অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
‘আপনার কী মনে হয় মহারাজ?’
—‘দ্যাখো অভয়, বিজ্ঞান পায়ে পায়ে আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই পৃথিবীর গন্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছেছে সুদূর নক্ষত্রলোক পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেও কি মানুষের ধর্মভীরুতা এতটুকু কমতে দেখেছ। মানুষের এই ধর্মের প্রতি অন্ধবিশ্বাস একটুও কমেনি, বরং বলতে পারো তা আগের চেয়ে আরো দ্বিগুণ হয়েছে। বিজ্ঞান যত এগিয়েছে পাশাপাশি ধর্মের কুসংস্কার আরো জাঁকিয়ে বসেছে সমাজের মনের মধ্যে। আর সেই অন্ধবিশ্বাসকে সামনে রেখেই আমরা বেঁচে আছি, আমাদের এই আশ্রম বেঁচে আছে।’ মৃদু হাসি ফুটে উঠল মহারাজের গুম্ফ সজ্জিত ঠোঁটের কোণে।
—‘আপনি একথা বলেছেন মহারাজ! এতো কিছু, এই দীর্ঘ দিনের বিশ্বাস সবটাই কি ফাঁকি তাহলে…?’ নবীন সন্ন্যাসী অভয়ের চোখে মুখের উদ্বেগ দেখে মহারাজ এইবার শান্ত স্বরে বললেন, —‘সবটা যে ফাঁকি, আমি তো তা বলছি না অভয়। আমি বলতে চাই… দ্যাখো আমরা হলাম ফুটো কলসির মতো, যার গায়ে অজস্র ছিদ্র। জল ধরে রাখতে পারি না। তাই মনের ফাঁক বোজাতে কিছুটা ফাঁকি দিতেই হয়। না হলে জল ধরে রাখতে পারব না যে কিছুতেই।’ মহারাজ থামলেন।
অভয় অপেক্ষা করছে, মহারাজের কাছ থেকে আরো কিছু শোনার জন্য। ওর আন্দাজ ঠিক, মহারাজ আবার বলতে শুরু করলেন মনের মধ্যে কথাগুলো সাজিয়ে নিয়ে, —‘মানুষ যে আসলকে ভুলে নকলের পেছনে ছুটতে বেশি ভালোবাসে অভয়। তারা অনন্ত সত্যকে সহজে নিতে পারে না, তাই তো তাদের জন্য ছলনার প্রয়োজন হয় মাঝে মাঝে। একটা শিশু যেমন জাদুকরের ইন্দ্রজালকে সত্যি বলে বিশ্বাস করে, এও ঠিক তেমনি। ইন্দ্রজালের দ্বারা টবের গাছে মুহূর্তে ফুল ফুটতে দেখে শিশু বিস্ময়ে হতবাক হয়। অথচ প্রতিনিয়ত চারিপাশে গাছে গাছে এতো যে ফুল রোজ ফোটে তা দেখে কারো মনে কোনো বিস্ময় জাগে না। অনুভূতি আসে না তা দেখে। আসলে ওই নির্বোধ শিশুর মতোই সকলে ভেলকিতে বিশ্বাসী।’ একটু থেমে পুনরায় বললেন, —‘আর কোনো সংশয় আছে তোমার অভয়? থাকলে বলো, সংকোচ করো না।’
—‘না মহারাজ।’ উত্তর দিল অভয়।
এমন সময় একজন কম বয়সী ছেলে মহারাজের ঘরের এসে দাঁড়াল। —‘উনি এসেছেন মহারাজ। পাঠিয়ে দেবো?’
—‘হ্যাঁ আসতে বলো।’
তাঁর আদেশ পেয়ে ছেলেটি চলে গেলে মহারাজ সামনের আসনে বসা অভয়কে বললেন, —‘সমস্ত প্রস্তুত আছে তো অভয়?’
—‘হ্যাঁ মহারাজ। আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না, যজ্ঞের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
—‘জয়, মহারাজের জয়!’ ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত লম্বা চওড়া যে মাঝবয়সী ভদ্রলোকটি ঘরে এসেই মহারাজকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন, তাঁর জন্যই মূলত আজকের এই যজ্ঞের আয়োজন। শুধু যে তাঁর জন্য, সে কথা বললে ভুল হবে। আজকের এই যজ্ঞ দেশের দশের, সর্বোপরি জগতের মঙ্গলের জন্য। অন্তত এরা সকলে তাই মনে করেন।
—‘জয়তু…’ দক্ষিণ হাত তুলে তাকে আশীর্বাদ করলেন মহারাজ। ভদ্রলোকটি উঠে দুহাত জোড় করে বসলেন মহারাজের সামনে মার্বেলের মেঝের উপর পেতে রাখা কম্বলে। বুকের কাছে জোড় হাত করা দশ আঙুলে পরা সোনার আংটি গুলো ঝলমল করে উঠছে মাঝে মাঝেই প্রদীপের আলোর স্পর্শে। —‘কখন শুরু হবে পুজো মহারাজ?’
