নকুর নৌকা

অঙ্কিত চিত্র

প্রসেনজিৎ দত্ত

সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। নকু আজ স্কুলে যায়নি। বাড়িতে আছে খুব আনন্দে। দোতালার ঘরে জানলার কাছে বসে, চোখ রেখেছে পদ্মপুকুরের দিকে। জল বাড়তে বাড়তে একসময় সবকটা সিঁড়ি ডুবেছে। রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান সব জায়গায় জল থৈথৈ।

জামরুল গাছের ডালে একটা চড়ুই সমানে ডেকে চলেছে। হাওয়ার চোটে ওদের ঘুলঘুলির ভেতরে থাকা বাসা ভেঙে গেছে। নকু মুখ বাড়িয়ে দেখে, ওর ছোট্ট ছানা জলে পড়ে গেছে। বাঁচার জন্য ডানা ঝাপটে চলেছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ি যাওয়ার ফলে ঢেউ খেলে যাচ্ছে রাস্তায়। তার ফলে খাবি খাচ্ছে ছোট্ট ছানা।


নকুর ভীষণ কষ্ট হয়। পশুপাখি ওর ভীষণ পছন্দ। তাই তাড়াতাড়ি পড়ার ঘর থেকে পিচ বোর্ড, আঠা, ঝাঁটার কাঠি, আইসক্রিমের চামচ নিয়ে আসে। এরপর একে একে কাগজ কেটে, চোখের নিমেষে পিচ বোর্ড দিয়ে বানিয়ে ফেলে মাঝারি সাইজের একটা জাদুকরি নৌকা। তার মধ্যে সুন্দর করে একটা ছাউনি বানিয়ে দেয়। দুপাশে দুটো চামচ দিয়ে বানিয়ে ফেলে ছোট্ট বৈঠা। নৌকা বানানো শেষ হতেই, পা টিপে টিপে একতলায় নেমে যায়। মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে একটা টুল নিয়ে আসে। তারপর খুব সাবধানে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। হাঁটু সমান জল চারিদিকে। এদিকে বেশ কিছু চড়ুই এসে জড়ো হয়েছে এর মধ্যে। খুব জোরে ডাকছে। যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে কিছু ওকে।

নকু চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নৌকাখানা জলে ভাসিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে ঢেউয়ের তালে চলতে থাকে নৌকা। ছানাটা তখনো চেষ্টা করে চলেছিল বাঁচার। নকু এবার মুখে আওয়াজ করে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। চড়ুই পাখিরা যেভাবে কথা বলে ঠিক সেই ভাবে। পাখিদের ভাষা ও জানে। গাছের ডাল থেকে তখন বাকিরা সোজা একটা সরু ডালে এসে বসেছে। নৌকাটাও দুলতে দুলতে একেবারে ছানার কাছে এসে ঠেকেছে আশ্চর্য ভাবে। চড়ুই ছানা খুব ধীরে ধীরে আইসক্রিমের কাঠি আঁকড়ে ধরে উঠে পড়ে নৌকার ভেতরে। ঝেড়ে নেয় জল। তারপর ওপরের দিকে তাকিয়ে কিচকিচ করে ডেকে ওঠে। ততক্ষণে ছানার মা উড়ে এসে বসে নৌকায়। ছোটো ঠোঁট দিয়ে একটু আদর করে দেয়। তাই দেখে নকুর ভীষণ আনন্দ হয়। মনে হয় যেন পৃথিবীর সব মায়েরা একরকম হয়। নিজের সন্তানদের সবসময় খেয়াল রাখে, ভালোবাসে।

এরপর চড়ুই পাখি তার ছানাকে নিয়ে সোজা উড়ে গিয়ে বসে ঘুলঘুলির ভেতর। ঘরে ফিরে এসে খুব ডাকাডাকি করে। যেন সকলকে জানাতে চায়, আজ নকুর নৌকা ছিল বলেই একটা প্রাণ  বেঁচে গেল।