আলোর সুজন

কাল্পনিক চিত্র

অমিতাভ সরকার

সামনে দিয়ে কে গেল ওটা? তনিমা না! এত বছর পরেও মুখটা চিনতে একটুও অসুবিধে হলো না সৌতমের। এতদিন পরে এখানে! ওর থাকার কথা তো প্যারিসে। একবার জিজ্ঞেস করে দেখলে হয় না! না থাক, যদি না হয়! কিছু যদি ভেবে বসে। পরক্ষণেই মনে হলো, জিজ্ঞেস করে দেখিই না একবার। কী আর ভাববে? সবার জীবনে নানান চড়াই-উৎরাই তো লেগেই আছে। পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে এক অদৃশ্য লড়াই নিয়ে নিজেদের মতো করে প্রতিদিন মানুষ এগোচ্ছে। কার সঙ্গে, কেনই বা, এই কোথায়ই বা শেষ— কিছুই জানা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় সবার জায়গায় সবাই যেন বড্ড বেশি একা। চেনা মুখগুলো সব হারিয়ে যাচ্ছে, যারা আছে তারাও যে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই রকম সময়ে যখন নিজের বলে কারোর ওপর ভরসা করাই মুশকিল, তখন হঠাৎ পুরানো বান্ধবীকে দেখলে মনটা তো ভালো লাগবেই।

—আরে সৌতমদা না! তুমি তো দেখছি আগের মতোই আছো।
তনিমার দিকে এক পলক তাকিয়ে কী ভেবে নিজের মনেই হেসে ফেললো সৌতম।
—কী উত্তর দিলে না! হাসছো যে।
এ বয়সেও তনিমার কথা বলার ধরনটা সেই একইরকমই রয়েছে।
গলাটা ঝেড়ে কাশির মতো করে সৌতম বললো, থাকতে হয় তাই থাকা।


—কেন? বৌদি, বাবু, বৌমা এরা!
—আমার কথা থাক, বল, তুই কেমন আছিস? এতদিন পরে এভাবে তোর সঙ্গে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।
—আসল কথা হলো সময়। সময়ই সব ব্যবস্থা করে দেয়, কখন কার সঙ্গে কীভাবে দেখা হবে, সেটা আমাদেরও যে অজানা।
—ঠিকই তাই। চল একটু বসি। তোর অবশ্য যদি আপত্তি থাকে…
—আপত্তির কিছু নেই। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ভেবে অকারণে আমি আর সময় নষ্ট করি না। আগে যা করেছি, করেছি। সে সব দিন চলে গেছে। কারা কী ভাবলো না ভাবলো, সেটা তাদের ওপরেই ছেড়ে দিই। যার যা ভাববার, সেটা সে ঠিকই ভাববে— আমি শত বললেও সে সেটাই করবে। কম তো দেখলাম না। ছাড়ো ওসব, তোমার কথা বলো—
—এখন রোজ বিকেলে জেটিঘাটের দিকটায় হাঁটতে আসি। মানুষ দেখি।

কত লোকের পারাপার এ পথে। কিছুক্ষণ থাকি, সন্ধ্যা হলে চলে যাই। ঘরে ঢুকলেই তো আবার শুরু হয়ে যাবে।
শুরু হয়ে যাবে মানে! সৌতমদা এসব কেন বলছে! এরকম তো হওয়ার কথা না। যতদূর জানে, বাবু, সৌতমদার ছেলে বিদেশে উচ্চপদে কর্মরত, ওখানেই থাকে। বৌমাও ওই অফিসে। টাকাপয়সার অভাব নেই, নিজের কাজ নিয়ে থাকে, বৌদিও যথেষ্ট ভালো, তাহলে?
সন্ধ্যে ছটার ঘণ্টা বাজলো। এখুনি একটা জেটি রওনা দেবে। পরেরটা আধঘণ্টা পরে। আস্তে আস্তে লোকের ভিড় জমছে, জ্বলে উঠেছে আলো, নদীর জলে বিলি কাটছে সাঁঝবেলার আধখানা চাঁদ, বাতাসে ঝাপটা দিচ্ছে সাগরের নোনা বালি, ছাতিমের মাতাল করা গন্ধ জানান দিচ্ছে, পুজো আসতে আর বেশি দেরি নেই।

