শ্রীধর মিত্র: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আলাদা-আলাদাভাবে সেই রাজ্যের বিশেষ গুরুত্ব ও নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে, রাজ্য দিবস বা State Day হিসাবে গণ্য করা হয়৷
বর্তমান মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসনা পূরণ করতে, রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, বিভিন্ন বণিক সভা, সাহিত্য-সংস্কৃতি-ক্রীড়া-চিত্রকলা, চলচ্চিত্র-র সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিগণ, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বরিষ্ঠ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরোহিত্যে গত ২৯ আগস্ট, ২০২৩, নবান্ন সভাঘরে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ সংক্রান্ত একটি আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছিল৷ ওই আলোচনা সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, প্রতি বছর বাংলা সনের প্রথম দিনটিকে ‘রাজ্য দিবস’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানে, বেসরকারি সংস্থায়, ক্লাব, বিভিন্ন সংগঠনে পালন করা হবে৷ এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব রাজ্য সংগীত হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ কবিতাটিকে গ্রহণ করা হয়৷ সর্বসম্মত এই সিদ্ধান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যসচিবের সরকারি আদেশনামা (No. 1895/Secy/ICA/2023, dt-30.12.23) জারি করা হয়৷ ওই আদেশনামায় অনুসারে, কলকাতার রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন ক্যাথিড্রাল রোডে সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ছোট করে ‘বাংলা দিবস’ ও রাজ্য সংগীতের প্রথম বছরের অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে৷ এছাড়াও সব জেলায় ছোট ছোট পদযাত্রা, পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে৷ ছৌ নৃত্য, বাউল গান সহযোগে বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ ‘বাংলা মোদের গর্ব’ শীষক প্রদর্শনী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান জেলায় জেলায়, পুরসভা, ব্লক, পঞ্চায়েত এলাকায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্লাব, সংগঠন, অ্যাসোসিয়েশন, আবাসনের বসবাসকারী এবং সাধারণ মানুষকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে৷ তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের সচিব তাঁর আদেশনামায় (N0. 1072/600/ICA(N),dt-13.03.2024) এই কথা জানিয়েছেন৷
এর আগে রাজ্য বিধানসভায় ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে ‘রাজ্য দিবস’ পালন এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হয়৷ সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও অন্যান্য বিজেপি বিধায়কেরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, আগামী ১লা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ থেকে প্রতি বছর ‘বাংলা দিবস’ পালন করা হবে৷ পশ্চিমবঙ্গের ৯৯ শতাংশ মানুষই বলেছেন ১লা বৈশাখের কথা৷ আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করে, সবার মতামত নিয়ে ১লা বৈশাখকে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালন করব৷ তারই অঙ্গ হিসেবে ১লা বৈশাখ ১৪৩১ নববর্ষের পুণ্য দিনে ‘বাংলা দিবস’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংগীত হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হল৷ উল্লেখ্য, ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যেও যেমন তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, অরুণাচল, কর্ণাটক, হরিয়ানা, বিহার প্রভৃতি রাজ্যের নিজস্ব রাজ্য দিবস এবং নিজস্ব রাজ্য সংগীত ইতিমধ্যেই চালু রয়েছে৷ তাই দেরিতে হলেও ১৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১লা বৈশাখ ১৪৩১ বুধবার শুভ নববর্ষে ঐতিহ্যমণ্ডিত দিনটিতে ‘রাজ্য দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে৷ রাজ্য সংগীত হিসেবে গাওয়া হবে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’৷ সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজ্য সংগীত এবং অনুষ্ঠানের শেষে জাতীয় সংগীত গাওয়া একান্ত কাম্য৷ এই সময় প্রত্যেককে উঠে দাঁড়িয়ে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে৷