• facebook
  • twitter
Sunday, 29 December, 2024

কবিতা গুচ্ছ

বৈকুন্ঠনগর সুপর্ণশু ১ অনন্ত পথ রক্তাভ আকাশের শরীর ছুঁতে পারছি কথা… অনুপম আলো চিনিয়ে দিচ্ছে পাখিদের অন্ধ-গোপন গলি অসময়ে খুলে যাচ্ছে মেঘবাড়ির জানলা, কপাট মহীরূহের ডালপালাগুলো— অজস্র হাত হয়ে ইশারায় কাকে ডাকছে হৃদয়ের পাশে বইছে তুমুল বর্ষার নদী। ২ হাওয়ায় ভাসে প্রলুব্ধ সংলাপ পাতায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে বিষ… বোবা মাঠে পড়ে থাকে বিচ্ছিন্ন ছায়াদের কঙ্কাল

গ্রাফিক্স চিত্র

বৈকুন্ঠনগর
সুপর্ণশু
অনন্ত পথ রক্তাভ আকাশের শরীর
ছুঁতে পারছি কথা…
অনুপম আলো চিনিয়ে দিচ্ছে পাখিদের অন্ধ-গোপন গলি
অসময়ে খুলে যাচ্ছে মেঘবাড়ির জানলা, কপাট
মহীরূহের ডালপালাগুলো—
অজস্র হাত হয়ে ইশারায় কাকে ডাকছে
হৃদয়ের পাশে বইছে তুমুল বর্ষার নদী।
হাওয়ায় ভাসে প্রলুব্ধ সংলাপ
পাতায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে বিষ…
বোবা মাঠে পড়ে থাকে বিচ্ছিন্ন ছায়াদের কঙ্কাল করোটি।
এপিডার্মিস-মাংসল কোষের গভীরে—
ভাঙা পাঁজরের কাছে পড়ে আছে—
মৃত নদীর কঙ্কাল
আর
প্রান্তর জোড়া প্রাসঙ্গিক কুহেরা…
আমার শহর
রবীনা মিত্র
আমার শহর এক আঁচল হলুদ রাতবাতি
জ্বেলে বসে থাকে দিন-সেঁকা হাড়ে-মজ্জায়!
শান্ত জ্বরের মতন জল বয়ে যায় বাদামী শিরার পাশ দিয়ে।
গলিপথ খুঁজে ফেরে রাতজাগা গোপন আনাগোনা আর
বারান্দা ঝুঁকে দেখে কাতর প্রেমিকের মুখ। থমথমে।
কোথাও পুরোনো ইঁট খসে পড়া বাড়ির ছাদে বসে
কবিতার আসর।
প্রহরের পর প্রহরে ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়ে
প্রেম-প্রণয়-বিরহ-বিষ-বিরাগ-বিদ্রোহ!
এই শহর জেগে থাকে ঘুমের আড়ালে-আবডালে,
যেন এক ভাব-কবিয়াল, রাতকে দিন মনে ক’রে
অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে চলেছেন কী যেন গাইতে গাইতে…
যেন খেয়ালই নেই তার লুটিয়ে পড়া কাপড় থেকে
ঝরে পড়ছে শিশির-ভোর।
যেন রাত্রির ভেজা রেশম-গায়ে ভেসে আসছে
পাখির ডানা-ছোঁওয়া আলো, আজানের সুর,
আর গঙ্গাজলস্পর্শ-তর্পণের তরল শিহরণ।
শাগাল
শিশির আজম
কোনও গ্রাম আমি পুষে রাখিনি আমার ভেতর
ঠিক যাকে আমরা গ্রাম বলি
আর মাংসময় আকাঙ্ক্ষা ঢেকে রেখে সত্যি
তেমন কিছু পাবো কি এখন
কাকেই বা গ্রাম বলা যায়
মানে কী কী উপাদান বা প্রকৃতির সম্মিলন হলে
তাকে ঠিক গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে
শাগালকে জিগ্যেস করে লাভ নেই
প্যারি
যে শহরটাকে ও চেনে
সেই শহরটাও তো অনেক উঁচুতে মানুষের মাথার ওপর
উড়ে উড়ে বেড়ায়
আর দেখে মানুষের শয়তানি

নিষিদ্ধ গোলাপ
অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়

গোলাপ চুম্বনে গরল গড়ায় নিঃশব্দে
তীব্র আকর্ষণ এড়ানো কঠিন
তাই জেনে শুনে বিষ ধারণ করেছি ওষ্ঠে।

কাঁটায় ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত কলজে ফুঁড়ে
স্রোত নামে সন্তর্পণে। ভেসে যায় যাবতীয় বৈভব।

শরীরী বিভঙ্গে আদিমতার টান নিঃস্ব করে
ছুঁড়ে ফেলেছে সীমানার ওপারে। নিরন্ন অসুখ এখন।

ভালোবাসাহীন নির্মম ব্যথার নির্যাস
চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে হৃদয় গভীরে
তোলপাড় জীবন দলিল মলিন স্মৃতি গাথা।

বাগানে নিষিদ্ধ গোলাপ একা একা স্থির দাঁড়িয়ে।।

 

প্রতীক্ষা ও অশ্রুকথন
রূপায়ণ ঘোষ

মেঘ ঘন হয়ে এলে
পৃথিবীতে সমস্ত ময়ূর বড় বেশি চঞ্চল হয়ে ওঠে
অথচ সব মেঘ আনন্দগামী নয়,
কিছু কিছু মেঘ আনে বিষণ্ণ বিকাল।

স্পর্শ তপ্ত হয়ে এলে
কথারা বড় বেশি ঘন হয়ে আসে
বুদ্ধের মূর্তির নীচে স্তব্ধ কোকিল
কেবলই প্রতীক্ষা টেনে আনে সূর্যের…

চোখ থেকে চোখে কান্না গড়িয়ে যায়
মৃদু কম্পিত আলিঙ্গন—
কিছু কিছু কেঁপে ওঠা এত বেশি তীব্র অথচ নীরব
বিপন্ন অন্ধকারেও তাদের চিহ্ন থেকে যায়…

পৃথিবীতে সমস্ত পথ আশ্রয়গামী নয়
তবু কিছু কিছু পথেদের থেকে যাওয়া প্রয়োজন
দু-হাতে এত বেশি অশ্রু মেখেছি আমরা
তবু জানি প্রতিটি অশ্রু মগ্নতাগামী নয়।

 

তোমার গল্পটা
এখনও বাকি
তন্ময় কবিরাজ


তোমার গল্প শুনিনি অনেকদিন

কার্নিশে তোমার শাড়ি এখনো
নতুনের গন্ধে লুকোচুরি খেলে সারাদিন

তোমার গল্প লিখবো ভেবে
তোমাকে ভালবেসেই কাল হলো আমার—

এতো বাড়ি!
কোনটা তোমার বাড়ি?
কোনোদিন এই প্রশ্নটাই জানতে চাইনি
গলিতে গলিতে মুখ দেখাদেখি
কথা নেই, নির্জনতায় সম্পর্ক জটিল।


নীরব মিছিলে কারা এসেছিল আজ?
চেনা নেই অচেনার আড়ালে বলে গেলো তারা
আমি-তুমি বাড়ি পাশাপাশি
মাঝখানে রাজপথ
লোক হেঁটে গেছে আমাদের অজান্তে

দাবি ছিল খুঁজে নাও
দেবো না কিছুই যদি না চাও নিজে

ভরা জোয়ারে ভেসে গেল নালা
গঙ্গা মরেছে দূষণে
শুশুক কেঁদেছে,বাড়ি চলে গেছে মাঝি
শুধু কোলাঘাটের ইলিশেই সুখ

মিছিল বেড়েছে,বন্ধ দোকান
ঘুমন্ত বিবেকে জ্যোৎস্নার আলো
চাঁদ চুরি করে অর্কিড জেগে থাকে সারা রাত

তুমি ভালো আছো,
প্রতিবাদের তোমার কি দরকার?

 

প্রতিক্ষণ
সুনীল শর্মাচার্য

আশার কথা শুনতে শুনতে ঘুম পাই;
এই ঘুম মৃত্যুর অপেক্ষা!

কতো দীর্ঘ সময় কেটে গেল
প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে…
ঘুম ভেঙে দেখি: সেই থোড় বড়ি খাড়া,
কোথাও নড়েনি গাছের একচুল পাতা…

পরিবর্তন জীবনের ধর্মে গড়িয়ে যাচ্ছে…

কোথাও চড়াই, কোথাও গর্তে
ভরেছে নানান অভিজ্ঞতা…
ঘুম পায়, ভীষণ ঘুম পায়
প্রতিক্ষণ শুনতে শুনতে কথা

অনেক পাপের ঘড়া পূর্ণ হলো—
এইটুকু জীবনে এইটুকু সময়

তবু নিয়তি খুঁড়ে খাচ্ছে সীমাহীন প্রত্যাশা!