গৌতম অধিকারী
শহর কলকাতায় বাংলা থিয়েটার যখন বাবুবাড়ির উঠোন ছেড়ে সাধারণ মানুষের হয়ে উঠতে চাইছে, তখন দীনবন্ধু মিত্রের নাটকগুলো ছিল বাংলাদেশের থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম অবলম্বন। এগুলোর মধ্যে যে নাটকটি নিয়ে দীনবন্ধুর খ্যাতি চারদিকে, সেই ‘নীলদর্পণ’ ১৮৬০-এ ঢাকা থেকে মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয় এবং একবারের জন্য অভিনীত হয় ঢাকা শহরে, ১৮৬১-র ৫ ডিসেম্বর, পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি বা ইস্ট বেঙ্গল রঙ্গমঞ্চে। এমনই তথ্য আমরা পেয়েছি মুনতাসীর মামুনের লেখায়। কিন্তু তারপর দীর্ঘ এগারো-বারো বছর হিমনীরবতা। সেটা ভাঙল ১৮৭২-এর ৭ ডিসেম্বর, ন্যাশনাল থিয়েটারের দরোজা উন্মোচিত হলো প্রথম ‘নীলদর্পণ’ অভিনয়ের মাধ্যমেই। শুধু তাই নয়, ‘নীলদর্পণ’ পরবর্তীকালের সাংগঠনিক গণনাট্য আন্দোলনের বহু আগে গণনাটকের অভিধা ছিনিয়ে নিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, পরাধীন ভারতের গণনাটকের পুরোধাপুরুষের ইতিহাস এ্যাকাডেমিক স্তরে ঐতিহাসিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সামাজিক জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতায় বিস্মৃতির আড়ালে। যেমন হারিয়ে যেতে যেতে এখন শুধু স্মৃতিতে জায়গা করে নিতে চলেছে দীনবন্ধু মিত্রের জন্মভিটে। অবস্থান উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার চৌবেড়িয়া মৌজা, JLM-243, সিট-২, জমির দাগ নম্বর ৩৮২০। খতিয়ান নম্বর ৭১৩ । আইনানুগ দখলদার বলাইচন্দ্র মিত্র (পিং তারকচন্দ্র মিত্র), বঙ্কিমচন্দ্র মিত্র (পিং জনাইচন্দ্র মিত্র), ললিতচন্দ্র মিত্র (পিং হাপরচন্দ্র মিত্র) প্রমুখ। বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর বাজার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর চব্বিশ পরগনা-নদিয়া সীমান্তে দীনবন্ধু মিত্রের জন্মস্থান চৌবেড়িয়ার অবস্থান। দীনবন্ধুর জন্মসময়ে অর্থাৎ ১৮২৯ (মতান্তরে ১৮৩০ সালে) সালে স্থানটি ছিল নদিয়া জেলার মধ্যে। পরে প্রথমে যশোর এবং দেশভাগের পরবর্তীতে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
নিজের জন্মভূমির সামান্য পরিচয় দিয়েছেন তিনি ‘সুরধুনী কাব্যে’র অষ্টম সর্গে। ত্রিবেণীর নিকটে হুগলি নদী থেকে উৎপন্ন যমুনা এই গ্রামের চতুর্দিকে বেড় দিয়ে প্রবাহিত বলে গ্রামের নাম চৌবেড়িয়া, এমনিই দাবি ঐতিহাসিকদের। দীনবন্ধুও লিখেছেন,—
যমুনা বিমনা বড় ত্রিবেণীর তলে,
স্নেহভরে ধীরে ধীরে জাহ্নবীরে বলে—
বহু দূর নাহি আর সাগর ভীষণ,
একা তুমি অনায়াসে করিবে গমন,
যাব না তোমার সনে আমি লো ভগিনী,
ছাড়িয়ে তোমায় আজ হব বিরাগিনী;
তব স্বামী কাছে যেতে হলে অনুরাগী,
কত কথা রটাইবে যত ভালখাগী,
তাই বন নিবেদন শুন লো আমার,
বামদিকে যাব আমি করিছি বিচার,
দেখে যাব বিরুয়ের মদনগোপাল,
হরিণঘাটায় খাব সোনামুগ দাল,
পাক দিয়ে বেড়ে যাব চৌবেড়িয়া গ্রাম,
বিনত দীনের যথা অতি দীনধাম।