—‘তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম রায়বাবু। তুমি এলে, এবার শুরু করব…’
—‘সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে তো মহারাজ?’ রায়বাবুর গলায় অবিশ্বাসের সুর লক্ষ করলেন মহারাজ।
—‘না মনে, সকলে যা যা বলছে। পেপারে, টিভিতে যা যা দেখাচ্ছে শুনেছেন নিশ্চয়ই। বিজ্ঞানীদের স্পষ্ট মত, এবারে আর কোনো ভুল চুক নেই।’
—‘কী বলছে তোমার বিজ্ঞানী?’ রায়বাবুর চোখের উপর চোখ রেখে বললেন মহারাজ।
—‘এখানকার কথা নয় মহারাজ। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন। এবারে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে যে গ্রহাণু, তার আকার পৃথিবীর আকারের তিন গুণ নাকি। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে আমাদের এই পুরো পৃথিবী।’
মহারাজের মুখে আগের সেই মৃদু মৃদু হাসি বিদ্যমান। রায়বাবু বলে চলেছেন, ‘এদিকে সামনে মাসে ইলেকশন। যা যা প্রস্তুতি নিয়েছি তাতে ভোটের ময়দানে আমার সঙ্গে লড়াইয়ে কেউ দাঁড়াতে পারবে না এইবার। আমার ছেলেরা দিন রাত এক করে খেটে চলেছে কালঘাম ফেলে। বলতে গেলে ভোটে আমার জয় একেবারে নিশ্চিত। আর তারপরই মন্ত্রীর পদ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আর এমন একটা সময়ে এই সমস্ত খবর শুনে কার মাথার ঠিক থাকে বলুন আপনি? বিজ্ঞানীদের অনুমান পরের সপ্তাহেই নাকি পৃথিবীর সেই চরম মুহুর্তটা আসতে চলেছে! আর সেই বিশাল আকারের গ্রহাণুর গতি ঘণ্টায় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি! এর আগেও বহুবার এমন হয়েছে। মহাকাশের বড় ছোট পাথরের মতো অনেক গ্রহাণু সবসময় ছুটে চলেছে নানা দিকে। পৃথিবীর দিকেও এসেছে বহুবার, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রতিবারই অল্পের জন্য বেঁচে গেছি নাকি আমরা। কিন্তু এবারে সেরকম আর কোনো আশাই দেখতে পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা!’
—‘তার জন্যই তো আমার আজকের এতো আয়োজন করা রায়বাবু।’ মহারাজের মুখ দেখে মনের ভাব বোঝা গেল না সঠিক ভাবে।
—‘সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে তো মহারাজ?’ আগের মতোই আবার অবিশ্বাসের সুর রায়বাবুর গলায়। —‘হাতের কাছে এমন একটা মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ, অন্তত পাঁচটা বছরের ব্যবস্থা করে দিন মহারাজ। পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রিত্বের সিংহাসনটা ভোগ করি, তারপরে যা ধ্বংস হওয়ার হোক গে। আমার কিছু আসে যাবে না তখন আর।’
—‘কথায় বলে মানুষের আশা। মাত্র পাঁচটা বছরে মিটবে তো রায়বাবু? তার উপর আবার রাজসিংহাসন।’ মহারাজের ঠোঁটে আবারও সেই মৃদু হাসি দেখা দিলো অভয়ের কথায়। রায়বাবু অভয়ের এমন বিদ্রুপ সূচক প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলেন না।
ঘরটা কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল। একটা সুন্দর ধূপ, ধুনো আর ফুলের মিশ্রণের গন্ধ সারা আশ্রম জুড়ে। এ ঘরের বাতাসে সেই সুগন্ধটা আরো তীব্র। দেওয়াল জুড়ে নানান সাধু সন্তদের বড় বড় অয়েল পেন্টিং ঘরটাকে আরো বেশি ঐশ্বরিক করে রেখেছে সব সময়।
—‘মহারাজ, আমি মন্ত্রী হলে, এই আশ্রমের সব দায়িত্ব আমার। আপনাদের সেবা করার এই সুযোগটা আমাকে করে দিন মহারাজ…’ হাতজোড় করে বললেন রায়বাবু।
—‘সেবাই পরম ধর্ম! ভুলে যেও না যেন রায়বাবু। আজকের যজ্ঞের পর পৃথিবী যদি বেঁচে যায়, তাহলে মনে রেখো তোমার সেবার কথাটা।’