সামনে একটি বছর বারো-তেরোর ছেলে ওর বাবার সঙ্গে ঢাক বাজাচ্ছিল, সাগরপারে ঘুরতে আসা মানুষজন ওকে কিছু টাকা দিতেই বাবার কাছে বায়না ধরলো, খেলনা কিনে দিতে হবে। এ বছর ওর একটাও খেলনা হয়নি। বন্যায় ভেসে গেছে সব— বাবা বেচারার মলিন পোশাক, শীর্ণ চেহারা— গ্রাম থেকে এসেছে বাড়তি কিছু আয়ের আশায়। পুজোর ক’দিন থাকবে, তারপর ফিরে যাবে। আসা আর যাওয়া— জীবনের এই তো কাজ। তার মধ্যেই কত কিছু যে হয়— এত সমস্যা— অসাম্য, বিভেদ, দারিদ্র্য, অসুখ— কত মানুষের ভিতরে কত যে কষ্ট— দেখে বোঝার উপায় নেই। বাবা খেলনা কিনে দেবে শুনে ছেলেটার মুখের আদলই পালটে গেল। ওকে দেখে সৌতম পিছিয়ে গেল সেইসব নুড়িপাথরের দিনগুলোয়।

—বাবা আমার একটা খেলা কিনে দেবে? আমি এবারও মন দিয়ে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করবো।
—আমি জানি, তোর উপর আমার ভরসা আছে, কিন্তু দেখিস বাবা, বড় হয়ে যেন পালটে যাস না। তখনও আমাদের কথা শুনে চলিস। এতে তোর ভালো হবে।

পড়াশোনাতে বরাবরই ওর বেশ মন ছিল। ছোটোর থেকেই সৌতম মা-বাবার খুব বাধ্য। বড়ো হয়ে এমনকি চাকরিজীবনে এসেও তার অন্যথা হয়নি। আত্মসম্মান, মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কাজ সে কোনোদিনও করেনি। পাশের ডিপার্টমেন্টের তনিমাকে ওর খুব ভালো লাগতো। তনিমারও তাই। মুখে না বললেও হাবেভাবে সেটা বুঝিয়ে দিতো। কিন্তু ব্রাহ্মণের মেয়েকে কায়স্থ ঘরে বিয়ের প্রস্তাব দিতে সৌতমের মা-বাবা রাজি হননি।

ওঁদের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলবার সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই সেদিন সৌতমের ছিল না। ফলে ইচ্ছে থাকলেও বুকে পাথর চাপা দিয়ে মা-বাবার পছন্দ করা পাত্রীকেই বিয়ে করতে হয়েছে। তবে পরমা তার সবকিছুরই খেয়াল রেখেছে, সংসারের কোনো ব্যাপারে তেমন খুব একটা ভাবতে হয়নি, সব ভার বউয়ের উপর দিয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েই নিজের কাজে এগিয়ে গিয়েছে, এখন সাহিত্যিক হিসাবে মোটামুটি ভালোই নাম। সৌতমের বিয়ের পরে পরে তনিমাও ওর ডিপার্টমেন্টেরই এক স্থপতিকে বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দেয়। আর দেখা হয়নি। তবে খোঁজ যে একেবারেই রাখতো না, তা নয়। বাবুর ছবি, পড়াশোনা, পরমার কথা, সৌতমের নতুন গল্পের বই— সবই যেমন তনিমার কাছে মেসেঞ্জার মারফৎ পৌঁছে যেতো, তেমনি অনিমেষের কাজের চাপ, ব্ল্যাড প্রেসার, ছোট্ট রুদ্রাণীর স্কুলের সাতকাহন— সৌতমের কিছুই অজানা থাকতো না। বিয়ে না হয়েও সম্পর্কটা নিছক বন্ধুত্বের রূপ নিয়েই সময়ের নিজস্ব খাতে বইছিল। হঠাৎ সামান্য ব্যাপার নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি— আর তাতেই নাটকের যবনিকা। সামনাসামনি কথা বলে যেটা সহজেই বোঝানো যেত, হাজার মাইল দূর থেকে ইংরেজি হরফে কয়েকটা নিষ্প্রাণ বাংলা বাক্য লিখে মীমাংসা তো হলোই না, বরং এক কথা দু’কথায় বিষয়টা আরও জটিল হয়ে উঠলো। কখন কোন কথা কাকে বলা উচিত বা অনুচিত, কে মনের মধ্যে ঠিক কী ভাবছে, কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কীভাবে তার মোকাবিলা করছে— একটা ফাইভ জি সেটের স্মার্টফোন তার সঠিক হদিস দিতে পারে না। বিজ্ঞান এখনো অত উন্নত হয়নি যে, মানুষের মন পড়ে ফেলার যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলবে। বহু বছর দু’পক্ষের এই আড়ি বজায় ছিল। এই কিছুদিন আগে ইউনিভার্সিটির বন্ধু রজতের কাছে রুদ্রাণীর বেঙ্গালুরুতে চাকরি, বিয়ে, তনিমার অসুস্থতা, গত বছর অনিমেষের ঘুমের মধ্যে হঠাৎই চলে যাওয়া— সবই শুনেছে, কিন্তু ও যে ওখানকার সব পাট চুকিয়ে একেবারে দেশে চলে এসেছে, সৌতম সেটা ঘুণাক্ষরেও জানতো না। রজত এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।