বিরহীর ঐতিহ্যবাহী মদনগোপালের মন্দিরে পবিত্র স্পর্শ ছুঁয়ে এবং হরিণঘাটার সোনামুগ ডালের স্বাদ নিতে নিতে আমরাও পৌঁছে যেতে পারি চৌবেড়িয়া দ্বীপে। একদা গণ্ডগ্রাম চৌবেড়িয়া এখন মুখর হয়ে ওঠে চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয়, পরবর্তীতে তাঁর ধর্মপত্নী অন্নদাসুন্দরীর নামে প্রতিষ্ঠিত চৌবেড়িয়া অন্নদাসুন্দরী মিত্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে। তৈরি হয়েছে দীনবন্ধুর নামাঙ্কিত ডাকঘর, পাঠাগার এবং বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অদূরেই রয়েছে বনগাঁ দীনবন্ধু কলেজ। কিন্তু অন্ধকারে রয়ে গেছে দীনবন্ধু মিত্রের তিনপুরুষ আগে প্রতিষ্ঠিত ভদ্রাসন। গোপালনগর-চাকদা রোডের ঝকঝকে তকতকে রাস্তা-ঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশনের ঘোষিত হেরিটেজ বিল্ডিং এখন জঙ্গলে ভরা, সাপের বাসাবাড়ি। তবুও দীনবন্ধুর বাড়িতে যাব বললে বাস কন্ডাক্টর চৌবেড়িয়া বাজারের ঠিক আগে ‘মিত্তিরবাড়ি মিত্তিরবাড়ি’ বলে হাঁক দিয়ে বাসটা দাঁড় করিয়ে যাত্রীকে ঠিক নামিয়ে দেবেন দীনবন্ধুর দীনধামের ঠিক সামনে। এ যেন পূর্বপুরুষের প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের হৃদয়-নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আকুতি। কন্ডাক্টরের হাসিমুখ যেন অভ্যর্থনার মিনতি, আর সেই হাসির সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়বে ইতিহাসের এক স্বর্ণাভ অধ্যায়।
কথিত আছে, মিত্তিরদের আদিনিবাস গোবরডাঙার নিকটবর্তী ইছাপুর গ্রামে। দীনবন্ধু মিত্রের ঠাকুরদা জয়রাম মিত্র বিবাহসূত্রে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সম্ভবত তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের একমাত্র কন্যা ছিলেন জয়রামের ধর্মপত্নী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারে এখানে স্থায়ী বসবাস গড়ে ওঠে জয়রামের। জয়রামের পুত্র কালাচাঁদ মিত্র দীনবন্ধুর পিতা। ১৮২৯ (মতান্তরে ১৮৩০) সালের ২৯ এপ্রিল দীনবন্ধু এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। দীনবন্ধুর জন্মসময়ে গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার পরিবার ছিল দুটো— বোস পরিবার ও চট্টোপাধ্যায় পরিবার। প্রজাবৎসল জমিদার হিসেবে তাঁদের খ্যাতি ছিল। তবে এই জন্য অন্যান্য বড়ো জমিদারের কাছে তাঁরা অত্যাচারিতও হয়েছেন। সেই তুলনায় মিত্র পরিবার ছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির বলা যায়। দীনবন্ধু পড়াশোনা করেন গাঁয়ের টোলে। ঠিক কোথায় টোল বা পাঠশালাটির অবস্থান ছিল আজও নিরূপণ করা যায় না। কথিত আছে, দীনবন্ধুর পরিবার-প্রদত্ত নাম ছিল গন্ধর্বনারায়ণ মিত্র। টোলের ছাত্রবন্ধুরা বিকৃত উচ্চারণে খ্যাপাত ‘গন্ধগোকুল’ অথবা ‘গন্ধ মিত্র’ বলে। তাই পণ্ডিতমশাইকে বলে টোলের খাতায় পরিবারের অজ্ঞাতে নিজেই হয়ে গেলেন দীনবন্ধু।
টোলের পড়াশোনা শেষ করে চলে এলেন কলকাতায়, একদম একা পরিবারের অজ্ঞাতে পালিয়ে। সালটা ছিল ১৮৪৬ । কারণ পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি ছিল না পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাবার। বরং বাবা কালাচাঁদ রায় আট টাকা মাসিক বেতনে একজন জমিদারের সেরেস্তায় তাঁকে কাজে লাগিয়ে দেন। কিন্তু দীনবন্ধু কলকাতায় কাকার বাড়িতে এসে হেয়ার সাহেবের ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হলেন, কেউ বলেছেন লঙ সাহেবের স্কুলে। স্কুলের পরীক্ষায় বৃত্তি পেলেন ১৮৫২ সালে। এবং ১৮৫৪-তে সেখান থেকে হিন্দু কলেজ, বৃত্তি পেলেন এখানেও। কিন্তু পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে হিন্দু কলেজের পাঠ শেষ হবার আগেই ১৫০ টাকা বেতনে ডাকবিভাগের চাকরিতে যোগ দিয়ে চলে যান পাটনা। সেটা ১৮৫৫ সাল। সেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে বদলি হলেও যশোর-নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় কেটেছে তাঁর বেশি সময়। ‘নীলপ্রদেশ’ বলে খ্যাত অথবা কুখ্যাত এই অঞ্চলের চাষীদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের অভিজ্ঞতায় রচিত হয় ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০)। নাটকটি অনুবাদ করলেন মধুসূদন দত্ত, পাদ্রী লঙ সাহেবের পরামর্শে। অপরাধের সাজা পেলেন লঙ, এক বছরের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা। জরিমানার টাকা শোধ করলেন সেকালের স্বনামধন্য, একালেও অবশ্য-স্মরণীয়, তরুণ কালীপ্রসন্ন সিংহ। ইতিহাসের এক আলোড়িত অধ্যায়। আর দীনবন্ধু লিখে চলেছেন ‘সধবার একাদশী’, ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’, ‘লীলাবতী’, ‘জামাই বারিক’, ‘কমলে কামিনী’, ‘কুঁড়ে গরুর ভিন্ন গোঠ’ প্রভৃতি। বেলগাছিয়া থিয়েটারের ‘রত্নাবলী’র মহলা থেকে ফেরার সময় পাইকপাড়ার গলিপথে বাংলা নাটকের ভবিষ্যত নিয়ে বন্ধু গৌরদাস বসাকের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মধুসূদন। সেই আশঙ্কার কথাই প্রকাশিত হয়েছিল ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের উপক্রমণিকায় সংযোজিত গানে— ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে / মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে / নিরখিয়া প্রাণে নাহি হয়।’ তাঁর নিজের লেখা নাটক তো বটেই, সেই আক্ষেপের কাল যেন শেষ হয়ে গেল চৌবেড়িয়ার মিত্রবাড়ির দীনবন্ধুর সৃষ্টিসম্ভারের জোগানে।
চৌবেড়িয়ার ইতিহাস দীনবন্ধু নামের গরিমার সঙ্গে যুক্ত হলেও রয়েছে কিছু স্থানিক পুরনো ইতিহাস। আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহ বঙ্গভূমিতে মোগল আধিপত্য বাড়াতে যখন প্রথম আসেন, তখন কাশীনাথ রায় নামক এক স্থানীয় রাজা তাঁকে সবিশেষ সাহায্য করেন। অনেকেই মনে করেন এই কাশীনাথ রায় চৌবেড়িয়া দুর্গের প্রতিষ্ঠাতা। চারদিকে যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত বলে তিনি নাম রাখেন চতুর্বেষ্টিত দুর্গ, তা থেকে আজকের চৌবেড়িয়া। সম্রাট আকবর কাশীনাথের যুদ্ধনৈপুণ্যে ও সাহসিকতার জন্য তাঁকে সমরসিংহ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই কাশীনাথ এক গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর বিধবা স্ত্রী গুপ্তঘাতককে চিহ্নিত করে মোগল দরবারে অভিযোগ করলে বসানো হয় বিচারসভা। আকবরের রাজস্ব-সচিব টোডরমল এলেন চতুর্বেষ্টিত দুর্গে। শাস্তি দেওয়া হলো কাশীনাথের গুপ্তঘাতককে। আর এখান থেকেই শুরু হলো মোগলদের বঙ্গবিজয়ের সূচনাপথ। রমেশচন্দ্র দত্ত এই চতুর্বেষ্টিত দুর্গের পটভূমিকায় লিখেছিলেন তাঁর ‘বঙ্গবিজেতা’ উপন্যাস বনগাঁর বকুলতলায় বসবাসকালে। এসব থেকে অনুমিত হয় চৌবেড়িয়া অন্তত চারশো বছরের বেশি সময়ের পুরনো গ্রাম। যার কিছু কিছু সাক্ষ্য আজও বর্তমান।
