• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

সূর্যমামার শীতের ছুটি

খোকা আর তার দল আবার যাত্রা শুরু করল। তারা গ্রামে গ্রামে খুঁজতে লাগল সেই উষ্ণ হাসি। কিন্তু শীতের কষ্টে কেউই হাসতে পারছিল না। অবশেষে তারা এক বুড়িমায়ের কাছে গেল।

প্রতীকী চিত্র

বিচিত্র কুমার

কয়েকদিন ধরে সূর্যমামার দেখা নেই। আকাশজুড়ে কুয়াশার চাদর, আর ঠাণ্ডায় মানুষ আর পশুপাখি কাঁপছে থরথর করে। গ্রামে গুজব ছড়িয়েছে, সূর্যমামা নাকি শ্বশুরবাড়ি গেছেন!

খোকা খুব চিন্তিত। সে ভাবতে থাকে, ‘সূর্যমামা কি সত্যিই চলে গেছেন? যদি তাই হয়, তবে কবে ফিরবেন? এই ঠাণ্ডায় তো আমাদের জীবনই ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।’

তখন খোকার দাদু বললেন, ‘রাগ করলে সূর্যমামা মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়ি যান। তবে যদি ভালো করে ডাকা যায়, তিনি ফিরে আসেন।’
এ কথা শুনে খোকা আর দেরি না করে তার বন্ধু ভোলা, পাগলা কুকুর, আর গুগলি বেড়ালকে ডেকে সূর্যমামাকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করে। তারা সবাই মিলে সূর্যমামার শ্বশুরবাড়ি খুঁজতে বের হয়।

পথে পথে তাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়। কুয়াশায় তারা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ তাদের সামনে বরফের রাজা এসে দাঁড়ায়। বরফের রাজা জিজ্ঞেস করে, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ?’

খোকা সাহস করে বলে, ‘আমরা সূর্যমামাকে খুঁজছি। তিনি শ্বশুরবাড়ি গেছেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
বরফের রাজা মুচকি হেসে বললেন, ‘সূর্যমামা তো আমাকে ভয় পান। আমি যখন কুয়াশার চাদর বিছিয়ে দিই, তিনি লুকিয়ে পড়েন। তবে আমি চাইলে তিনি ফিরে আসবেন।’

খোকা কাকুতি-মিনতি করে বলল, ‘রাজা, সবাই খুব কষ্টে আছে। পশুপাখি খাবার পাচ্ছে না, মানুষ ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে। সূর্যমামাকে ফিরিয়ে দিন।’

বরফের রাজা এক শর্ত দিলেন। তিনি বললেন, ‘আমিসূর্য মামাকে ছাড়ার অনুমতি দেব, যদি তোমরা আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ হাসি এনে দাও।’

খোকা আর তার দল আবার যাত্রা শুরু করল। তারা গ্রামে গ্রামে খুঁজতে লাগল সেই উষ্ণ হাসি। কিন্তু শীতের কষ্টে কেউই হাসতে পারছিল না।
অবশেষে তারা এক বুড়িমায়ের কাছে গেল। বুড়িমা আগুনের পাশে বসে একঝাঁক অনাথ শিশুকে গল্প শোনাচ্ছিলেন। তার মুখে ছিল এমন উষ্ণ হাসি, যা দেখে মনে হচ্ছিল শীতের ঠাণ্ডাও গলে যাবে।

খোকা বলল, ‘এই হাসিই তো আমাদের দরকার!’
বুড়িমা বললেন, ‘এই হাসি ভালোবাসা আর দয়া থেকে আসে। তোমরা যদি প্রকৃত ভালোবাসা আর সহানুভূতি দেখাতে পারো, তবে এই হাসি নিয়ে যাও।’

খোকা সেই উষ্ণ হাসি বরফের রাজার কাছে নিয়ে গেল। রাজা সেই হাসি দেখে খুশি হয়ে বললেন, ‘তোমরা সত্যিই সাহসী। এই হাসি আমার শীতল হৃদয়কেও গলিয়ে দিল। এবার সূর্যমামাকে ফিরতে দিই।’

এরপর বরফের রাজা তার কুয়াশার জাল সরিয়ে নিলেন। ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হল, আর সূর্যমামা ফিরে এলেন। তার উষ্ণ রোদে পুরো গ্রাম আনন্দে মেতে উঠল।

খোকা আর তার বন্ধুরা গরম পিঠে খেতে খেতে ভাবল, ‘একতা আর ভালোবাসার জোরেই যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব!’