কুটুস আর কাঠবিড়ালি

কাল্পনিক চিত্র

পার্থ রায়

কুটুসের খুব মন খারাপ। কিছু ভাল লাগছে না। বেশ কিছুদিন হল জিমু আসছে না। কুটুস রোজ সকালে মুড়ি, বাদাম, এটা সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওহো! তোমাদের কাছে ওদের পরিচয় দেওয়া হয়নি। কুটুস হল পাঁচ বছরের পুচকে একটা ছেলে। আপার কেজিতে পড়ে। আর জিমু হল একটা কাঠবিড়ালি। জিমু নামটা কুটুসের দেওয়া।

তিন চার মাস আগের কথা। এক সকালবেলা কুটুস ওদের বাড়ির ব্যালকনিতে বসে আছে। এমন সময় জিমু এসে হাজির। চোখ গোল করে ভয়ে ভয়ে দেখছিল। গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ। ইয়া মোটা ঝাঁকড়া লেজ। খুব ছটফট করছিল। পরে অবশ্য মায়ের কাছে শুনেছে কাঠবিড়ালিরা ওরকমই। সব সময় হুটোপুটি করে।


যাই হোক, কুটুসও অবাক। হঠাৎ কেমন চলে এসেছে কাঠবিড়ালিটা। কুটুস চুপটি করে বসে আছে। যা ছটফট করছে নড়লে যদি পালিয়ে যায়। আগে তো কখনও এত সামনে থেকে কাঠবিড়ালি দেখেনি। দূর থেকে দুই একবার এবং বইতে ছবি দেখেছিল। আর নজরুল ইসলামের লেখা ‘খুকি ও কাঠবিড়ালি’ কবিতাটা পড়েছিল। কী দারুণ কবিতা! কুটুস গড়গড় করে বলে দিতে পারে। কিছু সময় পরে সাহস করে ফিসফিস করে বলল, ‘আমার নাম কুটুস। খিদে পেয়েছে? কী খাবি?’। মনে হল যেন কান খাড়া করে শুনল। চুপ করে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে দুটো হাত বুকের কাছে নিয়ে একটু থামল। কুটুস আবার বলল, ‘কবিতায় পড়েছি তুই পেয়ারা খাস। আমাদের তো পেয়ারা গাছ নেই। মুড়ি, বাদাম, বিসকিট আছে। নড়িস না। আমি নিয়ে আসছি।’ এই বলে কুটুস তো ভেতরে গেল। ওমা! বাটিতে করে মুড়ি, বাদাম নিয়ে এসে দেখে সে নেই। পালিয়েছে। কুটুসের খুব দুঃখ আর রাগ হল। আড়ি!

ও বাবা! পরের দিন সে ব্যাটা ঠিক হাজির। কুটুস মুখে যাই বলুক। আজকে আগে থেকেই মারি বিসকিট আর মুড়ি রেখে দিয়েছিল। একটা ছোট বাটিতে। কাঠবিড়ালিটা বার কয়েক কুটুসকে দেখল। তারপরে দিব্যি খেতে শুরু করে দিল। কুটুর কুটুর করে। কুটুস খুব খুশি। সব রাগ গলে একেবারে জল।

এইভাবেই ওদের মধ্যে ভাব হয়ে গেল। কুটুস ওর নাম দিল জিমু। ভাব হয়ে যাবার পরে জিমু আগের থেকে বেশি থাকত। মাঝে মাঝে কিটির মিটির, কিচ কিচ করে কী যেন বলে। কুটুসও ওর সঙ্গে কথা বলে। জানতে চায় ওর বাবা মা ভাই বোন আছে কিনা। কখনও-সখনও কুটুসের মা দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। তখন জিমু একটু ভয়ে ভয়ে দেখে। কুটুস বলে, ‘ভয় পাস না। আমার মা। তোকে খুব ভালবাসে।’ জিমু বোঝে। পালিয়ে যায় না।

প্রথম যেদিন জিমু কুটুসের হাত থেকে বাদাম খেয়েছিল, সেদিন এত খুশি হয়েছে যে সবাইকে ডেকে ডেকে বলেছে যে, জিমু ওর হাত থেকে খাবার খেয়েছে। ওর খেলার সাথীরাও জেনে গেছে জিমুর কথা।

কুটুসের মন খারাপ বলে ওর বন্ধুদেরও মন খারাপ। কুটুস ওদের সঙ্গে খেলছে না। শুধু মন খারাপ করে বসে থাকে। সেদিন তিতাস এসে বলল, ‘আমি দশমীর দিন মা দুর্গার কাছে বলেছি ফিরে যাবার আগে জিমুকে যেন খুঁজে দিয়ে যায়। দেখিস তোর জিমু ঠিক ফিরে আসবে। এবার চল না রে। একটু খেলবি।’ কুটুসের মনে একটু আশা হল। সেদিন একটু খেলল।

এখন পুজোর ছুটি চলছে। সকালে কুটুস তখনও ঘুমিয়ে আছে। ওর মা ওকে আদর করে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বলল, ‘কুটুস সোনা তাড়াতাড়ি ওঠ। দ্যাখ কে এসেছে!’

ওমা! এ যে জিমু! একটু রোগা হয়েছে। মা দুর্গাই জিমুকে খুঁজে দিয়েছে। কুটুসের খুশি দেখে কে! সেদিন বাড়িতে পাকা পেয়ারা ছিল। জিমু গবগব করে খেল।