হ্যাকারের চোখ

বাসবদত্তা কদম

বিয়ের পর শ্রমি নিজের শহর কলকাতা ছেড়ে এসেছে বম্বেতে৷ একটা নতুন চাকরিও জোগাড় হয়ে গেছে৷ অফিস বাড়ি— বাড়ি অফিস জীবন৷ বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক৷ বর তীর্থ আর ওর দু’জনেরই দুজনকে আবিষ্কার করার ব্যাপারটা কমে এসেছে৷ ঠিক যেমনটা হয় বিয়ের দু-তিন বছর পর৷ রাত এগারোটায় আলো বন্ধ৷ সপ্তাহে দুই কি তিনদিন ঝটপট খানিকটা শরীরী প্রেম; কারণ শ্রমির অফিস সকাল নটায়, তীর্থরও তাই৷ পার্থক্য একটাই ওদের ফ্ল্যাট চান্দিভেলি এলাকা থেকে শ্রমির অফিস আন্ধেরি সাকিনাকা যতটা দূর, তীর্থের অফিস বিকেসির দূরত্ব তার তিনগুণ৷ তীর্থ ঠিক সাড়ে সাতটার বাস ধরে চান্দিভেলি স্ট্যান্ড থেকে৷

নতুন শহরের নতুন কলিগদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে৷ অফিসের পর তাদের সঙ্গেই বম্বের এ মার্কেট সে মার্কেট ঘোরে মাঝে মধ্যে৷ কিন্ত্ত দুটো শহরের বন্ধুত্ব জমে ওঠা অতটাও সোজা নয় এটা সে বুঝতে পারে৷ তাই বাড়ি ফিরে পুরনো বন্ধু গল্পের বইয়ের সঙ্গেই বসে৷ তাতে স্বস্তিও পায় খানিক বেশি৷ গল্পগুলো ওর চেনা শহরের গলিঘুঁজির কথা বলে৷ বাবা কলকাতা থেকে বইয়ের সাপ্লাই দেয়৷ শর্ত একটাই— বই পড়ে বাবাকে বলতে হবে গল্পটা৷ অথবা একটা চিঠি লিখতে হবে৷ ইমেইল নয়৷ শ্রমি হাসে৷ বাবার কাছে এখনো সে ছোটই রয়ে গেল৷


তীর্থ বড্ড রাত করে ফিরতে৷ টুকটাক নতুন খাবার বানিয়ে তীর্থর জন্য অপেক্ষা করে৷ নীচের সবকটা নেমপ্লেট পাতি পাতি করে খুঁজেও একটা বাঙালি নাম পায় না৷ বাঙলা বলার জন্য এইভাবে হেদিয়ে মরবে একদিন, এটা ও জানতো না৷

অফিসে একজন বন্ধু হয়েছে মমতা কুলকার্ণি৷ বকবক করছিল তার সঙ্গে৷ সবই বলে৷ শুনে সে বলে, সোশ্যাল মিডিয়ার একটা সাইটের খোঁজ দিচ্ছি, এটার মাধ্যমে পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে যাবে৷ বাড়িতে ফিরেই একটা একাউন্ট খুলে ফেললো৷ ঠিক তিন দিনের মাথায় তিনজন স্কুলের বন্ধু ওকে মেসেজ করলো৷ বন্ধুদের খুঁজে পেতেই, ফোন নম্বর চালাচালি৷ আড্ডায় আর পিএনপিসিতে সন্ধেগুলো আগের মতো হয়ে উঠলো৷ ওদের থেকেই জানতে পারলো, ওর দুই ক্লাসমেট রিয়া আর পারমিতা দু’জনেই এখন বম্বেতে৷ খুশির চোটে অফিসের মমতাকে ওর বার্থডেতে একটা দারুণ কাপ গিফট করে ফেললো সে৷

