• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

উড়ুক্কু মাছ

হাননান আহসান বিমান আকাশে ওড়ে, যন্ত্রের সাহায্যে৷ পাখি-পতঙ্গরাও উড়তে পারে৷ আবার পরিযায়ী পাখিরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়ে যায়৷ কিন্ত্ত মাছ কি উড়তে পারে? পারে পারে৷ আশ্চর্য লাগলেও আজ সেই উড়ুক্কু মাছের কথা জানাব৷ প্রাণীবিদরা গবেষণা করে ফলাও করে জানিয়েছেন যে, কখনো কখনো কোনো কোনো মাছ সামান্য সময়ের জন্য হলেও উড়তে পারে৷ বেলোনিফিস বর্গ

হাননান আহসান

বিমান আকাশে ওড়ে, যন্ত্রের সাহায্যে৷ পাখি-পতঙ্গরাও উড়তে পারে৷ আবার পরিযায়ী পাখিরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়ে যায়৷ কিন্ত্ত মাছ কি উড়তে পারে? পারে পারে৷ আশ্চর্য লাগলেও আজ সেই উড়ুক্কু মাছের কথা জানাব৷ প্রাণীবিদরা গবেষণা করে ফলাও করে জানিয়েছেন যে, কখনো কখনো কোনো কোনো মাছ সামান্য সময়ের জন্য হলেও উড়তে পারে৷

বেলোনিফিস বর্গ আর কর্ডাটা পর্বের উড়ুক্কু মাছগুলি (ফ্লাইং ফিস) সমুদ্রের ওপরে ২০০ ফুট উচ্চতা অবধি না-কি উড়তে পারে৷ বার্বাডোজ দ্বীপরাষ্ট্রে এদের সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়৷ ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্রের বার্বাডোজকে তাই উড়ুক্কু মাছের দেশ বলা হয়৷

প্রাণীবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই মাছগুলির বুকের দিকের পাখনা আর মাঝে মাঝে শ্রেণী পাখনা প্রসারিত হয়ে ডানার আকৃতি তৈরি করে৷ বায়ুর গতি কিংবা ঢেউয়ের অবস্থান ভেদে এরা কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে৷ অন্ততপক্ষে ৩০ সেকেন্ড বাতাসে ভেসে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব৷ সেইকারণে আপাতদৃষ্টিতে এদের উড়ুক্কু মাছ বলা হলেও এরা টানা উড়তে একেবারেই অপারগ৷ হয়তো আমাদের চোখের সামনে এমন অদ্ভুত কাণ্ড আমরা সচারাচর দেখি না তাই অবাক লাগবে জেনে৷ আসলে এদের বাতাসে ভেসে থাকাকে গ্লাইডিং বললে ভালো হয়৷ আবার কোনো কোনো উড়ুক্কু মাছের প্রজাতি জলের ১০ মিটার উচ্চতায় প্রায় ৪০০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷উড়ুক্কু মাছের গতি ঘণ্টায় ৭০ কিমি বা ৪৫ মাইলেরও বেশি হতে পারে৷ এই মাছের বাতাসে উড়ার পেছনের কারণ নিয়ে দুটি ধারণা প্রচলিত আছে৷ প্রথমত প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় খাবার খেতে জলের ওপরে উঠতে হয় এদের আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, ডলফিন, স্কুইড বা বড়ো শিকারী প্রাণীদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্যই জল ছেড়ে বাতাসে ভাসতে শুরু করে উড়ুক্কু মাছেরা৷ উড়ুক্কু মাছ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়েরেখেছে বহুকাল ধরে৷ গবেষকরা বলছেন, পাখি ও ডাইনোসরদের আগে থেকেই এদের অস্তিত্ব ছিল এই পৃথিবীতে৷ সুতরাং হঠাৎ জানা কোনো ব্যাপার নয়৷ যুগ যুগ ধরে উড়ুক্কু মাছের অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আসছে৷ সম্প্রতি চিনের জাদুঘরে থাকা উড়ুক্কু মাছের জীবাশ্ম গবেষণা করে গবেষকেরা বলছেন প্রায় ২৩ থেকে ২৪ কোটি বছর আগের মধ্য ট্রায়াসিক যুগে ‘পোটানিক্সাস কিংজিনসাস’ নামের উড়ুক্কু মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে৷ এটি জুরাসিক যুগের ডাইনোসরদের থেকেও ৫ কোটি বছর আগের৷ জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পাখিদের আকাশে ওড়ার ৮ কোটি বছর আগে থেকেই সমুদ্রে রাজত্ব ছিল উড়ুক্কু মাছেদের৷ আকারে ৬ ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এই উড়ুক্কু মাছ৷ এদের ওড়ার জন্য কোনো ডানা নেই৷ আছে চ্যাটাল, ঢাউস এবং ফাঁপা বুকের পাখনা৷ভেতরে বাতাস ভরা থাকায় পাখনার ওজনও হয় হালকা৷ এই বুকের পাখনার সাহায্যেই উড়ুক্কু মাছেরা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে৷

উষ্ণমন্ডলীয় প্রায় সব সাগরেই উড়ুক্কু মাছ দেখতে পাওয়া যায়৷ সামুদ্রিক এই মাছেরা সমুদ্রে ঝাঁক বেধে চলাচল করে৷ দ্রুত সাঁতার কাটতে কাটতে জলের একেবারে উপরিভাগে উঠে আসে৷ পরে পাখনা মেলে উড়তে থাকে বাতাসে৷ উড়ুক্কু মাছ বলতে কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছকে বোঝায় না৷ বিশ্বজুডে় ৬৪ প্রজাতির উড়ুক্কু মাছের খোঁজ পাওয়া গেছে৷ আলোর প্রতি এই মাছের মারাত্মক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আলোর ফাঁদ পাতে মাছ শিকারীরা এই মাছ ধরার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ অসম্ভব সুস্বাদু এই মাছ৷ তাই মাছ শিকারীদের এই মাছের প্রতি লোভ থাকা স্বাভাবিক৷ মাছটি জাপান, ভিয়েতনাম, বার্বাডোস ও ভারতে প্রচুর শিকার করা হয়৷