দোল মহোৎসব পরিক্রমায় মথুরা বৃন্দাবন

হিমাংশু শেখর গুহ

কৃষ্ণ ভক্ত বা দোলপ্রিয়দের ‘হোলিকা দহন’ বা ‘হোলি’ উৎসব যখন ২৪-২৫ মার্চ২০২৪, তখন কৃষ্ণের মথুরা আর বৃন্দাবনে মাসখানেক ধরেই হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে নানান উৎসবে রঙ্গময়৷ পরিক্রমায় দেখা যায় মথুরার বরসানায় হোরাঅষ্ট্রক বা অষ্টমী থেকে শুরু করে নন্দগাঁও, গোকুল, গোবর্ধন, কৃষ্ণ জন্মভূমি, দ্বারকাধীস বা বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির, প্রেমমন্দির ও আশ্রমে আশ্রমে দেখা যায় একই দৃশ্য৷ সর্বত্রই ক্রমানুসারে চলেছে লাড্ডু হোলি, লাঠিমার বা ফুলের হোলি৷ সঙ্গে চতুর্দিক থেকে আসা গোয়ালিয়ার, দিল্লি, বোম্বে, নাগপুর ঝাড়খন্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, প.বঙ্গ ও অন্যান্য প্রদেশ ও বিদেশ থেকে আসা ভক্তবৃন্দরা হোলি খেলার আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে দেখা যায়৷ প্রথা অনুযায়ী বরসানা মথুরা থেকে শুরু হয় ১৭ মার্চ লাড্ডু মার হোলি ও ১৮ মার্চ লাঠিমার হোলি৷ কথিত আছে সখাদের গ্রাম বরসানায় নন্দগাঁও থেকে আমন্ত্রণ এলে শুরু হয় লাড্ডুমার ও লাঠিমার হোলি৷ এরপর বরসানা থেকে অনতি দূরে নন্দগাঁও এ উনিশে মার্চ সারাদিন ব্যাপি হয়ে চলে রঙ্গারঙ্গ অনুষ্ঠান, হোলি ও লাঠিমার উৎসব৷ এভাবেই ১৯ মার্চ নন্দগাঁও লাঠমার হোলি, ২০ মার্চ বাঁকে বিহারী মন্দিরে (বৃন্দাবন) ফুলওয়ালি হোলি, ২১ মার্চ গোকুলে মন্দিরে ছডি়মার হোলি, ২২ মার্চ গোকুল হোলি, ২৩ মার্চ রাধা গোপীনাথ মন্দিরে বিধবা হোলি ও ফুল হোলি, ২৪ মার্চ মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমিতে হোলিকা দহন, ২৫ মার্চ প্রেম মন্দির ও ইসকনে হোলি ২৬ শে মার্চ দাউজি মন্দিরে হুরাঙ্গা (হুড়োহুডি়) হোলি দিয়ে হোলি উৎসব পর্ব সমাপ্তি৷ অফুরন্ত সদাতৎপর পুলিশ প্রশাসনও যেন হার মানে ভিড় সামাল দিতে৷ চতুর্দিকে একই দৃশ্য৷ সকলেই হোলির নতুন পরিধানে সমাগমে উপস্থিতি দিয়ে চলেছে৷
দর্শনে আসা বহিরাগতদের একাংশ প্রতিদিন সকাল থেকেই প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণে ও তার বাইরেও ক্রমাগত রং হোলি মানিয়ে চলেছে৷ জন্মভূমি মন্দিরে সকাল থেকেই যেমন একদিকে দর্শনার্থীদের ভিড় তেমনি অপরদিকে হোলির গানের সঙ্গে নৃত্যে মেতে ওঠা, আবার ভান্ডারায় খাবারের ভীড়৷ অন্য দিকে দ্বিতীয় পর্বে রঙ্গারঙ্গ মন্ঞে ও খোলা মাঠে সময়ানুসারে চলেছে হোলির রসেভরা কৃষ্ণ গান, নৃত্যনাট্য ও অপরদিকে মাঠের দুই দিকে পাইপে রঙের ফোয়ারায় বা রঙে রঙে যেন ডুবে যাওয়া৷ সকলেই গানে রঙে মাতোয়ারা৷

‘রং বাপো সাবরিয়া ডার গ্যায় রি..’৷ এ যেন বিশ্বের প্রারম্ভিক হোলির সূচনা৷ তখন মঞ্চে শ্রুতি পুরী ও স্বাতী শর্মা গুরু বন্দনা ও গণেশ বন্দনায় মঞ্চ শুভারম্ভের মধ্যে দিয়ে ‘তসময় সে গুরুদেব নমঃ’ বা ‘জয় জয় গনেশ …’ বা ‘শ্রী কৃষ্ণ গোবিন্দ…’ গেয়ে চলেছেন৷ ওদিকে বাঁকে বিহারী মন্দির দর্শনে আসা বা বৃন্দাবন হোলি উৎসবের সাক্ষী হতে লাখ লাখ দোল প্রেমিকদের দেখা যায় রাধাকৃষ্ণ দর্শনে ভক্তি৷ দেখা যায় এক ধর্মশালায় স্বঃওম প্রকাশ ভবানী ও কুলবন্ত কঔড় স্বরণে তাঁদের পরিবার আম্বালা থেকে আগত সকলকে স্বাগত আমন্ত্রণ জানিয়ে চলেছেন ভান্ডারায়৷ আরও জানা যায় কৃষ্ণ লাল ভবানী পরিবারের থেকে যে শৈলেন্দার ভবানী ৩৫ বছর ধরে ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছেন এমতো ভান্ডারা৷ এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দের জন্য হয়ে চলেছে ভান্ডারা সেবা৷ একদিকে বহিরাগত দের জন্য হোটেল বা টোটো তে ভ্রমণে দরকষাকষি তো অপরদিকে এই নিঃশুল্ক প্রেমপূর্ণ ভান্ডারা অবশ্যই দৃষ্টান্ত৷


আজকের মথুরা বৃন্দাবনের শ্রীকৃপালু মহারাজের ‘প্রেম মন্দির’ এক সুন্দর সাজানো ভক্তদের মুগ্ধ করে৷ সেখানেই এক হিন্দিভাষী মহিলাকে বলতে শোনা যায় মন তো ভর গ্যায়া পর প্যার নেহি ঠহড়তা৷ ৩০০ মিটার দূরেই ইসকন মন্দির৷ সেখানেও অধিকাংশ ভেতরে ও বাইরে হয়ে চলেছে বিদেশি ইসকন ভক্তদের কৃষ্ণ নাম কীর্তন৷ সব মিলিয়ে মন্দিরে মন্দিরে আরতি, রঙ খেলা, ফুল হোলি, লাঠি মার, লাড্ডু হোলি, হুরাঙ্গা হোলি, আবার সুন্দর সুন্দর ভক্তি গানে বিভোর মথুরা-বৃন্দাবন যেন রাধা-কৃষ্ণময় হয়ে উঠেছে, বিশ্ব পর্যায়ে এ যেন অভিভূত দৃশ্য৷ তাই অবশ্যই বলতে হয় হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে শহর যখন রঙিন তার মধ্যেও কৃষ্ণ জন্মভূমির মঞ্চে লেখা ‘স্বচ্ছতাঃ সর্বধর্মং, স্বচ্ছতাঃ সর্বরোগহরম, স্বচ্ছতাঃ সর্বসুখদনং স্বচ্ছতাঃ সর্বলক্ষনম্৷’