আন্ধেরির চান্দিভেলি থেকে পারমিতার বাড়ি মুলুন্ড বা রিয়ার বাড়ি দাদার কোনোটাই খুব দূর না৷ যাওয়া আসা, আড্ডা লেগেই থাকে৷ তীর্থ সোস্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলবে না কিছুতেই৷ ওর সোস্যাল মিডিয়ায় ভার্চুয়াল বন্ধু অজস্র৷ রিয়া আর পারমিতার বর সুজিত, অমিতাভ দুজনেই দারুণ স্মার্ট৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাক্টিভ৷ পারমিতার বর অমিতাভ আর তীর্থ এক কলেজের৷ তবে দু’জনের কেউই কাউকে খুব একটা পছন্দ করে বলে মনে হয় না ওর৷

তীর্থর জন্মদিন সামনে, সে আবার সারপ্রাইজ গিফট পছন্দ করে না৷ অনেক ভেবে মমতা কুলকার্ণির সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে গেল৷ নিজের জন্যেও একটা নিল৷ জন্মদিনের দিন তীর্থর ফেভারিট আলু পরাঠা বানিয়েছিল, সঙ্গে দিল ফোনটা৷ তীর্থ যেমন; তার রিঅ্যাকশনও তেমনই, ফোনটা হাতে নিয়ে একটু মুচকি হাসল৷ ব্যাস৷

পারমিতা শুনেই বললো— বেকার এতগুলো খরচ করলি৷ তোর বরটা নামে তীর্থ, স্বভাবটাও কিরকম তীর্থস্থানের মত ম্যাদা ম্যাদা৷ হ্যাঁ রে রাতে তোদের কিছু হয় তো! নাকি তুই… হি হি হি৷ শ্রমি হাসে কিন্ত্ত খুব রাগ হয়, সত্যি তীর্থটা কি! সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই৷ সেভাবে জমিয়ে আড্ডাও দিতে পারে না৷ এদিকে সে আই টি ইঞ্জিনিয়ার৷ প্রজেক্ট হেড৷ কী যে… প্রজেক্ট হেড করে কে জানে৷ দেখে কে বলবে ওর বয়স পঁয়ত্রিশ৷ কথা শুনলে পঞ্চান্ন লজ্জা পাবে৷ তীর্থর মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করার থেকে মলে গিয়ে শপিং অনেক বেশি ভালো কাজ৷ পয়সার বদলে খানিক হ্যাপি হরমোন অন্তত লাভ হয়৷

ওদের চ্যাট গ্রুপে একটা কথাও বলে না কোনোদিন৷ যদিও তাতে শ্রমির কিছু আসে যায় না৷ গ্রুপটা বেশ বড় হয়ে গেছে৷ কলেজের শম্পা, অয়ন, শুভ্র সবাই এখন এই শহরে৷ আড্ডা, গেট টুগেদার ভালোই চলছে৷ বম্বে শহরে মাঝরাতও সন্ধে৷ পার্টিতে তীর্থ না গেলে সে একাই যায়৷ ফেরার সময় মেরু ক্যাব পেয়ে যায়৷ কোনো কোনোদিন পারমিতা আর অমিতাভদা ওকে ড্রপ করে দেয়৷

বাবার পাঠানো নতুন বইগুলো পড়া হয়নি৷ বুঝতে পারে বাবা কষ্ট পায় কিন্ত্ত আড্ডা আর সোশ্যাল মিডিয়ার টান থেকে কিছুতেই বেরোতে পারে না৷ ফোনের পিং শব্দ শুনলেই হাত চলে যায়৷ তীর্থর টু্যরের সময়গুলো আগে এত বোর লাগতো, এখন গ্রুপে চ্যাট করে কখন রাত বারোটা বেজে যায় টের পায় না৷
একদিন পারমিতার মেসেজ আসে পার্সোনালে৷

—জানিস অমিতাভ আজকাল কী করছে বুঝতে পারছি না৷ একটার পর একটা মেয়ের সঙ্গে চ্যাট করে সোস্যাল মিডিয়ায়; তারপর অফিস টু্যরের নাম করে মেয়েগুলোকে নিয়ে ঘুরতে যায়৷
শ্রমি বোঝায়— সন্দেহ করিস না৷ অমিতাভদাকে এরকম কিছু মনে হয়নি আমার কখনো৷ স্মার্ট ড্যাশিং৷ লেডি কিলার টাইপ৷ ব্যাস৷
—নিকুচি করেছে তোর ড্যাশিংয়ের৷ তীর্থদার মতো ভালো বর পেয়েছিস তো তাই বুঝতে পারছিস না৷
ভুতের মুখে রামনামের মতো লাগে পারমিতার কথাগুলো৷
তীর্থকে কিছু বলতে পারে না ও৷
অমিতাভর অফিস তীর্থদের অফিস পাশাপাশি বিল্ডিঙে৷