—‘এসব কী বলছেন মহারাজ আপনি…! আপনি যজ্ঞ করে এই ঝামেলাটা মিটিয়ে দিন, আমি মন্ত্রী হয়ে আপনার সব ঝামেলা মিটিয়ে দেবো। আমি আর এ চাপ নিতে পারছি না মহারাজ।’ বোঝা যায় অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন রায়বাবু।
—‘শোনো… প্রকৃতির নিয়মকে পাল্টে ফেলার ক্ষমতা আমার নেই। আমি আমার সামান্য শক্তি দিয়ে শুধু চেষ্টা করব পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা সেই বিশালাকার গ্রহাণুর গতিরোধ করার। এরপর সবই তাঁর ইচ্ছে। তিনি যদি চান জীব জগৎ রক্ষা পাবে। আর যদি না চান, তাহলে প্রলয় অবশ্যম্ভাবী! অভয় যজ্ঞের আয়োজন করো।’ অভয় উঠে গেল যজ্ঞের আয়োজন করতে। —‘চলো রায়বাবু, যাওয়া যাক যজ্ঞের স্থানে।’ রায়বাবুকে উদ্দেশ করে বললেন মহারাজ।
—‘হ্যাঁ, চলুন তবে…’
২
আশ্রম জুড়ে বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে আজ। শুধু মহারাজের ভক্ত নয়, সাধারণ অনেক মানুষও আজ এসেছে এই ঐতিহাসিক ক্ষণের সাক্ষী হতে। টিভি, নিউজ পেপারের সাংবাদিকরা আশ্রমের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে খরব করছেন নিজেদের সুবিধামতো। পুলিশ প্রশাসনও প্রস্তুত রয়েছে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর সমস্যা মোকাবিলায়। এতো বড় একটা আয়োজন, এতো লোকের জমায়েত, তার উপর আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত রয়েছেন আজ মহারাজের আশ্রমে। পুলিশ প্রশাসনকে তো তৎপর হতেই হতো। যেন একটা রাজসূয় যজ্ঞ চলছে পৃথিবীকে মহাপ্রলয়ের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
সারাদিনব্যাপী মন্ত্র উচ্চারণের দ্বারা অনেক কাষ্ঠদণ্ড হোমের আগুনে আহুতি দিয়ে, শেষে এক ঘটি দুধ ঢেলে যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন মহারাজ নিজের হাতে। যজ্ঞমঞ্চের চাতালে বাইরে বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে। সেই ব্যারিকেডের পেছনে বসে থাকা সকল ভক্ত একবার জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল, —‘জয় মহারাজের জয়!’ মহিলারা দিল উলু ধ্বনি।
—‘যজ্ঞ কি তবে সম্পন্ন হল মহারাজ?’ দূরে বসে থাকা রায়বাবু জিজ্ঞেস করলেন উৎসুক হয়ে। দূরে বসে থাকলেও যজ্ঞের তাতে তাঁর গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে। যেন এবার পালাতে পারলে বাঁচেন উনি। কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই। শুধু তো মহারাজ আর যজ্ঞ নয়। তাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় হাজার কয়েক মানুষের আঙুল। এই রায়বাবু অতো কাঁচা খেলোয়াড় নয় মহারাজ। মনে মনে হসলেন তিনি। —‘যজ্ঞ কি সম্পন্ন?’ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন রায়বাবু।
—‘আর একটা মাত্র কাজ বাকি আছে।’ এই বলে মহারাজ ডাক দিলেন তাঁর অনুচরটিকে —‘অভয়…’
অভয় নামের নবীন সন্ন্যাসীটি মাটির সরায় করে একটা মাটির গোলা এনে রেখে দিল মহারাজের আসনের কাছে। বাকি সকল ভক্তদের মতো রায়বাবুরও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সকলের সেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মহারাজ হাসলেন তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে। তারপরে দুহাতে মাটির গোলা সমেত সরাটা তুলে আনলেন নিজের বুকের কাছে। —‘কী দেখছেন আপনারা?’
