উত্তম চক্রবর্তী
সুখ ও শান্তি এই দুটো অনুভব বা দুটো উপলব্ধিই মানুষ পেতে চায় একই সঙ্গে একই জীবনে। এমন কোনও মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শুধু সুখ চায় কিন্তু শান্তি চায় না বা শুধু শান্তি চায় কিন্তু জীবনে কোনও সুখ চায় না। সুখের মাপকাঠি যদি টাকা পয়সার প্রাচুর্য বা অঢেল সম্পত্তির ও আধুনিক জীবনের উপযোগী সমস্ত সুখের আয়োজন থাকা, তাহলে শান্তির মাপকাঠি নিশ্চয়ই নির্ধারিত হয় আপনি কতটা নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারেন বা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন তার উপর বা আপনার ভালোবাসার লোকেদের কত সুখে বা আনন্দে থাকতে দেখছেন তার উপর। দুনিয়ায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা অন্যের সুখ দেখেই শান্তি পান।
অন্যদিকে এমন অনেক মানুষও আছেন যাঁরা অন্যের সুখ বা শান্তি দেখতেই পারেন না। আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, অফিসের কলিগ বা প্রতিবেশী কারো টাকা পয়সার প্রতিপত্তি বা সুখের ও শান্তির সংসার সহ্যই করতে পারেন না। এই নেগেটিভ ফিলিংসটা এতটাই মারাত্মক যে অনেক মানুষ সেই সুখে বা শান্তিতে থাকা মানুষটার কোনও ক্ষতি হলে বা দুঃখ দেখলে মনে মনে আনন্দিত হন। এমনকি তাদের কোনও একটা ক্ষতি করতে পারলেই যেন খুশি হন। যদিও কোনোদিনই তাঁরা সেটা মুখে প্রকাশ করেন না বা কাউকে তার ভিতরের নিজস্ব অনুভূতিটা বুঝতেও দেন না। উল্টে সবার সামনে সমব্যথী বা দুঃখী হবার ভাণ করেন, কিন্তু নিজের মনে মনে বলেন, ‘বেশ হয়েছে, ভাল হয়েছে। বোঝো এবার কত ধানে কত চাল…’ ইত্যাদি। এদের মুখোশ পরা চেহারাটা চেনা মুশকিল।
ঠিক এরকমই একটা চরিত্র হল দেবশ্রীর, অনুজ হালদারের স্ত্রীর। অনুজ বিয়ের কিছুদিন পরেই বুঝতে পেরে যায় যে, ওর বড় বউদির মাসতুতো বোনটি কী চিজ একটা। সম্বন্ধের সময় তো এতটা বোঝা যায় না কাউকে। বেশ সুন্দর সেজেগুজে বাবা মার সামনে এমন ভাবে এসে বসেছিল যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। দেবশ্রী দেখতে মোটামুটি ভালই, গায়ের রঙও ফর্সা। বিএ পাশ ও সুশ্রী চেহারা। ওর বড়দা বাবা মা আর বৌদি গিয়েছিল মেয়ে দেখতে, অনুজ শুধু একবার মেয়েটির ফটো দেখেছিল। এক তো বউদির রেকমেন্ডেশন ছিল তার উপর বাবার তাড়া। ঠাকুমা চোখ বোজার আগেই অনুজকে বিয়ে দিতে চান উনি। দেখে শুনে দিন ঠিক করে বিয়েটাও হয়ে গেল একদিন।
মানুষের মুখ দেখে সে কী ভাবছে বা কেন ভাবছে কিংবা সে কীরকমের মানুষ এসব বোঝা খুব মুশকিল। একটা হিন্দি সিনেমায় দেখিয়েছিল যে ভিলেন সারাক্ষণ শুধু হাসে অথচ কেবল বদমাইশি করে বেড়ায়। এসব ক্ষেত্রে ‘ফেস ইজ দ্য ইনডেক্স অফ মাইন্ড’ কথাটা খাটে না।
বিয়ের কিছুদিন বাদেই গল্পচ্ছলে একটা কথা বলেছিল দেবশ্রী। তখন বলবার সময় হয়ত ও খুব মজা পাচ্ছিল, কিন্তু মেয়েটার চরিত্রের একটা নোংরা দিক উন্মোচন হয়েছিল সেদিন। দেবশ্রীর ক্লাসে ফার্স্ট গার্লের সঙ্গে ওর ভীষণ রেষারেষি ছিল। প্রায় প্রতিবারই মেয়েটি দেবশ্রীকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেত ফার্স্ট হয়ে। অনেক চেষ্টা করেও দেবশ্রী ফার্স্ট হতে পারছিল না। নাইন ক্লাসের ফাইনালের কয়েকদিন আগে সেই মেয়েটির খুব জ্বর ও সর্দি কাশি হয়। কয়েকদিন অসুখে ভুগে যেদিন ও স্কুলে এলো সেদিন নাকি দেবশ্রী ওকে দেখে আর ওর খুব জ্বর হয়েছিল শুনে গায়ে হাত দিয়ে ভীষণ সিরিয়াস ভাবে বলেছিল, ‘এ কী রে। তোর তো টিবি হয়েছে। তুই এবার ফাইনাল পরীক্ষা দিবি কীকরে?’ এই কথা শোনবার পর মেয়েটি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ডাক্তার-বদ্যি সব দেখাবার জন্য ওর বাবা মাকে চাপাচাপি করতে থাকে। এসব করতে গিয়ে মেয়েটি সেবার আর পরীক্ষাটাই দিতে পারল না। এদিকে দেবশ্রী সে বারই ফার্স্ট হয়ে ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠল। এখনো ওর বন্ধুকে বোকা বানাবার এই ঘটনায় ও ভীষণ মজা পায় আর হাসে।
দেবশ্রী না বললেও ওর বউদির কাছে বিয়ের অনেকদিন পর একদিন অনুজ শোনে যে, দেবশ্রীর উপরের বোন দীপালির বেশ কয়েকটা সম্বন্ধ ভেঙে গেছে দেবশ্রীর তোলা বিভিন্ন কারণে। যেমন কোনও ছেলের তাকানো খুব খারাপ, ওর ভাবী শালী মানে দেবশ্রীর দিকে খারাপ নজরে দেখেছিল। কোন ছেলের মা ভীষণ দজ্জাল মহিলা, দিদির ওখানে বিয়ে হলে খুব কষ্টে থাকবে বা কোন ছেলের বাবা ভীষণ রোগা, নিশ্চয়ই ভিতরে খুব কঠিন অসুখ আছে, বিয়ের পর দিদিকে শ্বশুরকে নিয়ে ভুগতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
অবশেষে ওর বাবা মা ঠিক করেন আগে দেবশ্রীর বিয়ে দেবেন আর তারপর বড় মেয়ের বিয়ে দেবেন। হয়েছেও তাই। দেবশ্রীর বিয়ের ছ’মাস বাদেই ওর বড়দির খুব ভাল এক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। এবার কিন্তু দেবশ্রী কোনোরকম খুঁত ধরবার সুযোগই আর পায়নি। যদিও দিদির বরকে দেখে অনুজের কাছে পরে বলেছে, ‘দিদির বরটা দেখতে ভাল ঠিকই কিন্তু ভীষণ ঢ্যাঙা। দিদিকে ওর পাশে কেমন যেন বেঁটে বেঁটে লাগছিল তাই না গো।’ অনুজ ওর স্ত্রীর কথার তেমন কোনও গুরুত্ব না দিয়ে বলেছিল, ‘একটু হাইটের ডিফারেন্স থাকলেও আমার কিন্তু তোমার দিদির বরকে বেশ ভাল লেগেছে।’ ফলে সেই রাতে দেবশ্রী সারারাত ওর দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছিল, অনুজকে ও ছুঁতেও দেয়নি।
দেবশ্রী প্রায়ই পাশের বাড়ির বাসবী বৌদির বাড়িতে যায় আড্ডা মারতে। রোজ বিকেলে দু’জন বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে পিএনপিসি করে। একদিন রাতে অফিস ফেরত বাড়ি ফিরে এসে অনুজ দেখল বৌ খুব হাসছে। কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল কাল রাতে নাকি বাসবী বৌদি ওর কত্তাকে খুব ঝেড়েছে আর আজ দাদা না খেয়েই অফিস চলে গেছে। কারণ কী, বৌদি দাদাকে শুনিয়েছে বিয়ের পর থেকে উনি বৌদিকে নিয়ে একবার পুরী ছাড়া আর কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাননি। অথচ দেবশ্রী ওর বরের সঙ্গে পুরী, দীঘা, দার্জিলিং, গ্যাংটক আর ভাইজাগ, কত জায়গায় ঘুরে এসেছে এই চার বছরে। এই নিয়ে দাদা বৌদির খুব হয়েছে একচোট।
অনুজ একটু অবাক হল ওর কথায়। এই বাড়িটাতে ওরা ভাড়া এসেছে মাত্র ছ’মাস হল। অনুজদের বাড়ি সোনারপুর। বাবা মা দাদা বৌদি সবাই ওখানে। শুধু অনুজই চাকরির সুবিধার্থে বেলেঘাটার এই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলে এসেছে। এখান থেকে ওর সল্ট লেকের অফিস অনেক কাছে হয়। যদিও প্রতি মাসে অন্তত দু’বার বাড়িতে গিয়ে ওরা একসঙ্গে থেকে আসে। কিন্তু এই ছয় মাসের মধ্যে বাসবী বৌদি এতসব জানল কী করে! অনুজ হাত পা ধুয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে দেবশ্রীকে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাসবী বৌদি আমরা এতো জায়গায় বেড়াতে গেছি জানল কোত্থেকে? নিশ্চয়ই তুমি বলেছ ওঁকে, না?’
