• facebook
  • twitter
Sunday, 22 December, 2024

কবিতা গুচ্ছ

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে দেখা দিলো বান, চাষিদের আশাগুলো ভেঙে খানখান। কত দেশে ঘর বাড়ি ভেসে যায় সব, ত্রাণ চাই ত্রাণ চাই উঠছে তো রব। ধস নামে নদী পাড়ে ওঠে হাহাকার, প্রকৃতির রোষ থেকে করবে কে পার!

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

প্রমিস
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়

আয় সারাদিন বৃষ্টি লিখি গাছের ওপর
বৃষ্টিরা আজ দিক ভিজিয়ে রোদের টোপর
মেঘগুলো আজ আকাশটাকে দিক-না ধুয়ে
স্কুল যাব না, বৃষ্টিকে সব দেখব ছুঁয়ে…

আজ আমাদের ক্যারাম-দুপুর, বাবার ছুটি
থাক দিদিভাই, মায়ের সাথে বাঁধবি জুটি
ঝালখিচুড়ি চাটনিটা বেশ মনের মতো
বল দিদিভাই, বৃষ্টি কারও ব্যক্তিগত?

সূর্যটা কী বেজায় খুশি, ভিজছে সারা
ভিজছে যত মেঘঢাকা ওই চাঁদ-তারারা
জল থইথই স্কুলের মাঠও ভিজছে জানি
ঠাম্মা শুয়ে, মাথার পাশে আকাশবাণী…

আজ পুরোদিন বৃষ্টি দেখা— ভাগ্য পরম
কাদার বিকেল চপ-পেঁয়াজি বকমবকম
কাল ছিল যে শুকনো শুধুই, আজ বিপরীত
সেলসিয়াসও হার মেনেছে, আনমনা শীত!

সব সিজ্‌নেই ম্যান্ডেটরি বৃষ্টিকে চাই
গাছ বসাব মনের সুখে বন্ধুরা আয়
এই পৃথিবীই ভরব আবার সরল জলে

বন্ধুরা চল প্রমিস করি সদলবলে…

 

শীতের ছোঁয়া
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়

শীতের কাঁপন নিয়ম মেনে
আসছে দূরের মাঠ পেরিয়ে,
মোয়ার হাঁড়ি গুড়ের ঘ্রাণে
উদাস এ মন যায় হারিয়ে!

চিতই পিঠের ছাঁচে হতো
হাতের কারুকাজ,
ছোটবেলায় দেখা যেত
বানায় না কেউ আজ!

সন্ধ্যাবেলা উনুনে আঁচ
শিলনোড়াতে চালের বাটা,
হরেকরকম পিঠের ছাঁচ
নারকোল পুর দিয়ে আঁটা।

সেসব এখন গল্পকথা
স্মৃতির নানান ঢেউ,
উথলে ওঠে মনের ব্যথা
বানাবার নেই কেউ!

এখন পিঠে দোকানঘরে
অনলাইনে কেনা,
হাজির করে ঘরের দোরে
কেউ তারা নয় চেনা!

 

ইচ্ছে
অমিত কুমার রায়

মেঘ-বলাকার সঙ্গী হয়ে
যায় উড়ে ওই বলাকা,
মাটির ওপর গাছেরা সব
ওড়ায় পাতার পতাকা!

ইচ্ছে করে আমিও হই
সবুজ শাখার পাখি
বটের পাকা ফল যে খাবো
দুটি ডানায় ঢাকি!

বৃষ্টি দেখি মেলছে ডানা
ঝরছে গাছের পাতায়
ফুল হয়ে যে ভিজছি আমি
জুঁই কদমের মাথায়।

ঝিঙেফুলের নোলক আহা
চিচিং কুঁড়ির নাকছাবি,
কুমড়োফুলের দুল যে দুলি
রঙন ফুলের থোক-চাবি!

প্রজাপতির রঙিন পাখা
রঙ করেছে চুরি
ফুল-পরীদের রঙ যে মেখে
নাচছে পরে চুড়ি।

 

বৃষ্টি-সকাল
অনামিকা পাল

সজনে পাতায় জলের ফোঁটা
ঝিনিক ঝিনিক নাচে—
মুঠো মুঠো বৃষ্টি কেমন
ঝরছে গাছে গাছে।
লেজ গুটিয়ে কাঠবেড়ালি
লাফায় ডালে ডালে,
নতুন মেঘের তবলা বাজে
ছন্দ তালে তালে।
ঠোঁট উঁচিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে
হাঁটছে বকের ছানা—
কাক-ভেজা এক শালিক পাখি
ঝাপটা মারে ডানা।
ডোবার জলে নৌকো ভাসে
কাগজ দিয়ে গড়া,
হালকা বাতাস দুলছে দোদুল
মজার মজার ছড়া।
খালের ধারে ব্যাঙের ডাকে
আষাঢ় এল ছুটে,
ভাবছে চিঠি লিখবে শ্রাবণ
আকাশকে চিরকুটে।
সবুজ ঘাসে গঙ্গাফড়িং
কাটছে আঁকিবুঁকি,
আবছা কাচের বৃষ্টি-সকাল
দেখছে বসে টুকি।

 

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে
হিমাংশু আদক

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে
দেখা দিলো বান,
চাষিদের আশাগুলো
ভেঙে খানখান।
কত দেশে ঘর বাড়ি
ভেসে যায় সব,
ত্রাণ চাই ত্রাণ চাই
উঠছে তো রব।
ধস নামে নদী পাড়ে
ওঠে হাহাকার,
প্রকৃতির রোষ থেকে
করবে কে পার!
বাঁধ ভাঙা বৃষ্টিতে
মন হলো ভার,
শাকপাতা সবজিও
হলো ছারখার।
বৃষ্টি গো যাও ফিরে
করি জোড় হাত,
মুছে যাক বিপদের
এই কালো রাত।

 

দস্যি খোকা
আলমগীর কবির

দস্যি খোকা, ভীষণ প্রিয়
বকুল ফুলের ঘ্রাণ ওর,

দুষ্টুমি সে করলে পরেই
মায়ের হাতে কান ওর!

দস্যি বলে কানমলা খায়
যায় না তাতে মান ওর!

সকাল বিকাল গলা সাধে
কেউ শোনে না গান ওর!

বাবা যদি থাকতো বাসায়
হলো অভিমান ওর!