• facebook
  • twitter
Monday, 13 January, 2025

একটি ইলিশের জন্য

অনিতা চারটি থালায় ভাত, আলুভাতে এবং স্টিলের বাটিতে করে ইলিশমাছের ঝোল সাজিয়েছে। অনন্ত প্রশ্ন করে, ‘কিগো মায়ের ভাত বাড়লে না?’ অনিতা হালকা স্বরে উত্তর দেয়, ‘মা তো আজ থেকে ছোটবউয়ের কাছে খাবেন।’ অনন্ত চুপ হয়ে যায়। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভাতের থালার দিকে। ভাগ করে দেওয়া মায়ের খাবারের এক পাওয়া-না পাওয়ার মিশেল গন্ধ খেলে বেড়ায় তার মস্তিষ্কে। ওদিকে মা তাঁর ঘরে অপেক্ষায় রয়েছেন কখন সেজোবউ আসবে।

কাল্পনিক চিত্র

সুপ্রভাত মেট্যা

ব্যাগ হাতে অনন্ত বেরিয়ে পড়ে। আজ ভোর থেকেই মুষলধারায় বৃষ্টির গায়ে গায়ে ঝিরঝিরে ফোঁটার কারিকুরি লেগেই রয়েছে সারাক্ষণ। জলের স্রোতের সঙ্গে জনস্রোত মিশে গেছে রাস্তায়। অন্ধকার ডেকে আনা মেঘগুলির স্পর্ধা যেন মানুষের কষ্টের জীবন দেখছে! জুতো পরে যেতে বলেছিল অনিতা। এখন দেখছে সে ভুলই করেছে। মোরামের গুটিগুলি ছুঁচের মতো ভীষণ লাগছে তার পায়ে। অবশ্য হাটের সামনে গিয়ে সে দেখে যে, না, সে ঠিকই করেছে। কাদায় প্যাচপেচে ভরে গেছে পুরো বাজার এবং ত্রিপল খাটানো দোকানের অলিগলি পথও। যারা জুতো পরে এসেছিল তাদের অধিকাংশের, হাতেই ঠাঁই হয়েছে জুতোর। অনন্ত সামান্য কৌণিক হেসে আগে মাছবাজারের দিকে যায়। কেননা অনিতা বলেছিল আজ ইলিশ আনতে। ইলিশ নাকি খুব সস্তায় বিকোচ্ছে। গেল বছর প্রচুর দামের অতিরিক্ত আতিথেয়তায় ইলিশ পাতে তুলে দিতে পারেনি অনন্ত। এইবার আর দেরি নয়। আগেভাগেই সেরে নিতে চায় সে। সেজন্য পড়শি-বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে এনেছে দুশো টাকা। মাস মাইনে পেতে এখনও সপ্তাহখানেক বাকি। টেনেটুনে আর চালানোই যাচ্ছে না। যা বাজারের দর! আলু তিরিশ টাকা, পঞ্চাশের নীচে কোনও সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। যাই হোক, সে মাছের বাজারের দিকে যায়। গিয়ে ইলিশ খুঁজতে থাকে। দেখে একটাই মাত্র দোকান দুই ছেলে ও মায়ের, যেখানে ইলিশ রয়েছে। আর বাকি সব রুই, কাতলা, কই ও কিছু সামুদ্রিক অন্যান্য মাছে ভরে রয়েছে। ঝাঁকিতে চকচক করছে রুপোলি শস্যের বরফ-চেহারা। অনন্তের মনে আলতো খুশি জেগে ওঠে। সে তিন-চারজনকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।

