• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বন্ড ও শন, এক ও অভিন্ন

ঠোটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে যখন তিনি উচ্চারণ করতেন, 'দ্য নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড' তখন থেমে যেত মহিলাদের হৃদস্পন্দন, পুরুষদেরও। 

জেমস বন্ডের ভূমিকায় শন কনােরি। (Photo: Twitter | @007)

তাঁর ছবির ভক্ত ছিলেন আলফ্রেড হিচকক, সত্যজিৎ রায়, স্টিভেন স্পিলবার্গ থেকে শুরু করে কোয়েন্টিন তারান্টিনাে, পিটার জ্যাকসন, ড্যানি বয়েল পর্যন্ত। কিশাের কুমার বিদেশে গেলে প্রথম যেটার সন্ধান করতেন তা হল শন কনােরি অভিনীত বন্ডের ছবির ভিসিডি।

বাহুলগ্না নায়িকার চোখ থেকে একবারের জন্যও চোখ না সরিয়ে রিভলবার তাক করে শত্রুকে উড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। ঠোটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে যখন তিনি উচ্চারণ করতেন, ‘দ্য নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড’ তখন থেমে যেত মহিলাদের হৃদস্পন্দন, পুরুষদেরও। 

ডক্টর নাে  ছবিতে কোনও পুরুষ কি ভুলতে পেরেছেন সাদা বিকিনি পরিহিত উরসুলা আন্দ্রেসকে। বলতে দ্বিধা নেই সেই অর্থে শন কননারি অভিনীত বন্ড ছিল একটা বুক ধকধক ব্যাপার। একশন, থ্রিল ও হালকা যৌনতায় মােড়া টানটান তিন ঘণ্টা। কোথা দিয়ে যে সময় গড়িয়ে যেত টের পাওয়া যেত না, শেষ হইয়াও না হইল শেষের ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফেরা, দু’তিন দিন লাগত ঘাের কাটতে। 

সত্তরের দশকে শনের বন্ড ছিল বাঙালির যৌনতায় ট্যাবুর ওপর এক জোরদার আঘাত। শােনা যায় কোনও স্ক্রিন টেস্ট ছাড়াই, স্রেফ হাঁটার ভঙ্গি দেখে প্রযােজকরা শন’কে নির্বাচন করেছিলেন, বলতেই হয় শন তাদের মান রেখেছিলেন। পাঁচটি বন্ড করার পর স্বেচ্ছায় সরে

দাঁড়িয়েছিলেন শন। কিন্তু দর্শকদের চাহিদায় আবার ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। দুটি ছবি করার পর অবশ্য অন্য অভিনেতা শনের জায়গায় আসেন। বহু দর্শক ছিলেন যাঁরা সে সব দেখতেন না। তাদের কাছে বন্ড ও শন এক ও অভিন্ন। 

শন এরপর হলিউডে বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন, পেয়েছেন অস্কার, নাইটহুড, কিন্তু এসবই গৌণ। তিনি জেমস বন্ড, এই তাঁর মুখ্য পরিচয়। এডিনবরার বস্তি থেকে হলিউডের মসনদ হয়ে বাহামাসের বিলাসবহুল ভিলা। পথটা মসৃণ ছিল না। 

ছােটবেলায় যে ছেলেটা ভালাে করে স্নান করতে পারেনি, সে পরে বাথটাবে শুয়েও ভােলেনি সেই ছােটবেলা, প্রকাশ্যে কবুল করেছেন, বাথটাবে শুয়ে তিনি স্বর্গসুখ অনুভব করেন। সারা জীবন ছিলেন স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে, হাতে ট্যাটু করেছিলেন ‘স্কটল্যান্ড ফরেভার’। 

২০০৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পর বলেছিলেন, নতুন দেশ গড়ার আনন্দই আলাদা। স্কটল্যান্ড হারালাে তাঁর এক কৃতি সন্তানকে, আর আমরা জেমস বন্ডকে। ইয়ান ফ্লেমিং যাঁকে এঁকেছিলেন বইয়ের পাতায়, তাঁকে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন শন কনােরি। বিদায় বন্ড, ০০৭।