আকাশ মাটির ওই দূর সীমান্তে দুকূলে বিস্তীর্ণ জলরাশির সামনে দাঁড়িয়ে সেইসব কথাই ভাবছিল সৌতম। সব তো ভুলেই গেছিল। অনেক বছর পর আজ আবার। মধ্যে বয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়। কত ঢেউ এলো, এসে চলেও গেল, নদীর বুকে একলা দাঁড়িয়ে মনটা জীবনের ঠিক-ভুলের হিসেব কষে চলে। বিশাল পরমা প্রকৃতির নানান সমারোহের মাঝে জীবন কত ছোট্ট— কতটুকুই বা এর ব্যপ্তি।
তবুও কাজ করে যেতে হয়।

ইদানিং কোনোকিছুই যেন সৌতমের খুব একটা সহ্য হয় না। রাগটাও বয়সের সঙ্গে বাড়ছে। সারাক্ষণ মনের মধ্যে কী একটা খিঁচ ধরেই আছে। বাবু চাকরিতে চলে যাওয়ার পর এমনিতেই সৌতমের উপর পরমার তদারকি বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু একমাত্র ছেলে যে অফিসের সহকর্মী এক মারাঠি ব্রাহ্মণ মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে ওখানেই সংসার পাতিয়ে বসবে, সেটা পরমার কাছেও কল্পনাতীত ছিল। ছেলের সঙ্গে প্রথম পৌঁছে দিতে যায়, তখন অবশ্য সৌতম মেয়েটিকে দেখেছিল, মনে মনে ভালোও লেগেছিল। তবে একেবারে ছেলের বউ করে আনবে, এতটা ভাবতে সাহস পায়নি। তাই যখন শুনলো, বাবু ওকেই বিয়ে করছে, পরমা আপত্তি করলেও সৌতমের অমত হয়নি। বিয়ে মানেই অ্যাডজাস্টমেন্ট, পরস্পরের প্রতি নির্মোহ ভালোবাসা। ভাষা সেখানে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে না। হয়ওনি। ওরা ওখানে বেশ সুখেই আছে। সুযোগ-সুবিধা মতো নিয়ম করে ফোন করে, ছুটি পেলে ঘুরেও যায়, বৌমাও ভালোই বাংলা জানে, আর বাচ্চাটাকেও মারাঠির পাশাপাশি বাংলাটাও শেখাচ্ছে—

ভিডিও কলে কত কথাই বলে। কিন্তু পরমা যেন বেশি খিটখিটে হয়ে গেছে। সৌতমকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চায় না। ‘এটা করোনি, সেটা করোনি, এভাবে করো, ওইভাবে বসো না’, ‘এটা কী করলে’ —এতকিছু খেয়াল রাখার ঠেলায় সৌতম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। পরমার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা— তার আর ভালো লাগছে না। মনে হয়, এগুলো একটু কম হলেই সৌতমের মনের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হতো। সেজন্যই নিয়ম করে এ সময়টা সে একলাই হাঁটতে চলে আসে। আগে সকালেও বেরতো, কিন্তু গতবার শীতের পর থেকে পরমার যা হাঁটুর ব্যামো ধরলো, একা রেখে আসতে ভয় করে, নিজেও সব দিন পেরে ওঠে না। তবে যতটা পারে, পরমাকেও কাজে হাতে হাতে একটু সাহায্য করে দেয়৷ তাছাড়া কাজের বৌ তো আছেই। কিন্তু বিকেল হলে সৌতমের এদিকে আসা চাই-ই চাই।

ছবির শান্ত পাড়ে মেঘ ভাঙছে একটার পর একটা। আলোও কমার দিকে। বেশিক্ষণ দাঁড়ানো ঠিক হবে না। সিজন চেঞ্জের সময়, আবার ঠাণ্ডা না লেগে যায়। সেবার যা ভুগলো। ওকে সামলাতে গিয়ে পরমারও অসুস্থ হওয়ার যোগাড়।

—‘তখন থেকে কী এত ভাবছো? আমার দিকে তাকাও। এ কী! এ তো ঘেমে একেবারে চান করে গেছো। আমার কাছে একটু বোসো। ঘামটা মুছিয়ে দিই। বৌদিকে এখনও খুব ভয় পাও না? বাড়ি গিয়ে আমার কথা বলবে, দেখবে বৌদি রাগ করবে না। অনিমেষের ওরকম হতো। মুখে কিছু বলতো না, কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, কতবার জিজ্ঞেস করেছি, হেসে এড়িয়ে গিয়েছে, গতবছর শীতের এক সকালে আমাদের সবাইকে ছেড়ে— তখনও ওর মুখে হাসি লেগেই ছিল…’, —বলতে বলতে তনিমার চোখে জল চলে আসে। ‘তারপর ভেবে দেখলাম, যে কটা দিন আছি, নিজের দেশেই থাকবো, ওখানে বড্ড একা লাগছিলো, তাছাড়া বাড়িটারও একটা ব্যবস্থা করা দরকার, অনেক বছর ধরে খালি পড়ে আছে— দিদিও অসুস্থ, ওকে দেখারও তো কেউ নেই, তার ছেলেমেয়েরাও বাইরে। জামাইবাবুর যা অবস্থা, যেকোনো দিনই… এ সব চিন্তা করেই চলে এসেছি।