অনিতা অর্থাৎ তার স্ত্রী বেশ বড়মুখ করে বলেছিল চওড়া দেখে একটা ইলিশ কিনতে। চওড়া পেটের ইলিশ নাকি খুব স্বাদের হয়। দাম তো জানা হয়ে গেছে আগেই, সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। পাঁচশো টাকা করে কেজিতে। অনন্ত তিনশ গ্রামের মতো প্রায় একটি ইলিশ হাতে তোলে। বেশ চাওড়া লাগছে। ভালোই হবে মাছটি ভেবে সে দারুণ খুশি। দোকানদার-মহিলাটি দাঁড়িপাল্লায় তুলে তিনশো গ্রামের অনেকটাই বেশি হয়েছে বলে উঁচিয়ে দেখায়। যদিও অনন্ত জানে ওটি কারো বাড়িতে গিয়ে মাপালে তিনশোও ছোঁবে না। সে যাই হোক, দাম হয়েছে দেড়শো টাকা। অনন্ত দুশো টাকার একটা নোট ধরায়। দোকানদার-মহিলাটি পঞ্চাশ টাকা ফেরত দিলে অনন্ত সবজি বাজার থেকে কিছু সবজি কিনে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। যেতে যেতে ডানদিকে পড়ে জুতো সেলাই ও ব্যাগের দোকান। বহুদিন ধরে হল অনিতার ব্যাগের হাতলটি অকেজো। চপ্পল জোড়াও ফিতের অভাবে দাওয়ায় স্থির হয়ে পড়ে রয়েছে। সারাবে সারাবে বলে আর সময় হয়ে ওঠে না অনন্তর। যাক সেইসব কথা। সামান্য দুঃখ-কষ্টের টুকরো-টাকরা জীবনে থাকতেই পারে। তবে আজ সে বেজায় খুশি। কারণ হাতে তার ইলিশ রয়েছে। খুশির অশ্রুতে সবকিছুই ধুয়ে-মুছে যাবে আজ।


বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হইহই করলে বেশ ভালোই লাগে। অনন্তরা চার ভাই, দুই বোন। সবাই ঘোর সংসারী। বড়ভাই অর্থাৎ বড়দা— অপূর্ব, ভালো চাকরি করতেন একসময়। এখন অবসরপ্রাপ্ত। বাড়িতেই থাকেন। সমাজসেবামূলক কাজ করে বেড়ান সারাক্ষণ। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-পুতি নিয়ে ভরাট সংসার। মেজোভাই অরূপের কাপড়ের দোকান রয়েছে বাজারে। তাঁরও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। একটা দুটো করে সন্তানও রয়েছে তাদের। সেজো অনন্ত। তার দুই ছেলে, কোনও মেয়ে নেই। আর ছোটভাই অঙ্কনের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। ছেলেটি খুবই ছোট। দুইবোনেরও নাতি-পুতি, জামাই, মেয়ে, ছেলে, ছেলের বউ নিয়ে বাঁধানো সংসার। তবে এই সমস্ত সদস্যদের একদম পিছনে যিনি রয়েছেন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো তিনি হলেন স্বাগতাদেবী। অনন্তর মা। বয়স আশির কাছাকাছি হবে। এখনও সুন্দর, ফর্সা, কোঁকড়ানো চুল, কম বয়সে ইন্দিরা গান্ধীর মতো দেখতে ছিলেন। অনন্তের বাবা গত হয়েছেন প্রায় বিশ বছর হল। তার পরের দশ বছর পর্যন্তও ছিল একান্নবর্তী পরিবারের সাজানো সংসার। এতোদিন বড়দাই সামলেছিলেন। তারপর থেকে যে যার আলাদা হয়ে যায়। তবে কোনও গন্ডগোলের ভিত্তিতে যে ভেঙেছে তা নয়। ফ্যামিলি বড় হওয়ার দরুন সংসারের হাল ধরবার মতো লোকের অভাব ঘটছিল দিনদিন। তখন সব ভাই মিলে বসে নিজেরাই নিজেদেরটা বুঝে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মা? মা কার কাছে থাকবে? কার কাছে খাবে? এই নিয়ে চলল টানাপোড়েন। অনন্ত চাইছে মা তার কাছে থাকুক। সারা জীবন সে মাকে খাওয়াবে। তার দেখভাল করবে। সেবা শুশ্রূষা করবে। কারণ বাবা মারা যাওয়ার আগে তিনি সব ভাইদের ডেকে বলেছিলেন, ‘তোর মাকে তোরা কখনও পালা করে খাওয়াস না, বাবা। ও যে কোনও একজনের কাছেই থাকবে। তবে তোরা সবাই মিলে ওকে দেখবি। খোঁজ নিবি। শরীরের দিকে খেয়াল রাখবি সবসময়। ওর প্রতি যেন কোনও অবিচার না হয়। ওকে তোরা দুঃখ দিস না।’ বাবার সেই কথা সবারই মনে রয়েছে। তাই সবাই চাইছে মা তাদের কাছে থাকুক।

