কবিতাগুচ্ছ

প্রতীকী চিত্র

উড়ছে ঘুড়ি
উৎপলকুমার ধারা

উড়ছে ঘুড়ি রংবেরঙের, নীল আকাশে
বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে ভাদরমাসে
ছোট্টখোকা নাচছে পুজোর ঢাকের তালে
ঝরছে শিউলি, ফুটছে রে কাশ মাঠের আলে!

উড়ছে ঘুড়ি পেটকাটি নীল, লাল চাঁদিয়াল
ফর্সা আকাশ সাজায় রে ওই রোদের সকাল
জলের উপর শালুককুঁড়ি নাড়ায় মাথা
সাজতে থাকে পুজোর রঙে ছড়ার খাতা!


উড়ছে ঘুড়ি হাওয়ার তালে নাচছে ধিতান
খুশির রঙে সাজছে পাড়ার পুজোর বিতান
পোটোর ছেলে নরম মাটির দুর্গা গড়ে
কদিন পরেই আসবে মা যে বাপের ঘরে!

 

গোঁফ নিয়ে
গৌতম সরকার

গোঁফ নিয়ে কোনদিন,
চিন্তাই করিনি।
বড় হলে ছেঁটে ফেলি,
গোঁফে বাজি ধরিনি।

কেউ বলে গোল মুখে,
ঝোলা গোঁফ মানাবে।
কেউ বলে চেঁচে দিয়ে,
নায়কটা বানাবে।

আমি বলি আছে বেশ,
নাকের সে তলাতে।
কিবা আসে কিবা যায়,
লোকেদের বলাতে।

তবু বলে গোঁফ নাকি,
পুরুষের গর্ব।
গোঁফেতেই থাকে তার,
মান্যির পর্ব।

গোঁফ ছাড়া মুখটাই,
হারায় যে ছন্দ।
রাখি তাই ছেঁটে কেটে,
লাগেও না মন্দ।

গোঁফ নিয়ে নানা জনে,
নানা কথা বলছে।
সেটাতেই কত মনে,
কত কিছু চলছে।

গোঁফ, তুমি নিজে বলো,
তোমার কী ইচ্ছে।
গোঁফ বলে, ‘কে আমার,
কথাটাকে নিচ্ছে?’

সব্বার মুখগুলো,
নিজেরটা ভাবছে।
কেমনটা থাকলে সে
তাকে ভালো লাগছে।

যাই হোক যুগে যুগে,
বিতর্ক চলবে।
তারপর শেষ কথা,
গোঁফেতেই বলবে।

গোঁফ নিয়ে এত কিছু,
ভাবনাতে ভাসিনি।
বড় হলে ছেঁটে ফেলি,
এত ভালোবাসিনি।

 

রংয়ের খাতা
সুব্রত চৌধুরী

খুকুমনি যেই খুলেছে আঁকিবুকির খাতা
খিলখিলিয়ে বললো হেসে জারুল গাছের পাতা—
কী যে খুশি লাগছে আমার আঁকবে আমায় তুমি
আঁকা শেষে সোহাগ ভরে দেবো তোমায় চুমি।

রংতুলিতে আঁকলো খুকু আকাশ বুকে পাখি
সাদা মেঘের ভেলার সাথে দারুণ মাখামাখি।
তাই না দেখে মেঘবালিকা বললো মিষ্টি হেসে—
মেঘের ছবি আঁকলে খুকু আমায় ভালোবেসে।
খুকু, তোমার রইলো দাওয়াত আমার মেঘের বাড়ি
এলে তোমায় পরতে দেবো নীলাম্বরী শাড়ি।

ঘুড়ির ছবি যেই এঁকেছে তুলির আঁচড় কেটে
গোঁত্তা খেয়ে এলো নেমে সোঁদা মাটির পেটে।
আমার সাথে দেবে খুকু মেঘের দেশে পাড়ি
তোমায় নিয়ে যাবো চলে পাহাড় নদী ছাড়ি।

এসব শুনে খুকুর মনে লাগে খুশির দোলা
চোখ কচলে দেখে খুকু রংয়ের খাতা খোলা।

 

শিবের বরে
কাজল আচার্য

শিবনাথ ফিরছিল
বনপথ দিয়ে।
কী করে জানবে ও
ভূতেদের বিয়ে।

নাকি সুরে কোলাহল
হাড়ে হাড়ে ঠুকছে।
মানুষ না ভূত এটা
ঝুঁকে এসে শুঁকছে।

শিবনাথ বলে, আমি
ভূত নই বাপধন।
এইভাবে কাঠ হয়ে
থাকবো কতক্ষণ।

ভূত বলে, এটা খাই
আর সব পরে।
মানুষ ভাগ্যে পাই
শিবের বরে।

 

স্বাধীনতা ও ভারতবর্ষ
অমিতাভ সরকার

স্বাধীনতা— খোলা আকাশ
দূর দিগন্ত পার
আশা নিয়েই বেঁচে থাকা
ভাবনা সে যার যার।

সবুজ এ দেশ সোনার মাটি
প্রাণের খুশির ঠাঁই
কাশ্মীর থেকে দাক্ষিণাত্য—
কী আছে কী নাই!

নানান ভাষা নানান জাতি
ভালোবাসার ঘর
সুখে দুঃখে সবাই পাশে
কেউ তো যে নয় পর।

 

সকাল হলেই
শীতল চট্টোপাধ্যায়

সকাল হলেই রঙ বেরঙের পাখি
যে যার স্বরে করছে ডাকাডাকি,
পাখির গানের শান্ত সকাল বেলা
হাওয়ার ডানা করছে মাখামাখি।

সকাল হলেই রঙ বেরঙের ফুলে
প্রজাপতি যায় না বসা ভুলে,
সবুজ ঘাসের ফোটা ফুলে-ফুলে
সেজে থাকে মুক্তোপরা দুলে।

সকাল হলেই রঙ বেরঙের ছাতা
পড়ুয়া যায় আড়াল ক’রে মাথা,
ব্যাগের ভেতর যাচ্ছে নিয়ে স্কুলে
রঙের বাক্স, আঁকার রঙিন খাতা।

সকাল হলেই রঙ বেরঙের বাড়ি
গায়ে-গায়ে কিংবা ছাড়াছাড়ি,
ভিন্ন রঙের ভিন্ন রূপের ওদের
কক্ষনো নেই ঝগড়া-বিবাদ-আড়ি।

সকাল হলেই রঙ বেরঙের গাড়ি
পথ পেরিয়ে দিচ্ছে দূরে পাড়ি,
দিনের শেষে মেঘরঙেদের ছবি
ওইখানেতে নজর রাখে কাড়ি।

 

মিছেই ভূতের ভয়
শচীন্দ্রনাথ গাইন

আঁধার দেখে করে যারা
কেবলই খুঁতখুঁত
তাদের ঘাড়ে চাপে বোধহয়
হতচ্ছাড়া ভূত।

নাম শুনলেই ভূতের যাদের
কাঁপে হৃদয় ভিত
বোকার মতো ঠকে তারা
হয় না মোটেও জিত।

কিন্তু যাদের মনের ভেতর
আছে বিশাল জোর
ভূতের বাপের নেই সাধ্য
চোখে দেখায় ঘোর।

কে দেখেছে, কবে, কোথায়
ভূতের বিকট মুখ
ভূতের কথা শুনলে কেন
বৃথাই শুকোয় বুক?

সাহস নিয়ে ঘুরতে পারো
গভীর রাতে রোজ
ভূতের দেখা মিলবে না ঠিক
যতই করো খোঁজ।