তরুণ রায়চৌধুরী
কোমল অস্থিবিশিষ্ট মাছ হাঙর৷ দেখতে নানারকম, নামও অনেক৷ যেমন হ্যামারহেড শার্ক, গ্রীনল্যান্ড শার্ক, বুল শার্ক, রিফ শার্ক, নার্স শার্ক, হোয়েল শার্ক, লেমন শার্ক ইত্যাদি৷ ফুলকার সাহায্যে জল থেকে সরাসরি অক্সিজেন নেয় তাই জলের বাইরে হাঙরদের নাক বের করার প্রয়োজন হয় না৷ এদের ফুলকাগুলো ঢাকা থাকে গিল-স্লিট নামে একধরনের আবরণের সাহায্যে৷ কারো ক্ষেত্রে এই আবরণ থাকে ৫ থেকে ৭ জোড়া৷
হাঙর সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সচ্ছন্দ বোধ করে৷ আবার খুব ঠান্ডা পরিবেশেও এদের কোন কোন প্রজাতিদের দেখা যায় ৷ প্রায় সারা পৃথিবীতেই বিচরণ করে গ্রেট হোয়াইট শার্ক ৷ ৫ জোড়া গিল-স্লিটবিশিষ্ঠ এই হাঙরের বৈজ্ঞানিক নাম কার্চারোডন কার্চারিয়াস৷ টর্পেডোর মতো আকৃতি৷ শঙ্কু আকৃতির নাক৷ পিঠের রঙ গাঢ় নীল, বাদামি কখনো বা ধুসর ৷ লেজ অর্ধচন্দ্রাকার, পেটের দিক সাদা৷ কারো কারো দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ ফুট৷ প্রাণীটির নাম তাই হয়তো ওরকম ৷
হাঁ করলে গ্রেট হোয়াইট শার্ককে ভয়ঙ্কর দেখায়৷ এর উপরের চোয়ালে থাকে ২.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের তীক্ষ্ণ-খাঁজকাটা ত্রিভূজাকার দাঁত৷ নিচের চোয়ালের দাঁত ছোট এবং কম খাঁজযুক্ত ৷ শুধু তাই নয়, সেগুলোর সংখ্যা উপরের চোয়ালের তুলনায় কম৷ করোটির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকানো না থাকায় শিকার ধরার সময় গ্রেট হোয়াইট শার্কের চোয়ালদুটি দ্রুত সামনের দিকে এগিয়েআসে৷ এর কামডে়র জোরও বড় সাংঘাতিক৷ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১.৮ টন ওজনের শক্তি! শিকার বুঝতেও পারে না শরীরের অংশ কখন আলাদা হয়ে গেছে৷
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব অংশে একটি জায়গার নাম কেপ-কড৷ হিমবাহের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া এই উপদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ৷ নাম শুনে বুঝতে অসুবিধা হয় না এখানে প্রচুর কডমাছ পাওয়া যায়৷ লোভনীয় সেই মাছের আকর্ষনে কেপ-কডে তাই গ্রেট হোয়াইট শার্কের আনাগোনা৷ হাঙরদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে হিংস্র৷ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম পাডে় ফ্লোরিডার ডেটোনা সৈকত এই হাঙরদের স্বর্গরাজ্য৷ এখানে প্রচুর মুলেট ও মেনহ্যাডেন মাছ পাওয়া যায়৷ ১৮৮২ সাল থেকে এই সৈকতে ৩৫১টি হাঙর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷
বিনা প্ররোচনায় মানুষকে আক্রমণ করে গ্রেট হোয়াইট শার্ক৷ ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে সাবমেরিন থেকে জাপানি টর্পেডোর আঘাতে ফিলিপাইন সাগরে আমেরিকার একটি যুদ্ধ জাহাজ ইন্ডিয়ানাপোলিস ডুবে গেলে ৫৭৯ জন হাঙরের কবলে প্রাণ হারান৷ এবার যাওয়া যাক দক্ষিণ আফ্রিকার ডায়ার দ্বীপে৷ সীলের আকর্ষনে এখানেও দেখা যায় প্রচুর গ্রেট হোয়াইট শাক৷ এই হাঙর কখনো মরা তিমিও খায়৷ কেপ টাউনের কাছে গানস-বাই সৈকতে জলের নিচে খাঁচার ভেতর থেকে এই হাঙরদের খুব কাছ থেকে দেখা যায়৷ ব্যাপারটা বেশ রোমাঞ্চকর হলেও কখনো সখনো ঘটে যায় বড়সড় বিপদ৷ ভুমধ্যসাগরেও দেখা যায় গ্রেট হোয়াইট শার্ক৷
সৈকতে মানুষের ভিড়, অনেকক্ষণ জলে বিচরণ হাঙরদের আকর্ষণ করে৷ অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে তাই হাঙরের আক্রমণের কথা অনেক শোনা যায়৷ ১৯৫৯ সালে সেখানে ধরা পডে় বিশাল একটি গ্রেট হোয়াইট শার্ক৷ সেটির ওজন ছিল ১২০৮ কিলোগ্রাম৷ হাঙরের হিংস্রতা নিয়েবিখ্যাত দুই চলচ্চিত্রের নাম জস ও টিনটোরেরা৷ তবে সব হাঙর হিংস্র নয়৷ এই ব্যাপারে প্রথমেই চলে আসে পৃথিবীর সবচেয়েবড় হোয়েল শার্কের নাম৷ লেমন শার্ক মানুষকে কিছুই করে না৷ বিপদ কিভাবে আসে কেউ জানে না৷ একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক ক্ষেত্রে বড়সড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়৷ সমুদ্রে তাই সবসময় একসাথে থাকা৷ সৈকত ছেডে় বেশি গভীরতায় না যাওয়া৷ আর অন্ধকারে তো সমুদ্রের জলে নামার কথা ভাবা কখনোই উচিত নয়৷