বিন লাদেনকে খতম করার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভুলে যাওয়ার নয় যে সমুদ্রেই লাদেনের মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার আট বছর পর আল কায়দা কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায়নি, তারা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। সিআইএ’র তথ্যের ভিত্তিতেই এই দুই অভিযান হয়েছে। দুটি অভিযান বারাক ওবামা ও ডােনাল্ড ট্রাম্প নিজ নিজ সময়ে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন, যা কোনও সিনেমার চেয়ে কিছু কম নয়।


বাগদাদির মৃত্যুর খবরকে স্বভাবতই বিশ্ব নেতারা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কিছু সাবধানবাণীও আছে। যেমন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতিক্রিয়া হল, বাগদাদির মৃত্যু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ঠিকই, কিন্তু আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এই প্রতিক্রিয়ায় বরিস জনসন মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক নিখুঁতভাবে বাগদাদি-উত্তর পরিস্থিতি ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। এখন বড়জোর বলা যায় আইসিসের প্রতিষ্ঠার পর তার একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। একটা পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর আশঙ্কা কিন্তু পুরােপুরি অমূলক নয়।