দিদির ওখান থেকেই ফিরছিলাম। এভাবেই দেখা হয়ে গেল। আসলে পথই মানুষের সবচেয়ে বেশি আপন। যতদিন চলা— ততদিনই সে আমার। যাই হোক, শরীরের দিকে খেয়াল রেখো। বয়স তো হচ্ছে— আমি যাই, এবার।

সৌতম চোখ আটকে গেল— তনিমার গলার লকেটে। কবেকার কথা। একবার বাড়ির পুজোয় এলে সৌতমের মা কেন জানি তনিমাকে লকেটটা দিয়েছিল— বহুদিন পর সৌতমের কাছে ওটাও একটা আলাদা অনুভব। সময় পিছনে নিয়ে গিয়েছে— আর ফিরে আসতে চাইছে না— সেই কলেজ মোড়, বেগমপাড়ার ঘাট, খ্রিস্টানদের বেরিয়াল গ্রাউন্ড, অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চ, ডিসেম্বরের মেলা— কোনো অনুষ্ঠানে নেমতন্ন এলে বই কিনে উপহার দেওয়া— দূরের আত্মীয়-বন্ধুদের চিঠি লেখা— ভালো খবর শুনে মিষ্টি মুখ করা— এখন সব কোথায়, মানুষগুলোও অদৃশ্য— আর যা আছে, সেটা তো কাঠামোর সামান্য কিছু অবশিষ্টাংশ। এ নিয়েই চলতে হবে।

সৌতমের মনে হলো এগিয়ে দিয়ে আসবে, সেটা বলতেও যাচ্ছিলো— এমন সময় প্রকৃতির চেহারাটাই গুলিয়ে গেল— একটু আগের শান্ত ভাবটা আর নেই— নিমেষের মধ্যে নেমে এলো ঘুরঘুট্টি অন্ধকার—
আকাশে মেঘ করেছে, পারে দমকা হাওয়া, সব আলো নিভে গেছে, বিদ্যুতের গম্ভীর গর্জন, এখনই ঝড় নামবে। এভাবে বসে থাকা আর ঠিক হবে না। এদিকে তনিমাকেও একা এখানে ছেড়ে যাওয়াটা ভীষণ অন্যায় হবে। সৌতম আজ সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্তও দেরি করলো না।
‘এই দুর্যোগের মধ্যে তোকে একলা ছাড়তে পারবো না। চল, আমার সঙ্গে। আজ রাতটা আমার এখানে থাক, পরমা আছে, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে, ওরও ভালো লাগবে, আর এরপরেও যখনই মনে হবে, চলে আসবি, সেদিন না হয়, মনের কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারিনি, কিন্তু আজ এই কথাগুলো না বললে আর হয়তো কোনোদিনই বলা হবে না— আর পরমাও সবই জানে।

অনেকটা পথ চলতে চলতে নদী যখন মোহনায় যাবার কাছাকাছি চলে আসে, তারও তখন পাড়টাকে বারবার আরও বেশি করে দেখতে ইচ্ছে হয়। সে হয়তো বুঝতে পারে, এভাবেই একদিন তাকে স্রোতে মিশে যেতে হবে— সবকিছু ফেলে রেখেই— কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবে না— একদিন যেভাবে এসেছি, সেভাবেই অনন্তের পথে— মাঝখানের এই সময়টুকুই যা দেখা হওয়ার— তাই এতদিন পরে একবার যখন পেয়েই গেছি, তখন আর তোকে এত সহজে ছাড়ছি না।

জানিস তো, ভবিষ্যৎই আমাদের ভালোবাসার গল্পের সবচেয়ে বড়ো পাঠক। মুহূর্তের অমোঘ সম্ভাবনার মধ্যেই রচিত হয় জীবনের আসল ভালো-মন্দ। শিক্ষিত হয়েও মানুষ আজ সংস্কারাচ্ছন্ন, তাই আসলটা পড়তে গিয়ে হোঁচট পায়। বিজ্ঞানের সার-সত্যগুলোও মুঠোফোন, ডেক্সটপে পিডিএফ ফরম্যাট বা বইয়ের পাতাতেই অক্ষর হয়ে মুখ লুকিয়ে থাকে। গোলাপ হয়ে ফুটে ওঠে না। চল, সামনে এগোই। আর দেরি হলে যে…’