আলো-আঁধারিতে ঘেরা সেই অতীতের উপরে দৃশ্যমান অতীত দীনবন্ধু মিত্রের বাসভবন অথবা জন্মভিটে। যে বাড়িতে সোজা কাঁঠালপাড়া থেকে ঘোড়ায় চেপে একদা হাজির হতেন স্বয়ং সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র। কল্যাণীর নিকটবর্তী কাঞ্চনপল্লী থেকে নৌকাযোগে আসতেন গুপ্ত কবি ঈশ্বরচন্দ্র। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও এসেছেন এই সাধনপীঠে। আর সাধনপীঠের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামজীবনের ভালো-লাগা নানান উপাচার। এমনকি দীনবন্ধুর নাট্যকার হয়ে ওঠার নানান বাস্তব প্রেরণাভূমি। দীনবন্ধুর বাড়িটি ধ্বংসের পথে হলেও একটা পরিকাঠামো চোখে পড়ে। বেশ বড়োসড়ো দালান। বাসঘর, রান্নাঘর, বৈঠকখানা প্রভৃতি আলাদা অস্তিত্বের জানান দেয়। বৈঠকখানার উত্তরপাশে দীনবন্ধুর প্রসূতিস্থান, বর্তমানে জায়গাটা ফাঁকা। পাশে একটা বিশাল বাবলাগাছ রয়েছে কালের সাক্ষী রূপে। কিন্তু সেটা যে দীনবন্ধু মিত্রের আমলের, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। ২৩ শতক জমির ঠিক মাঝামাঝি দালানটি গড়ে উঠেছিল। সামনে বেশ খানিকটা খোলা চত্বর। বামদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্রোঞ্জে তৈরি দীনবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি।
নাট্যকার দীনবন্ধু সমকালে নন্দিত, একালের নাট্য-ইতিহাসচর্চায় অবিচ্ছেদ্য। ‘সধবার একাদশী’, ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ থেকে ‘কমলে কামিনী’ সবকিছুই এক-একটা বিশিষ্টতায় স্মরণীয়। কিন্তু ‘নীলদর্পণ’-এ তাঁর প্রতিভা যথার্থ স্ফুর্তি পেয়েছে কি না, এই প্রশ্ন তুললেও স্বীকার করতে হবে দীনবন্ধুর খ্যাতির প্রধান সোপান ‘নীলদর্পণ’-ই। সমকালের চাষীসমাজের জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে লেখা এই নাটক দীনবন্ধুকে কালজয়ী করেছে এবং এই নাটকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে দীনবন্ধুর অভিজ্ঞতা কঠিন বাস্তবতানির্ভর। এগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন মূলত নিজের জন্মভূমির আশেপাশের জীবন থেকে, কখনও কর্মক্ষেত্র থেকে। চৌবেড়িয়া এবং তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম-জনপদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে ‘নীলদর্পণ’-এর উপাদান। উনিশ শতকের বাংলার নীলযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা চলে। নদিয়া ও যশোরকে বলা হতো নীলপ্রদেশ। দীনবন্ধুর বাসভূমি নদিয়ার চৌবেড়িয়া থেকে মাইল ছয়েক দূরে ছিল মোল্লাহাটি কানসার্ন। এখানকার নীলকর সাহেব লালমুর ছিলেন ক্রুর প্রকৃতির মানুষ। তাঁর অত্যাচার আতঙ্কিত করে রাখত চাষীদের। দীনবন্ধুর বাড়ির কাছাকাছি শ্রীমন্তপুর, পাল্লা, নহাটা, নিশ্চিন্দিপুরে ছিল বেশ কয়েকটি নীলকুঠি। এমনকি চৌবেড়িয়াতেও একটি ছোটো নীলকুঠি ছিল। নীলকর সাহেবদের নানাবিধ অত্যাচারের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দীনবন্ধু। ‘নীলদর্পণ’ নাটকের তোরাপ চরিত্র তো তাঁর গ্রামের মীরপাড়ার বাসিন্দা