শারীরিক অসুস্থতার জেরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বহু দিন আগে থেকেই দুরে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সােমবার বিবৃতি প্রকাশের পর মঙ্গলবার একটি অডিয়াে বার্তা প্রকাশ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় দফার ভােটের আগে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর আর্জি, পশ্চিম বাংলাকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন ইতিহাস তৈরি করুন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের সমাবেশে থাকতে পারেননি অসুস্থতার কারণে। সােমবার নন্দীগ্রামে গুলি চলার পিছনে অধিকারী পরিবারের ভূমিকা নিয়ে মমতা অভিযােগ করার পরই নিজের রাজনৈতিক জীবনের সেই বিতর্কিত অধ্যায় নিয়ে নীরবতা ভাঙেন তিনি। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের পিছনে কুটিল চিত্রনাট্য কাজ করেছিল বলে লিখিত বিবৃতিতে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামেই ভােটগ্রহণ, যেখানে প্রতিপক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। অডিয়াে বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা সকলেই বুঝতে পারছি এ রাজ্যের রাজনীতিতে এ এক সন্ধিক্ষণ।
বিগত বামফ্রন্টের আমলে আমরা স্লোগান তুলেছিলাম, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। এবং সেই চিন্তাধারা নিয়েই আমরা এগিয়েছি। কৃষিতে যেমন সাফল্য এসেছিল, তেমনই শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। বামফ্রন্ট অপসারিত হওয়ার পর তৃণমূলের সরকার রাজ্য জুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সমস্ত বিচারেই রাজ্যের অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়, হতাশা। কৃষিতে সঙ্কট, কৃষকের সঙ্কট। কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে।”
শিল্প নিয়ে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এ রাজ্যে শিল্প, শিল্পায়ন সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে উল্লেখযােগ্য একটি শিল্পও আসেনি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নীরবতা, শিক্ষায় নৈরাজ্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, নাগরিক জীবনের চাহিদাগুলি অবহেলিত। সামাজিক জীবনে গণতন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে। স্বৈরাচারী শাসকদল, তাদের কর্মীবাহিনী এবং সমাজবিরােধীরা একজোট হয়েছে। মহিলাদের নিরাপত্তা ভয়ঙ্কর ভাবে বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না।
বিশেষত যুব সম্প্রদায় যাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ, তাঁরা এখন আশাহীন, উদ্যোগহীন, হতাশায় জড়িয়ে পড়ছেন। রাজা ছাড়ছেন অনেক যুবক। দেশের অন্যান্য জায়গায় গিয়ে চাকরির সন্ধানে বাঁচার চেষ্টা করছেন।”
বুদ্ধ বাবু আরও বলেন, “এক দিকে তৃণমূলের এই স্বৈরতান্ত্রিক নৈরাজ্য। অন্য দিকে, বিজেপির আগ্রাসন রাজ্যে যেমন বিপদের পরিবেশ তৈরি করেছে, তেমনই এনে দিয়েছে এক সম্ভাবনা। বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং ধর্ম নিরপেক্ষ একটি দল তারা একটি যৌথ মঞ্চ তৈরি করেছে। এই নির্বাচনে সংগ্রাম করবার জন্য।
রাজ্যের যুবসমাজ তারা এই সংগ্রামের সামনের সারিতে রয়েছে। তারা চায় শিল্প, তারা চায় শিক্ষা, তারা চায় সমাজের উন্নত মূল্যবােধ। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জয় হলে নতুন সরকার তৈরি হবে। যারা বিপদগ্রস্ত গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে।
রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, মানুষের জীবন জীবিকার দাবিগুলি সম্পর্কে সতর্ক থেকে কাজ করবে। আমার আবেদন সকলের কাছে, পশ্চিমবাংলাকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গে নতুন ইতিহাস তৈরি করুন।”