অগত্যা মাকেই জিজ্ঞাসা করা হল, মা কার কাছে থাকতে চান। মা কিঞ্চিৎ বিড়ম্বিত হয়ে অল্প শব্দে বলে উঠলেন, ‘আমি ছোট ছেলের কাছে থাকব।’ ব্যস, সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা কখনও পিছু ছাড়ে না মানুষের। সে চলতে-ফিরতে আগু-পিছু গায়ে গায়ে লেগেই থাকে সারাজীবন। তাকে সমঝিয়েই এগিয়ে যেতে হয় মানুষকে। বছর না ঘুরতে ঘুরতেই আর এক সমস্যা দীর্ঘায়িত হতে থাকে সংসারের ভিতর। সব ভাইয়েরাই ঠারে-ঠোরে তা বুঝতে পারে যে, মায়ের ঠিকমত দেখভাল তারা করছে না। কোনও না কোনও কারণেই মা বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ মা সবার মনোরঞ্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কারো আনাজ কুটে দেওয়া, তো কারো মাছ বেছে দেওয়া, চাল পাছুড়া, বাচ্চা সামলানো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এখন আর পারে না। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বয়স হচ্ছেতো! সব ভাইয়েরা তাই একযোগে বসে ঠিক করে যে মা কারো একার কাছে সবসময় থাকবে না। মা ঘুরে ফিরে সবার কাছেই থাকবে। ছোটভাই বলে, ‘তাহলে বাবার দেওয়া কথা আমরা কিন্তু কেউ রাখতে পারলাম না!’ কিছুটা থেমে অনন্ত ক্ষীণ স্বরে বলে, ‘অঙ্কন, অনেকসময় ভালোর জন্যই কিছু ভালো কথা অমান্য করতে বাধ্য হতে হয় মানুষকে।’ কথাটি শুনে কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপচাপ হয়ে যায়। তারপর মাকে বলা হয়, ‘মা আজ থেকে তুমি সবার কাছেই থাকবে। দেখবে এতে তুমি ভালোই থাকবে। মনখারাপ করো না।’ মা ডুকরে কেঁদে উঠল। ‘আমি আর ক’দিন বাবা। তোরা সবাই ভালো থাকিস এটাই আমি চাই।’ বাড়ির বৌয়েদের বলা হল, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নাও কীভাবে মাকে দেখবে।’ তো ওরা নিজেরাই ঠিক করল প্রত্যেকে একমাস করে রোটেশানালি মাকে দেখবে। শুরু হল মায়ের জীবনে শেষ প্রান্তে গিয়ে এক নতুন শুরুর অধ্যায়।