তোরাপের আদলেই তৈরি। খুব সাম্প্রতিককালে এক খনন প্রক্রিয়ায় চৌবেড়িয়ার পাশের গ্রাম নিমতলায় যমুনা নদীর সঙ্গে যুক্ত একটা বন্দরপথ আবিষ্কৃত হয়েছে। যেখানে ছিল নীলের আড়ত। বোঝা যায় এখান দিয়েই যমুনা পথে নীল রপ্তানি করা হতো। দীনবন্ধু যখন ডাকবিভাগের চাকরি নিয়ে নদিয়ার হাঁসখালির বেড়গ্রামে বসবাস করছিলেন, তার কয়েকদিন আগে বগুলা নীলকুঠিকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছে নীল বিদ্রোহ, বিতাড়িত হয়েছে অত্যাচারী নীলকর মি. টুইড; স্থানীয় লোকজনের কাছে যার পরিচয় ছিল মাংটুডু সাহেব। এটা ১৮৫৮ সালের ঘটনা। ১৮৫৯-এ চূর্ণীপাড়ের গ্রাম চৌগাছা এবং একটু দূরে পোড়াগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে নীল বিদ্রোহ নতুন প্রতিরোধের পথ খুঁজে নিতে শুরু করেছে। বিদ্রোহের মূল সংঘর্ষটি হয় হাঁসখালি-গোবিন্দপুরে। চাষীপ্রজার পক্ষে দাঁড়িয়ে লড়াইতে নেতৃত্ব দেন ছোটো এক জমিদার গোপাল তরফদার। নীলকর সাহেবরা প্রথমে তাঁকে গুম করে পরে নীলের উনুনে পুড়িয়ে দেয় মৃতদেহ। ফলে চাষীপ্রজাদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। দিকে দিকে নীলকুঠি আক্রান্ত হতে থাকে। দীনবন্ধু এইসব প্রত্যক্ষ ঘটনার অভিঘাতে ঢাকায় বসবাসকালে ‘নীলদর্পণ’ রচনা শুরু করেন। অর্থাৎ দীনবন্ধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি ‘নীলদর্পণ’ রচনার পেছনে তাঁর জন্মভূমি চৌবেড়িয়ার ভূমিকা বড়ো কম নয়।
স্বভাবতই স্ব-ভূমিতে দীনবন্ধু কিন্তু নির্বাসিত নন। সেখানকার মানুষ এখনও ভূমিপুত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবনত এবং তাঁকে নিয়ে গর্বিত। এই গর্বের জায়গা থেকেই ১৯৪৯ সালে এলাকার মানুষের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে দীনবন্ধু বিদ্যালয়। এবং সেটারও রয়েছে একটা ঐতিহাসিক পথপরিক্রমা। অনেকেই বিশ্বাস করেন আজ যেখানে রয়েছে চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয়, সেখানে একদা ছিল সবুজ ঘাসের গালিচা বনবীথির আড়ালে একটি গ্রামীণ টোল বা পাঠশালা। সেখানেই নাকি বালক গন্ধর্বনারায়ণের হাতে খড়ি। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো পাথুরে প্রমাণ নেই। যাই হোক না কেন, ১৯২৮ সালে আশ্বিনের ঝড়ে (আঞ্চলিক নাম ‘বীর’) সেই পাঠশালা যায় উড়ে। দীর্ঘ কুড়ি বছরের হিরন্ময় নীরবতা পেরিয়ে তদানীন্তন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোরীমোহন রায়, গোষ্ঠবিহারী চট্টোপাধ্যায়, ডাক্তার নূর আলী, হৃদয়রতন মিত্র, শশীভূষণ সর্বাধিক আলী, মোঃ ওয়াহেদ বক্স মণ্ডল প্রমুখের উদ্যোগে ঐ একই স্থানে শুরু হয় চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয়ের যাত্রা। জমি দান করলেন পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়, রণজিৎ বিশ্বাস ও মোঃ মোবারেক মণ্ডলের মতো বিশিষ্ট মানুষেরা। প্রথম প্রধান শিক্ষক ক্ষিতীশচন্দ্র মৈত্র। এরপর ধাপে ধাপে পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণি, মাধ্যমিক স্তর এবং সবশেষে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই রূপান্তরে অনেকের অবদান আছে সত্য। কিন্তু বিশেষভাবে উঠে আসে অশ্বিনী সরকার মহাশয়ের নাম, যিনি ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
