কবিতা গুচ্ছ

কাল্পনিক চিত্র

ব্যাঙের বিয়ে
সমরেশ মণ্ডল

খোঁজ এনেছে টিয়ে,
পাত্রী অতি সুলক্ষণা
ব্যাঙ বাবাজির বিয়ে।
বিয়ের আসর ছাতার নিচে
মেনু ব্যাঙের ছাতার।
ফর্দ হবে অন্য সবের
খোঁজ পড়েছে খাতার।
ঠাকুরদাদার বাবার নামে
কার্ড দিয়েছে ছেপে।
ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও নেই
ধান দিচ্ছে মেপে।
কেই বা মাসি কেই বা পিসি
কোথায় বৃন্দাবন?
বরের মেসো কনের পিসে
খুঁজছে ছেলের ধন।
ব্যাঙের গলায় ছানাপোনা
বরযাত্রী নয় মাদুলি!
কুনো জানে সোনা জানে
কোথায় বরের আধুলি।
ওতেই ব্যাঙের থপথপানি
ব্যাঙের বাবার লাথি।
হঠাৎ দারুণ গোল উঠেছে
দলমা থেকে বিলে নামছে
দলছুট এক হাতি।

 


আকাশটাকে খোঁজে
দীনেশ সরকার

পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে
গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে।
কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে
পড়ার পাতায় মন কি আমার তখন বাঁধা থাকে?

পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে
কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে
প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায়
কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।

কাঠবেড়ালি কাটুস্-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায়
মন কি তখন আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়?
টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে
মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?

অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে
স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে।
মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে
সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।

 

ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি
শংকর নাইয়া

ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
পদ্মপাতার কোলে ভাসে
সরপুঁটিদের ছানা
ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
দুলছে রঙিন নীলাকাশে
সাদা মেঘের ডানা।

ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
পুকুরে ডুব দিচ্ছে হাঁসে
গাইছে ব্যাঙে সুরে
ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
নাচছে ফড়িং ভেজা ঘাসে
যাচ্ছে চড়ুই উড়ে।

ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
সূর্যি মামা মিষ্টি হাসে
দিয়ে মেঘে উঁকি
ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি আসে
বকের সারি দুলছে বাঁশে
ভিজছে নেচে খুকি।

 

বিচ্ছু
বিকাশকলি পোল্যে

আমাদের বাড়িতে আছে এক বিচ্ছু
মা বলে পড়াশোনা করে না তো কিচ্ছু
ইস্কুলে যায় রোজ ছড়া বলে ভালো
ছড়া শুনে সকলেই মুখ করে আলো।

ফিটফাট পোশাকে ফুটফাট মুখে
কথা শুনে বিচ্ছুর মন ভরে সুখে
খুব ভালোবাসে সে মামাবাড়ি যেতে
আর ভালোবাসে খুব বাটামাছ খেতে।

মামাবাড়ি আছে তার বুড়ি এক দিদা
সেইখানে গেলে তার পায় না তো খিদা
সারাদিন টই টই ঘোরে ফেরে বিচ্ছু
মা বলে ছেলে তার খায় না তো কিচ্ছু।

নাম ধরে ডাকে সে বড় তার দিদিকে
‘এদিকে’র বদলে সে বলে আয় ‘ইদিকে’
বড় দিদি বিন্নিও ভালোবাসে ভাইকে
বিন্নির দেখা পেলে আর তাকে পায় কে!

ঠাকুমাকে দিদি ডাকে দাদুকেও দাদা
রাগটাগ নেই তার মন বড় সাদা
‘সাহিত্য’ নাম তার বড়ই সে বিচ্ছু
মা বলে ছেলেটা তো শিখল না কিচ্ছু।

 

হাতছানি দেয়
অরুণ গুপ্ত

দীঘা পুরী ঘরের কাছে
মন চাইলেই যাই ছুটে
সবই দেখা সবই চেনা
স্বীকার করি মুখ ফুটে।
তবু কেন যাই বারে বারে
বলছি তার মূল কারণ
নীল সমুদ্র হাতছানি দেয়
তরতাজা হয় শরীর মন।

 

মেঘনা নামের মিষ্টি মেয়ে
জয়শ্রী সরকার

মেঘনা নামের মিষ্টি মেয়ে মেঘকে ডেকে বলে,
সারাটাদিন বৃষ্টি হলে কেমন করে চলে?
স্কুলে আমায় যেতেই হবে, কিন্তু তো নেই ছাতা
বৃষ্টি-জলে ভিজলে পরে বাঁচবে কি আর মাথা?

খিলখিলিয়ে মেঘের হাসি— বুঝছি তোমার কথা,
ঠিক আছে আজ যাচ্ছি চলে যথা ইচ্ছে তথা।
কিন্তু আমি আসবো ফিরে আর কটা দিন পরে,
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলে থাকবে তুমি ঘরে!

মাঠগুলো সব তৃষ্ণাকাতর চাতক পাখির মতো
কষ্টে আছে এই দেশেরই কৃষকবন্ধু যত!
জল না পেলে মাঠের ফসল ফলবে কেমন করে?
শস্য-শ্যামল মাঠকে সবাই দেখবে দু’চোখ ভ’রে।

মেঘ দেখে কেউ ভয় কোরো না বলছি শোনো আমি
কাঠফাটা এই মাটির কাছেই বৃষ্টি অনেক দামি।
মেঘ ও বৃষ্টি আছে বলেই এই ধরণীর হাসি
শস্য-শ্যামল বসুন্ধরা নবান্ন-সুখ রাশি!

 

বর্ষার দিনে
অমিতাভ সরকার

বাইরের আকাশ ছবির পাড়া
হাঁটু সমান জল
রাস্তাঘাটে নাস্তানাবুদ
কষ্টে চলাচল।

টোটো অটো একটাও নেই
ট্রেনের গণ্ডগোল
বাসস্ট্যান্ডে লোক দাঁড়িয়ে
শুধুই কোলাহল।

ছাতার ভিড়ে বন্দী মানুষ
মুখ যে চেনা দায়
অফিস যাব, সময়টা কম
এবার কান্না পায়।

সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে
বর্ষার দিন আজ
তা বলে তো কেউ বসে নেই
সবার আছে কাজ।