—‘মাটির পিণ্ড…’ উত্তর এলো মহারাজের প্রশ্নের।
—‘আপনাদের চর্মচক্ষে এটা মাটির পিণ্ড। কিন্তু আদতে তা নয়। এটাই হল পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা সেই বিশালাকার গ্রহাণু।’
ভক্তদের মাঝে চাপা স্বরের গুঞ্জন উঠল মহারাজের কথা শুনে। রায়বাবুও সোজা হয়ে বসলেন এইবার। মুহূর্তের মধ্যে সকল সাংবাদিকদের ক্যামেরার ল্যান্স গিয়ে আটকে গেল মহারাজের হাতে ধরা মাটির গোলাটার দিকে।
—‘এইবার সেই আসল মুহূর্ত।’ মাটির সরাটা পাশে নামিয়ে রাখলেন মহারাজ। মাটির গোলাটা দু’হাতে করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন মহারাজ একবার। তারপর নিভে যাওয়া যজ্ঞের উপর বাড়িয়ে ধরলেন মাটির গোলাটা। সকলকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে সেই দিকে। মহারাজ মাটির গোলাটা দু’হাতে করে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিতে লাগলেন যজ্ঞকুণ্ডের উপর।
—‘এতোক্ষণে যজ্ঞ সুসম্পন্ন হলো।’ মহারাজের সারা মুখে পরিতৃপ্তি হাসি।
আবার মহারাজের জয়ধ্বনি উঠল চারিদিক থেকে— ‘জয়, মহারাজের জয়… জয়, মহারাজের জয়…’
৩
সন্ধ্যার পর আশ্রম ফাঁকা হলে একটা বড় কাঁসার থালায় রাতের খাবার সাজিয়ে নিয়ে মহারাজের ঘরে প্রবেশ করল অভয় নামের নবীন সন্ন্যাসীটি। অন্ধকার ঘরের মাঝে একটা শুধু পেতলের প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপের আলোয় দেখা যাচ্ছে পদ্মাসনে বসে থাকা মহারাজকে।
—‘আপনার রাতের খাবার। আজ সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ুন আজ।’
—‘সকলে চলে গেছে অভয়?’
—‘হ্যাঁ মহারাজ…’
—‘কিছু বলবে?’ অন্যদিন খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে অভয় চলে যায়, আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে প্রশ্ন করল মহারাজ।
—‘এই যজ্ঞের ফল কী মহারাজ?’
মহারাজ দৃঢ় স্বরে বললেন— ‘পৃথিবী যে এতো তাড়াতাড়ি ধ্বংস হবে না, তা আমি নিশ্চিত। আর রায়বাবু যে সামনের ইলেকশনে জিতে মন্ত্রী হবে, তাতেও আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
—‘কিন্তু এতে আপনার লাভ?’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মহারাজ বললেন— ‘বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী সামনের সপ্তাহে কোনো এক গ্রহাণুর ধাক্কায় পৃথিবী ধ্বংস না হলে জেনো, ভগবানের পরের স্থানটাই হবে আমার! কারণ সকলের সামনে ওই শক্তিশালী গ্রহাণুকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি আমি নিজের এই দুহাতে হাতে।’
—‘কিন্তু, সত্যিই বিজ্ঞানীদের বলা কথা অনুযায়ী প্রতিবারের মতো কোনো দিকে না বেঁকে ওই শক্তিশালী গ্রহাণুর দ্বারা পৃথিবী যদি ধ্বংস হয়! তখন?’ অচেনা ভয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠে অভয়ের সারা শরীর।
সারা ঘর আবার নিস্তব্ধ হয়ে গেল মুহূর্তে। চারিধারের নিস্তব্ধ অন্ধকারের মাঝে শুধু দুলে দুলে জ্বলছে প্রদীপটা। যে কোনো সময় নিভে যেতে পারে। মহারাজ প্রদীপের আলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, —‘পৃথিবী যদি ধ্বংস হয়! তাই ভাবছো তো? হা হা হা হা…’
মহারাজের হাসি তাঁর ঘর ছেড়ে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে লাগল সারা আশ্রমে। আর নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে অভয়ের তখন শুধু একটা কথাই বারবার মনে হতে লাগল, যদি কোনোদিন এই পৃথিবী সত্যি ধ্বংস হয়, তাহলে তা অন্য কিছুর কারণে নয়, হবে এই মহারাজ আর ওই রায়বাবুদের মতো মানুষগুলোর জন্য।