মাল্যদান

সুদর্শন মুখোটী

গীতাঞ্জলি রায় সকাল থেকে ব্যস্ত৷ আজ রবীন্দ্র জয়ন্তী৷ দু-মাস ধরে কিশোর কিশোরীরা আন্তরিক চেষ্টায় রিহার্সাল দিয়ে আসছে৷ আজ সেই দিন, পঁচিশে বৈশাখ৷ শান্তিনিকেতনী ভাবধারায় সেজে উঠছে মঞ্চ৷

গীতাঞ্জলি রায় শিক্ষালাভ করেছে শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ পাড়ার ছোটো কিশোর কিশোরীদের নিয়ে গডে় তুলেছে ‘কিশোর মানস’৷ ‘কিশোর মানস’ এক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান৷ রবীন্দ্র সংগীত, আবৃত্তি, রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন করবে ‘কিশোর মানস’ এর সদস্যরা৷ অথভিনীত হবে ‘ডাকঘর’ নাটকের নির্বাচিত অংশ৷ গীতাঞ্জলি রায়ের তীক্ষ্ণ নজরদারি আর ছেলে মেয়েদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে চলছিল দৈনিক রিহার্সাল৷ অনুষ্ঠানে প্রতিটি প্রদর্শন নিখুঁত হতে হবে৷ অংশ গ্রহণকারী কিশোর কিশোরীরা প্রাণ ঢেলে দিয়েছে অনুশীলনে৷


গীতাঞ্জলি রায় নিশ্চিত, অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠবে৷ রবীন্দ্র সংস্কৃতি প্রশিক্ষণে ব্যস্ত গীতাঞ্জলি রায় মনে মনে ভাবে, ভাগ্য তাকে উদার হস্তে সহযোগিতা করেছে৷ ‘কিশোর মানস’ এ বহু সবুজ প্রতিভার সমাবেশ ঘটেছে৷ এদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একদিন এরা বাংলা তথা ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পদ হয়ে উঠবে৷

ভাবনার আকাশে একটু যেন চিন্তা মেঘের আনাগোনা৷ গত বছরের মতো যদি সন্ধ্যায় হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি হয় ! আবহাওয়া দপ্তর আশ্বস্ত করেছে, আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টায় ঝড় বাদলের সম্ভাবনা নেই৷ মাঝে মাঝে মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ কেন কালবৈশাখীর কালে জন্মালেন৷ সুরক্ষার ঘেরাটোপে প্রেক্ষাগৃহ তো তাদের নয়৷ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় পাড়ার মাঠে তৈরি হয়েছে খোলা মঞ্চ৷

‘কিশোর মানস’ এর সদস্যরা খুবই আন্তরিক৷ আজ সকালে তারা এক ডালি সাদা রজনীগন্ধা ফুল এনে দিয়েছে তাদের দিদিমনিকে৷ গীতাঞ্জলি রায় সারা দুপুর সেই ফুলের মালা গেঁথেছে৷ ‘কিশোর মানস’ এর পক্ষ থেকে রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা পরাবে৷ রবিঠাকুরের ছবি রজনীগন্ধার মালা ছাড়া কি মানায় !
ফুলদল গাঁথার শেষে সুতোর দুই প্রান্ত বাঁধতেই হয়ে গেলো বেশ বড়সড় রজনীগন্ধার একটা মালা৷ ভালোই হয়েছে৷ বিশ্ব কবির ছবিটায় মালাটা দু-ফেলতা করে পরানো যাবে৷ গোডে় মালার মতো মোটা দেখাবে৷ সুন্দর মানাবে৷

বিকেল গডি়য়ে চলেছে , এবার মঞ্চে যেতে হবে৷ তদারক করতে হবে মঞ্চের সাজসজ্জা, অনুষ্ঠানের কুশীলবদের সাজগোজ,সব ঠিকঠাক হলো কিনা৷ রবীন্দ্রনাথের ছবিটাও সাদা কাপড় মোড়া কাঠের চেয়ারে সসম্মানে বসাতে হবে মঞ্চের ডানদিকে৷

সাজিতে নিজের হাতে গাঁথা মালা সাজিয়ে, ঘরের কোণে সযত্নে আগের রাতে এনে রাখা ছবিটা তুলতে গিয়ে গীতাঞ্জলি রায় তো অবাক! চোখে পড়ল, ছবিটার পাশে একই মাপের হাতে আঁকা,কার্ডবোর্ডে সাটা আর একটি রবিঠাকুরের ছবি৷ পেছন থেকে ক্ষণিকা বলে উঠল- মা, ছবিটা আমি এঁকেছি৷ কেমন হয়েছে ?

গীতাঞ্জলি রায় হতবাক, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া তার মেয়ে, ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটা দেখে দেখে এত সুন্দর ছবি এঁকেছে ! ওকেও এবার ‘কিশোর মানস’ এর সদস্য করে নিতে হবে৷
গীতাঞ্জলি রায় একটু থামল৷ মালাটা নিপুণ হাতে দু- ভাগ করল৷ মনে মনে বলল, একটা মালা শোভা পাবে মঞ্চের কবিঠাকুরের ছবিতে৷ অন্যটায় সেজে উঠবে ক্ষণিকার আঁকা ঘরের রবীন্দ্রনাথের ছবি৷