এর আগে তীর্থই একদিন ওকে বলেছিল, অমিতাভ আমাকে কীরকম এভয়ড করলো মনে হলো৷ রাস্তায় দেখা, সঙ্গে একজন মহিলা৷ হয়তো ওর কলিগ৷ কিন্ত্ত এড়িয়ে যাবার কারণটা বুঝতে পারলাম না৷
শ্রমি পাত্তা দেয় নি সেদিন তীর্থর এই কথা৷ ও জানে তীর্থর জ্যাঠামশাই মার্কা স্বভাবের জন্যেই অমিতাভদা ওকে কিছুটা এড়িয়ে চলে৷ শ্রমিকে একদিন বলে— লেডি চার্মিং, হুঁকোমুখো হ্যাংলাকে কোথা থেকে জোগাড় করেছ?
গত কয়েক মাস ধরেই পারমিতার অমিতাভকে নিয়ে বাড়াবাড়িটা লেগেই আছে৷ বিরক্ত লাগছিল ওর৷
এর মধ্যে তীর্থ একদিন বললো— সোস্যাল মিডিয়ায় যাতায়াতটা একটু কম করো৷
ফুঁসে উঠল শ্রমি, কেন?
—প্রচণ্ড হ্যাকিং হচ্ছে৷ তাই!

সে ভাবে, দু একটা ভারচুয়াল বন্ধুর সঙ্গে এক আধটা পার্টিতে গেছে তাতেই কি তীর্থর এই সব কায়দার কথা! তীর্থ মারাত্মক পসেসিভ৷ যদিও দেখায় যেন সে ভীষণ মুক্তমনা বলে৷
মনখারাপ হলেও আজকাল পাত্তা দেয় না৷ ফুঃ করে উড়িয়ে দেয়৷ তীর্থর এই ম্যাদামারা মাস্টারমশাই টাইপ স্বভাবটা একেক সময় জাস্ট অসহ্য লাগে৷ বাবা যে এ ছেলের মধ্যে কী দেখেছিল কে জানে! সাত তাড়াতাড়ি বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিল৷

খানিক একতরফা ঝগড়া করলো৷ তারপরেই তীর্থ টু্যরে৷ মনটা খারাপ৷ হঠাৎ একদিন রাতে মাথার পাশে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে৷ দেয়াল ঘড়িতে দেখে রাত দুটো৷ অচেনা নম্বর৷ তীর্থর কি কিছু হলো! ভয়ে ভয়ে তোলে ফোনটা৷
—ম্যাডাম রেট কত যাচ্ছে?
ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শ্রমি বুঝতে পারে না৷ —রেট? কিসের?
—তোমার গো সুন্দরী৷
মাথাটা গরম হয়ে যায়৷ চেঁচিয়ে ওঠে৷ —এ নম্বর কোথায় পেলেন? যাবো পুলিশের কাছে?
—তোমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যাডাম৷ ফটোগুলো উফফ! ভয়ঙ্কর অশ্লীল ইঙ্গিত ছুঁড়ে দেয় ফোনের ভিতর থেকে৷

ফোন কেটে, ল্যাপটপে লগইন করে৷ মাথাটা ঘুরে ওঠে৷ ওর একাউন্টে কী সব বিশ্রী ফটো আপলোড হয়েছে মাত্র পনেরো মিনিট আগে৷ মুখটা ওর৷ কিন্ত্ত নির্লজ্জ এ শরীর কার! ছি! ছি!
পোস্ট ডিলিট করে৷ দু’দিন পরেই আবার একই ঘটনা ঘটে৷ ইন্টারনেট কানেকশন অফ করে দেয় কিন্ত্ত বারবার অজস্র ফোন আসতেই থাকে৷ কদর্য নোংরা ভাষা৷

