একুশের গান
রেজাউদ্দিন স্টালিন
একুশ আমার মাতৃভাষা একুশ আমার বাংলা,
একুশ আমার স্বাধীনতার অসীম কোনো জাংলা।
যে পথ দিয়ে ভাইয়েরা যায় বোনের দুখী কান্না,
সে পথ দিয়ে জুলাই মাসে আবার আসে বন্যা।
বর্ণমালার ভেতর থেকে গড়িয়ে পড়ে রক্ত,
বাংলাভাষার ইতিহাসটা বলাও কেমন শক্ত।
হাজার বছর পার হয়ে যায় অধিকারের জন্য,
আত্মত্যাগে অমর হবো জীবন হবে ধন্য।
নদীর স্রোতে পাখির ডাকে বাংলা ভাষার মুক্তি,
আবেগ আছে ভালোবাসা মানবে কেনো যুক্তি?
এদেশ আমার পূর্বপুরুষ হৃদয় ধোয়া অস্থি,
এই ভাষাতেই কথা বলে পরম প্রিয় স্বস্তি।
ভাষার সুরে
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়
কোথায় আছিস কদ্দূরে
গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়েছিস?
নাকি আছিস রোদ্দুরে!
আসছি অনেক পথ ঘুরে,
যাবো বললেই হয় না সেটা
পথ কেটে দেয় শত্তুরে!
এক আকাশে সূর্য ও চাঁদ
ছড়ালেও তাদের আলো,
ভাগ করাটা ভূতুড়ে!
অপেক্ষা কর, সুর বেঁধেছি
একই ভাষায় গাইব যখন
থাকবে নানান মত দূরে।
রেলগাড়ি পিসির বাড়ি
জগদীশ মণ্ডল
ছুটে চলেছে রেলগাড়ি
যাচ্ছি আমি পিসির বাড়ি,
হেলে দুলে দিচ্ছে পাড়ি
ছুটছে সাথে ঘর ও বাড়ি।
হকারদের খুব কিচিমিচি
ঝগড়া করে মিছিমিছি,
কারো হাতে বাদাম ভাজা
লেবু আপেল খাস্তা গজা।
স্টেশনে যেই ঢুকছে গাড়ি
নামতে চায় কেউ তাড়াতাড়ি,
মায়ের কোলে বাচ্চা কাঁদে
মা বলে নাম হাসনাবাদে।
হাসনাবাদে থামলে গাড়ি
পৌঁছে গেলাম রূপমারি।
পিসির আছে কেল্টু ডলি
রেলের কত গল্প বলি,
গল্প শুনে আমার খাবার
কখন যেন করলো সাবাড়।
কবির কথা
দেবাশীষ চক্রবর্তী
আমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ লম্বা সাদা দাড়ি,
মাঝে মাঝে মধ্যরাতে আসেন আমার বাড়ি।
বলেন তিনি, অঙ্ক করায় ভুগিস না ভয়-জ্বরে,
যোগ-বিয়োগে, গুণে ভাগে, ভুল তো সবাই করে।
ভয় কাটিয়ে মনটা দিলে দেখবি সবই সোজা,
সব বিষয়ই লাগবে ভালো, লাগবে না আর বোঝা।
সবসময়ে পড়বি কেন? খেলবি নিয়ম করে;
যা করে তুই আনন্দ পাস করবি তা প্রাণ ভরে।
খোকার শেখা
সৌমিত্র ঘোষ
শরৎ আকাশ উঠলো সেজে
ঝলমলে রোদ মেখে
খোকার চোখে ঘুম ছুটেছে
শিউলি শিশির দেখে।
নদীর পাড়ে কাশের দোলা
বাঁধন-হারা মাঠ
শাপলা শালুক রঙিন ফুলে
সাজায় পুকুর ঘাট।
খোকা আঁকে দূরের ছবি
কালি-কলম রেখে,
আকাশ নদী পাহাড় মাঠে
বিচিত্র পাঠ শেখে।
খোকনের অভিযান
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
খুলতে খোঁটা জুড়লো ছোটা
টগবগিয়ে কাঠের ঘোড়া
পিঠে বসে খোকন হাসে
হাতে নিয়ে টিনের ছোরা!
শুনেই মামা বলে— থামা
কাঁপছে ভয়ে বুকটা মোর
ছিটকে পড়ে ভাঙবে ওরে
হাত-পা কিংবা মাথাটা তোর!
খোকন সোনা তাও শোনে না
বলে— মামা, পেয়ো না ভয়
ছুটিয়ে ঘোড়া যাবো মোরা
সাত সমুদ্দুর করতে জয়!
হঠাৎ হুলো ছুটে এলো
মারলো ঘোড়ার ঠ্যাঙে ল্যাং
খোকন পড়ে কান্না ধরে
হাত পা ছড়িয়ে চিৎপটাং!
শব্দ
প্রসেনজিৎ দত্ত
ফুলির হাতে ফুলঝুরি,
চিকির হাতে চরকা।
আতস বাজির ছড়াছড়ি,
ফাটে কালি পটকা।
গন্ধ ছোটে দিকবিদিক,
পোকারা খুব জব্দ।
ধোঁয়ায় ঢাকে রাস্তাঘাট,
উৎকট সব শব্দ।