নিজস্ব প্রতিনিধি— তরুণ মজুমদারের ছবি৷ এই কটা শব্দ বলে দেয় অনেক কথা৷ একটা ছবি যা পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটানোর, ভালো অভিনয় উপভোগ করার সাথে অনেক ভালো গানের সম্ভার পাওয়া৷ এই উপাদানগুলো ছিল ওঁর ছবির ভীত৷ ছবির গল্প বলিয়ে হিসেবে খুব সহজ-সরলভাবে ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন৷ যদিও প্রথম দিকে নিজের একার নামে ছবি পরিচালনা করেননি৷ যাত্রিক-এর ছত্রছায়ায় ছবি পরিচালনা শুরু করেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত চাওয়া পাওয়া ছবি দিয়ে৷ যথেষ্ট সফল হয় সেই ছবি৷
তিনি শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখার্জির সাথে যৌথভাবে ছবি পরিচালনার কাজ শুরু করেন যাত্রিক নামে৷ পরে একক নামে পরিচালনার কাজ শুরু করেন৷ গান ছিল তাঁর ছবির অন্যতম প্রধান উপাদান৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর সর্ব প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার৷
সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশনের উদ্যোগে এক সন্ধ্যা বহু সুর গত ১১ এপ্রিল, ২০২৪ ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে বিকেল ৫টা থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল৷ ছিল গীতি আলেখ্য তরুণ গাথা৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা, গ্রন্থনায়, পরিচালনায়, ভাষ্যপাঠে ছিলেন সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব আচার্য্য৷ পরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন লোকগানের জনপ্রিয় দল ‘দোহার’৷ তরুণ মজুমদারের ছবি মানেই সঙ্গীত নির্ভর৷ তাঁর ছবিতেই সম্ভবত সব থেকে বেশি রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার হয়েছে৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর সব থেকে প্রিয় ও কাছের সঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার৷ তাঁর ছবি মানেই সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়৷ গান সব সুপার হিট৷ হিন্দি ছবিও পরিচালনা করেছেন, রাহগীর তাতেও সুরকার হেমন্ত৷
তবে হিন্দি বালিকা বধূ-তে সুরকার ছিলেন রাহুল দেব বর্মন৷ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে বালিকা বধূতে, যখন বাংলায় করেন, দেবশ্রী রায়কে প্রথম দেখা যায় কুহেলী ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে, পরে নায়িকা হন দাদার কীর্তি-তে, সাথে তাপস পালেরও আত্মপ্রকাশ দাদার কীর্তি ছবিতেই৷ অমিত কুমারের কেরিয়ারের সর্ব প্রথম জনপ্রিয় গান ‘বডে় আচ্ছে লাগতে হ্যায়’ তরুণ মজুমদারের বালিকা বধূ ছবিরই গান৷ জীবনপুরের পথিক রে ভাই হোক বা হরিদাসের বুলবুল ভাজা, কে জেগে আছো, ফুলেশ্বরী ফুলের মতো নাম, খোঁপার ওই গোলাপ দিয়ে, আঁধারে কখন এসে তরুণ মজুমদারের ছবির গান চিরকালের৷ সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন এর উদ্যোগে তরুণ মজুমদারের ছবির গান নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ছিল আরো এক বিশেষ চমক৷ বাংলা নববর্ষে তরুণ মজুমদারের ছবির পোস্টার, বুকলেট কভার দিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হলো এই দিন৷ এতে আছে যাত্রিক এর চাওয়া পাওয়া, স্মৃতিটুকু থাক থেকে তরুণ মজুমদারের এককভাবে পরিচালিত ছবি পলাতক, বালিকা বধূ, কুহেলী, ফুলেশ্বরীর মতো ছবির পোস্টার, বুকলেটের ছবি সুদীপ্ত চন্দের সংগ্রহ থেকে৷ ছবির প্রচারে ব্যাবহূত এই সকল মাধ্যমকে নববর্ষের প্রাক মুহূর্তে বাংলা ক্যালেন্ডারে প্রকাশ করা এ এক অভিনব বাঙালিয়ানার উদযাপনই বটে৷ অনুষ্ঠান দুটো ভাগে হয়৷ প্রথম ভাগে তরুণ মজুমদারের ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রয়োগ, পরে মূলত হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুরারোপিত গানের সম্ভার পরিবেশিত হয়৷
সঞ্জীব আচার্য্য জানান, ‘তরুণ মজুমদারের ছবি মানেই গান সুপার হিট হবেই৷ আর রবীন্দ্র সংগীতের এক অপূর্ব ব্যাবহার ওঁর ছবিতে দেখা গেছে৷ এই দুই মিলিয়েই গীতি আলেখ্য তরুণ গাথার পরিকল্পনা করেছি৷ সাথে থাকছে বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারে তরুণ মজুমদারের ছবির পোস্টার ও বুকলেট৷ এক সংগ্রহে রাখার মত ক্যালেন্ডার৷ এই ধরনের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য মানুষ যেন ভালো থাকেন, ভালো সংস্কৃতির চর্চা আমাদের মনকে উন্নত করে, সুস্থ রাখে৷’