তীর্থকে বলতে পারে না ওর একাউন্ট হ্যাক হবার কথা৷ ফোনটা অফ করে রাখে রাত্রে আজকাল৷ ফেসবুক একাউন্ট ডিলিট করে দেবে? কিন্ত্ত তাহলে হ্যাকারটাকে খুঁজে পাবে কীকরে? অন্ধকারের ভিতর ডুবতে ডুবতেও তীর্থ ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গোনে৷

চোখটা লেগে এসেছিল, ফ্ল্যাটের কলিংবেল শুনে উঠে বসে৷ সকাল হয়ে গেল! ঘড়িতে দেখে রাত সাড়ে তিনটে৷ এত রাতে কে আসতে পারে? একটা ঠাণ্ডা শ্রোত শ্রমির শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে থাকে৷ ওরা কি তবে বাড়িটাও জেনে ফেলেছে? বেলের পিয়ানোর আওয়াজ সুঁচ হয়ে কানে ঢুকতে থাকে৷ কোনোরকমে চাদর জড়িয়ে দরজার আই হোলে চোখ রাখে৷ তীর্থ!

—কতক্ষণ ধরে বেল বাজাচ্ছি৷ কী ঘুম ঘুমাচ্ছো! এয়ারপোর্টে এসে তোমাকে ফোন করেই দেখি ফোন সুইচড অফ৷ আমি টেনশনে পড়ে গেছিলাম৷ এরপর তো লোকাল থানায় যেতে হতো৷ কী যে করো৷
একটানা বলে তীর্থর খেয়াল হয়, যার এতক্ষণ ফুঁসে ওঠার কথা সে কিছুই বলছে না৷ হাতের ব্যাগপত্তর নামিয়ে তাকায়৷ আমূল পরিবর্তন চেহারায়৷ চোখের কোলে কালি৷ মুখে কথা নেই৷ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন ঘুমায়নি যেন৷
—কী হয়েছে তোমার?
তীর্থর প্রশ্নটা শুনেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে শ্রমি৷
আর একটাও কথা না বলে শ্রমিকে ধরে এনে শুইয়ে দেয় তীর্থ৷ পা দুটো ভাঁজ করে তীর্থর কোলের উপর একটা হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সে৷ সকালবেলা তীর্থ চা করে এনে ঘুম থেকে ওঠায়৷ শ্রমি বলে— অনেক কথা আছে৷
—জানি৷
—জানো! কী জানো! তোমাকেও ফোন করেছিল ওরা!
—না৷ কেউ ফোন করেনি৷ তোমার চোখমুখ বলছে কিছু একটা হয়েছে৷
সব শোনে চুপ করে৷
পরদিন রাতে ফোন আসে আবার৷
দু’দিন পর তীর্থ জিজ্ঞেস করে, তোমার বন্ধুদের কারুর আচরণে কোনো পরিবর্তন কি চোখে পড়েছে তোমার?

শ্রমি বুঝতে পারে না কী বলবে! দিন পনেরো আগে পার্টি থেকে ফেরার সময় অমিতাভদার ব্যবহারটা খুব অদ্ভুত লেগেছিল৷ গাড়ি থেকে নামার সময় হঠাৎ করে ওর হাতের ওপর হাত রেখে বললো, লেডি চার্মিং এত অ্যাসেট নিয়ে পড়ে আছো ওই ভোঁদাই তীর্থর কাছে!
সেদিন পারমিতা আসেনি পার্টিতে৷