আমরা কথা বলেছিলাম বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তীর্থজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন-প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি অশ্বিনীবাবুর নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় প্রণত হলেন বলা যায়। তীর্থজিৎ মুখোপাধ্যায় যখন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, প্রায় একই সময়ে অশ্বিনী সরকার পার্শ্ববর্তী নহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চৌবেড়িয়া আসেন। তখন একমাত্র প্রধান শিক্ষকের ঘরটা ছিল পাকা দালান। বাকি সবটাই মূলিবাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা টিনের ঘর। তখন সর্বশিক্ষা অভিযানের নামে স্কুলে সরকারি অনুদান আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি তেমনভাবে। সাহায্য বলতে এমপি-ল্যাডের টাকা, যা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন স্কুলকে দেওয়া হতো। কিন্তু তার পরিমাণ কখনও ষাট হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেত না। এইসব সামান্য সঞ্চয় নিয়ে সত্যি সত্যিই কতটা কী করা সম্ভব, এই প্রশ্ন অশ্বিনীবাবুকে ভাবিয়েছে। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে চৌবেড়িয়াসহ আশেপাশের নানান গ্রামের মানুষকে নিয়ে সভা ডাকেন প্রধান শিক্ষক অশ্বিনী সরকার। স্কুলের বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সামনে। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের বিশাল কর্মযজ্ঞ। পাঁচ থেকে পঞ্চাশ হাজার সব ধরনের পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এমনকি যে মানুষটি হয়তো ষাট টাকা দিতে রাজি হয়েছেন এবং প্রতিমাসে পাঁচ টাকা করে দেবেন, সেখানেও নির্দিষ্ট দিনে রসিদ বই হাতে পৌঁছে যেতেন অশ্বিনীবাবু নিজেই, এমনটাই শোনা গেল বর্তমান প্রধান শিক্ষকের মুখে। গোটা স্কুলবাড়ির নীচের তলায় সমস্ত দাতার নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। এভাবে সেই সময়ে বত্রিশ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে স্কুলবাড়ির উন্নতিসাধন করলেন অশ্বিনী সরকার ও তাঁর সহকর্মীরা। তিনতলার বিশাল অট্টালিকা, সাড়ে আটশো ছাত্রের কলকাকলিতে চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয় আজ মুখর। প্রতি বৎসর দীনবন্ধু উৎসব প্রচলন করে আর এক অক্ষয় কীর্তি রেখে গেছেন অশ্বিনী সরকার মহাশয়। আর স্কুলের ঠিক মাঝখানে দীনবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি বড়ো যত্ন ও শ্রদ্ধায় স্থাপিত। যার সামনে দাঁড়ালে দীনবন্ধু মিত্রের উদ্দেশে মাথা নুইয়ে আসে তো বটেই, সেই সঙ্গে আভূমি প্রণতি জানাতে ইচ্ছে করে এক নীরব কর্মী সংগঠনের প্রধান সেনাপতি অশ্বিনী সরকারের উদ্দেশে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে তিনি যখন সম্মানিত হন, তখন দীনবন্ধুর উত্তরাধিকার তো খুশিতে চোখের জল ফেলবেই। সেই আনন্দাশ্রুই যেন ছলছলিয়ে উঠতে দেখা গেল বর্তমান প্রধান শিক্ষক তীর্থজিৎ মুখোপাধ্যায়ের চোখে।