অনন্ত একবার সবাইকে গিয়ে বলে, মা অন্য কারো কাছে খেলেও ভালো কিছু হলে তোমরা কিন্তু মাকে একটু দিও। সেইমতো সবাই মাকে গিয়ে দেয়। কিন্তু মায়ের এক স্বভাব রয়েছে ভালো কিছু পেলেই নিজে না খেয়ে অন্য কাউকে চালান করে দেওয়া। কোথায় যে দেয় সেটাও সবাই জানে। কিন্তু কিছু বলতে পারে না। মায়ের এই স্বভাবের জন্য কারো কিছু দিতে ইচ্ছে করে না । তবুও দেয়। তবে তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে ক্রমশ। অনন্তর কিছু করার থাকে না তখন। সে মাকে বোঝায়, ‘তোমাকে কিছু দিলে তুমি খাওনা কেন মা?’ ‘কে বলে খাই না, খাইতো, তা তোরা দিবি দিবি, না দিবি না দিবি।’ মা তখন অভিমানের সুরে বলে ওঠে কথাগুলি। অনন্ত আর কিছু বলতে পারে না।

বিকেল অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে আলোকে। অন্ধকার হয়ে আসছে বলে ফিরে আসছে গরু ও ছাগলের দল মাঠ থেকে। অনিতা দাওয়ায় বসে রয়েছে একলা, মনমরা। অদূরে খেলা করছে তার দুটি ছেলে অর্ণব ও অর্পণ। ওদেরকে দেখে তার অনেক কথাই মনে পড়ছে। ছেলে দুটি দাদু-ঠাকুমার ভালোবাসা পেল না কখনোই। জন্মের পর থেকেই তারা দাদুকে দেখেনি। ঠাকুমা থেকেও নেই। কখনও সেভাবে আদর করে কোলেও নেয় না। সবসময় অনন্তের ভাইয়ের ছেলেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে মা। এটা খুব কুরে কুরে খায় অনিতাকে। কেন এমন হয়? মায়েরা সব সন্তানকে সমানভাবে দেখে না কেন? আমিও কি তবে একসময় এমন হয়ে যেতে পারি? কথাটা ভেবে বুকটা ধড়াৎ করে ওঠে অনিতার। না, এমন যেন কখনও না হয়, ঠাকুর। মামার বাড়িতেও ঠিকমত আদর পায় না ছেলেদুটি। দাদু-দিদা সবসময় ওর বোনের ছেলেটিকেই বেশি ভালোবাসে। বোনের অনেক পয়সা, ব্যবসায়ী লোক ওর স্বামী।

গা-ভর্তি গহনা। ওর বোন যখন বাপের বাড়িতে আসে কেমন যেন একটা ধনী-ধনী গন্ধ খেলে বেড়ায় তার শরীরে,
আব-ভাবে, এবং আদব-কায়দায়। অনিতাকে খুব নিস্প্রভ মনে হয় তখন। খুব ছোট লাগে নিজেকে। অথচ সে বোনের থেকে অনেক অনেক বেশি সুন্দরী। তবে এটা ভেবে তার খুব ভালো লাগে যে, তার স্বামীর ভালোবাসা তার রূপলাবণ্য এবং জৌলুসের একমাত্র চাবিকাঠি হয়ে রয়েছে এখনও। সেইদিক থেকে সে সত্যিই সুখী। এবং ছেলেদুটিও তাকে খুব ভালোবাসে। কোনও কারণে দুঃখ পেলে তারা দু’দিক থেকে এসে গলা জড়িয়ে মাকে আদর করে। আর অনিতার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ও ব্যথা তখন মুহূর্তেই গলে যেন একদম জল হয়ে যায়। এতেই শান্তি অনিতার।
সেদিন ইলিশ কিনে ঘরে ফিরেছে অনন্ত। ছেলেদুটি দলিজের সামনে দাঁড়িয়েছিল এতক্ষণ। বাবাকে দেখে ইলিশ হাতে, অমনি ছোট ছেলেটি ভিতরে গিয়ে আনন্দে মাকে খবর দেয়। ‘মা, বাবা ইলিশ এনেছে।’ শুনে অনিতা ঠোঁটে একটি ভুবন ভোলানো হাসি সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসে। ইলিশসহ বাজারের ব্যাগটি অনন্তর হাত থেকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। আর বড়ছেলেটি তো ধেই-ধেই করে নাচতে থাকে মহানন্দে। রোববারের বাজার। চার ভাইয়ের ঘরে চার রকমের বাজার এসেছে। মা দলিজে বসে রয়েছে।