হাতটা সরিয়ে সেদিন গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিল৷ ভাবছিল, তাহলে কি পারমিতা যা বলে সেগুলো মিথ্যে নয়? নাকি আজ অমিতাভদা অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে?
তীর্থকে কথাগুলো বলবে কি বলবে না বুঝে উঠতে পারে না৷
সেদিনই রাত্রে তীর্থ বলে, অমিতাভকে একবার ডাকো৷ তুমি বলবে তোমার কথা আছে৷
—কথা! কী কথা আমার অমিতাভদার সঙ্গে!
—অমিতাভর ফেভারিট পেপার ছিল হ্যাকিং৷ সেটা কি তুমি জানো?
শ্রমি দোলাচলে ভোগে!
—হ্যাকারটা কে সেটা কি আদৌ জানতে চাও শ্রমি?
অনেকটা দ্বিধা নিয়েও, তারপর ঠিক যেভাবে তীর্থ বললো, সেভাবেই শ্রমি এগোতে থাকে৷
পাওয়াইয়ের মোকা রেস্টুরেন্টে বসে অমিতাভ তখন বুঝে ফেলেছে লেডি চার্মিং ওর প্রেমে পাগল হয়েছে৷ এবার খেলা জমবে৷
শ্রমিকে ঢুকতেই সে বলে, কী খাবে বলো?
শ্রমি নিঃশ্বব্দে হাসে৷
—কি এত ভাবছো লেডি চার্মিং! কবে থেকে ইশারা করছি, এতদিনে বুঝলে!
—ইচ্ছে হচ্ছে এক থাপ্পড়ে…৷ তীর্থ নেহাত বলে দিয়েছে, কোনো উত্তেজনা নয়৷
মিনিট দশেক কাটে৷ কফি আর স্ন্যাকস আসে৷ অমিতাভ ওর হাতের ওপর হাতটা রাখে…৷
ঠিক এইসময় তীর্থ একটা চেয়ার টেনে ওদের টেবিলেই এসে বসে পড়ে৷ অমিতাভ বিষম খায় আর শ্রমি স্পষ্ট নিজের বুকের লাবডুব নিজেই শুনতে পায়৷
—শ্রমি, বদমাইশটাকে বলেছ— ওর খেলাটা তুমি ধরে ফেলেছ! পারমিতার খাতিরে এতদিন কিছু বলনি, কিন্ত্ত এরপর সাইবার ক্রাইমে যাবে৷
অদ্ভুতভাবে এর মাস খানেক পরেই পারমিতা একদিন সন্ধেবেলায় ডাকে ওদের সব বন্ধুদেরকে৷ যাওয়া উচিত হবে কি হবে না বুঝে উঠতে পারে না সে৷ তীর্থ শুনে বলে, অবশ্যই যাবে৷

পার্টিতে অমিতাভ সামনে না আসায় শ্রমি স্বস্তি বোধ করে৷ খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা যখন তুমুল চলছে, তখন ওদেরকে বসতে বলে পারমিতা মিনিট কয়েকের জন্য বেরিয়ে যায় ঘর থেকে এবং অমিতাভকে সঙ্গে নিয়ে ঢোকে৷ অমিতাভর হাত ধরেই বলে, ডার্লিং ফাইনালি এনাউন্স করে দিই তাহলে, এটা আমাদের অফিসিয়াল ডিভোর্স ঘোষণার পার্টি৷

আমি খুব ভালো করে জানি, অমিতাভ আমার বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই অশ্লীল ভাবে মিশতে চেয়েছে৷ আমার সামনে অবশ্যই আমার বন্ধুদের নিয়ে নোংরা কথা বলেছে৷ বার বার ভেবেছি ও শুধরে যাবে৷ সেটা হবার নয়৷ তাই…! অমিতাভর অফিসেও এই খবরগুলো পৌঁছে দিয়েছি লিখিতভাবে৷ আজ এই পার্টির শেষে তোদের সঙ্গেই বেরিয়ে যাচ্ছি আমিও৷

একটা পিন পড়লে শব্দ শোনা যায় ঘরে৷ পারমিতা আবার বলে— ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম অমিতাভকে৷ ভালোবাসা চর্ব্য চোষ্য উদ্ধার করে নিয়েছে আমার থেকে৷
হাসেও না, কাঁদেও না পারমিতা৷ যেন নাটকের ডায়ালগ বলা শেষ হয়েছে এভাবেই পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়ে৷

আক্রোশে অমিতাভর চোখদুটো নেকড়ের মতো জ্বলতে চায়৷ কিন্ত্ত সব ক’টা চোখের ঘৃণাই সম্ভবত ওকে বাধ্য করে মাথা নীচু করতে৷ খবরটা বেরিয়েছিল কয়েকদিন পরে মুম্বাই টাইমসের তৃতীয় পাতার এক কোণে ‘মুলুন্ডের ফ্ল্যাটে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের পচা গলা দেহ উদ্ধার৷’