দীনবন্ধু মিত্রের বাসভবনের উত্তর-পশ্চিমে কয়েকশো মিটারের মধ্যে যেমন চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয়, তেমনই পূর্বদিকে কয়েকশো মিটারের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্রের ধর্মপত্নী অন্নদাসুন্দরীর নামে গড়ে উঠেছে অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পিছনে জড়িয়ে আছে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম। প্রথমজন তদানীন্তন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস, দ্বিতীয়জন দীনবন্ধু মিত্রের বংশধর সুশীল মিত্র এবং তৃতীয়জন অবশ্যই অশ্বিনী সরকার মহাশয়। গল্পটা আমাদের বলছিলেন তীর্থজিৎবাবু। কান্তি বিশ্বাস ১৯৯৯ সালে দীনবন্ধু উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু বিদ্যালয়ে। নহাটা হাইস্কুলের তাঁর একদা সহকর্মী অশ্বিনীবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অগ্রজ-অনুজের। অশ্বিনীবাবুর ঘরে বসে কান্তিবাবু জিগ্যেস করেন, ‘অশ্বিনী, তোমার কটা মেয়ে?’ উত্তর করেন অশ্বিনী সরকার, ‘ছয়শো মেয়ে আমার।’ অনুষ্ঠানমঞ্চে কান্তিবাবু ঘোষণা করলেন, গাঁয়ের মানুষ চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে এই চৌবেড়িয়াতে একটি গার্লস স্কুল গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগ তিনি নিতে পারেন।
কিন্তু বিদ্যালয়ের নামটা তিনি ঠিক করে দেবার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কান্তিবাবুর পরেই বক্তব্য রাখেন দীনবন্ধু মিত্রের বংশধর সুশীল মিত্র। তিনি জানালেন, ‘সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করলে গার্লস স্কুলের জন্য যে জমি দরকার, আমি সেই পরিমাণ জমি দান করতে আগ্রহী।’ শুরু হল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য সলতে পাকানোর ইতিহাস। একটি কমিটি তৈরি হলো, যার সভাপতি দীনবন্ধু মিত্রের বংশধর সুশীল মিত্র এবং নহাটার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী রবীন্দ্রনাথ সরকার হলেন সাধারণ সম্পাদক। ইতিমধ্যে কান্তি বিশ্বাস তাঁর স্ব-পছন্দে বিদ্যালয়ের নাম ঠিক করে পাঠিয়েছেন দীনবন্ধু মিত্রের সহধর্মিনী অন্নদাসুন্দরীর নামে। ২০০১ সালের ১৩ জানুয়ারি সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘অন্নদাসুন্দরী মিত্র বালিকা বিদ্যালয়’। কথামতো ওই সালেই বড়ো রাস্তা লাগোয়া এক বিঘা জমি বিদ্যালয়ের নামে দলিল করে লিখে দিলেন সুশীল মিত্র। প্রথম দুই বছর দীনবন্ধু বিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ক্লাস হয়েছে। পরে নির্দিষ্ট জমিতে বাড়ি তৈরি হলে সেখানে নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। শুরুতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত,
২০০৫-এ মাধ্যমিক। শোনা কথা এই যে, অশ্বিনী সরকারের হাতে কান্তি বিশ্বাস নিজে বিদ্যালয়ের কাগজপত্র তুলে দিয়ে নাকি বলেছিলেন, ‘অশ্বিনী, এই নাও তোমার মেয়েদের বাড়ি।’ একথা শুনে প্রধান শিক্ষক অশ্বিনী সরকারের চোখে জল এসে গিয়েছিল কি না আমরা জানি না, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি যে ওই অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার ইতিহাসে এই বিদ্যালয়ের জন্য একসূত্রে বাঁধা পড়েছিল তিনজন মানুষ– পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস, দীনবন্ধু মিত্রের বংশধর সুশীল মিত্র এবং সর্বজনপ্রিয় মাস্টারমশাই অশ্বিনী সরকার।