এক-এক করে ছেলেরা বাজার করে ঘরে ঢুকছে। আর মা সেইদিকে চেয়ে রয়েছে। অনন্ত ইলিশ এনেছে, মেজদাও ইলিশ, বড়দা কাতলা এনেছে আর ছোটভাই রুই। মা অনন্তের কাছে খাচ্ছে এখন। কিছুক্ষণ পরই ইলিশ ভাজার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে রুই ও কাতলাকে পিছনে ফেলে এ-ঘর থেকে ও-ঘর, ও-ঘর থেকে সে-ঘর চারদিকে। অনিতা সরষে বাটা, কাঁচা লঙ্কা আর বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল রান্না করেছে বেশ পরিপাটি করে। আর আলুভাতে দিয়েছে। সবার স্নান সারা হয়ে গিয়েছে। এবার খেতে বসার পালা। মা যেইঘরে থাকে সেখানেই তার খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনন্তরা খেতে বসেছে। অনিতা চারটি থালায় ভাত, আলুভাতে এবং স্টিলের বাটিতে করে ইলিশমাছের ঝোল সাজিয়েছে। অনন্ত প্রশ্ন করে, ‘কিগো মায়ের ভাত বাড়লে না?’ অনিতা হালকা স্বরে উত্তর দেয়, ‘মা তো আজ থেকে ছোটবউয়ের কাছে খাবেন।’ অনন্ত চুপ হয়ে যায়। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভাতের থালার দিকে। ভাগ করে দেওয়া মায়ের খাবারের এক পাওয়া-না পাওয়ার মিশেল গন্ধ খেলে বেড়ায় তার মস্তিষ্কে। ওদিকে মা তাঁর ঘরে অপেক্ষায় রয়েছেন কখন সেজোবউ আসবে। ভাতের থালা ও ইলিশ সাজিয়ে তাঁকে বলবে, ‘মা নিন বসে পড়ুন। ভাত নিয়ে এসেছি।’ অনিতারই বা কী করার আছে এতে। আলাদা করে যে একটু দেবে মাকে, ওইটুকুই তো মাছ। দুই ছেলেকে দু’টো ভালো ভালো পিস দিয়েছে, অনন্তকে মুড়ো, যাতে মাছের প্রায় কিছুই নেই আর লেজার দিকের ছোট্ট একটি পিস, অনিতা নিজেও নিয়েছে সরু এইটুকুনি একটি লেজা।

দুপুরে শুতে গিয়ে অনন্ত নিজের অপারগতাকে দোষারোপ করে বারবার। অনিতারই বা দোষ কীসের? এর আগেও সে ভালো যা-কিছু হয়েছে মাকে দিয়ে এসেছে তা সে মা খাক কিংবা না খাক। কিন্তু আজ! আজকের ব্যাপারটা যে সম্পূর্ণই আলাদা। মেঘলা আকাশের মতো মনে হচ্ছে সবকিছু। একটা অপরাধবোধ কুরে কুরে খাচ্ছে অনন্তকে সারাক্ষণ। অনিতা তা বেশ বুঝতে পারছে। ছেলেদুটো ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিতা অনন্তর দিকে পাশ ফিরে শোয় এবং আলতো বুক ঠেকিয়ে বলে, ‘কিগো এখনও ঘুমোওনি? আচ্ছা ঠিক আছে, এবার মাইনে হলে একটু বেশি করে ইলিশ এনো। আমি মাকে বড় দেখে একটি চাকা দিয়ে আসব ’খন। কী, এবার খুশি তো?’ অনন্ত বাচ্চা ছেলেদের মতো হেসে ওঠে। একদম হালকা হয়ে পড়ে সে। ইলিশ ভাতের ঘুম জড়িয়ে আসে তার দু’চোখে ক্রমশ।