সেই চৌবেড়িয়ায় অবস্থিত দীনবন্ধু মিত্রের বাসভবন ‘দীনধাম’ পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০১০ সালে। হেরিটেজ তালিকায় ২১৪ নম্বরে রয়েছে শ্রীপল্লী-বারাকপুরে অবস্থিত বিভূতিভূষণের বাসভবনের নাম। ২১৫ ক্রমিকে তালিকাভুক্ত দীনবন্ধু মিত্রের বাসভবন। হেরিটেজ কমিশনের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে House of Dinabandhu Mitra, Rural area, Village: Chauberia, P.S. Gopalnagar, Dist. North 24 Parganas (26.04.204)। কিন্তু ঘোষণার চোদ্দো বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও হেরিটেজ তকমা পাওয়া দুটো বাড়ির একটিতেও সরকারি উদ্যোগে কোনও কাজ হয়নি। এমনকি টানানো হয়নি হেরিটেজ ঘোষণার কোনও ফলক। দুটো বাড়িতে সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকার কারণ সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে মজার কথাও শোনা যায়। বিভূতিভূষণের উত্তরসূরিদের সহযোগিতা না থাকার জন্য নাকি বাসভবনটি অধিগ্রহণ করে কোনও সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে কৈফিয়ত দেওয়া হয়। আর দীনবন্ধুর উত্তরসূরিরা জমির আসল পর্চা-রেকর্ডসহ কাগজপত্রসহ হেরিটেজ কমিশন অফিস, বারাসতে জেলাশাসকের অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও সুরাহা পাননি। দীনবন্ধু মিত্রের বর্তমান উত্তরসূরিদের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশীল মিত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ২০১৭-১৮ সালে হেরিটেজ কমিশন থেকে সংস্কারের কাজ শুরু করার জন্য ইঞ্জিনিয়াররা আসেন, জমির পরিমাপ করে তিরিশ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। কিন্তু বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ষোলো লক্ষ টাকা। ফলে একটি সংশোধনী পরিকল্পনা প্রেরিত হয়। মৌখিকভাবে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন সমস্ত পরিকল্পনা শেষ করে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে ‘নবান্নে’। সেইমতো ২০১০-এর ১৮ আগস্ট সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানান দীনবন্ধু মিত্রের বর্তমান উত্তরসূরিরা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজ পর্যন্ত তাঁরা কোনও উত্তর মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাননি। এমনকি শুরুও হয়নি দীনবন্ধুর ‘দীনধাম’ সংস্কার ও সংরক্ষণের কোনো কাজ।
২০২৪-এর ১ নভেম্বর পূর্ণ হচ্ছে উনিশ শতকের নবজাগরণের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী দীনবন্ধু মিত্রের তিরোধানের সার্ধশতবর্ষ, ২০২৮-এ শুরু হবে তাঁর জন্মদ্বিশতবর্ষ এবং শেষ হবে ২০২৯-এ। এই সময়কালে দ্বিশতবর্ষ উদযাপনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দীনবন্ধু মিত্রের জন্মভিটে সংস্কার সংরক্ষণ ও সংগ্রহশালা গড়ে উঠুক— এই দাবি স্থানীয় মানুষের, দীনবন্ধু অনুরাগীদের এবং সম্ভবত গোটা বাংলার সচেতন মানুষেরও।