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে দেবশ্রী সোফায় বসে বলল, ‘ওমা, আমি না বললে বৌদি জানবে কোথা থেকে? কেন বলব না? তুমিই ভাব একবার, আট বছর হল বিয়ে হয়েছে ওদের। আর দাদা বৌদিকে নিয়ে শুধু সেই একবারই পুরী বেড়াতে গেছে। আর কোথাও যায়নি! কী কিপটে গো! আমি কেন বলবো না, তুমি আমাকে কত বেড়াতে নিয়ে যাও।’ ওর চোখে মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ল। অনুজ বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলল না। মনে মনে ভাবল বাসবী বৌদি তো চেনে না কী একটা চিজ ইনি। বলে না— ‘স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি’। কিন্তু অনুজ তখনকার মত চুপ করে রইল।
চার বছর আগে বিয়ে হলেও অনুজের এখনো কোন সন্তান হয়নি। ওর দাদার এক ছেলে এক মেয়ে। দেবশ্রী কিন্তু দাদার বড় সন্তান ছেলেটাকে পছন্দ করলেও এক বছরের মেয়েটাকে ঘৃণা করে কোনও এক অজানা কারণে। সেই নিয়ে অনুজ ওকে বেশ কয়েক বার শাসন করলেও কোনও লাভ হয়নি। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে কথায় কথায় দেবশ্রী ওকে ভয় দেখিয়ে কাঁদাত আর খুব মজা পেত। এমনকি মাঝে মাঝে বাচ্চাটার চুল ধরে টেনে ওকে কাঁদাতে দেখেছে অনুজ। অবুঝ শিশু, কিছু বলতেও পারে না আর সহ্যও করতে পারে না। রান্না করার দিকে কোনও নজরই ছিল না দেবশ্রীর। মা আর বৌদি রান্না বান্নার ব্যাপারটা দেখে আর দেবশ্রী দিনের বেশির ভাগ সময় টিভি দেখে আর ফেসবুকে সময় কাটায়।
সেবার পূজোর সময় বড়দা বাড়ির দুই বৌয়ের জন্য খুব সুন্দর দুটো ঢাকাই জামদানি শাড়ি এনে দিল ওদের হাতে। বউদির হাল্কা গোলাপি রঙের উপর লাল কাজের শাড়িটা খুব সুন্দর মানিয়েছিল ওকে। এদিকে দেবশ্রীর জন্য ওর ভাসুর ঠাকুর এনেছিলেন একটা কচি কলাপাতার উপর সবুজ রঙের কাজ করা সুন্দর একটা শাড়ি। দেবশ্রীর ওর দিদিভাইয়ের শাড়িটাই বেশি পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু মুখে কাউকে কিছু জানায়নি। পরদিন সেজেগুজে বের হবার সময় দেখা গেল শারির একটা কোনের অনেকটা ছেঁড়া। শাড়িটা বৌদি পড়তেই পারল না।
দাদা বৌদি খুব সুখে শান্তিতে আছে, সেটাই বোধ হয় দেবশ্রীর মূল অশান্তির কারণ। লক্ষ্মীপুজোর পর দাদা ফ্যামিলি নিয়ে গোয়া বেড়িয়ে এলো। ছয়দিন বাদে মুম্বাই হয়ে ফ্লাইটে ফিরেছিল ওরা। সেই রাতে অনুজের মা কিছু রান্না করেননি, ভেবেছিলেন যে ছোট বৌ বিকেলের রান্না করে রাখবে সবার জন্য। অনুজ অফিস থেকে ফিরল রাত করে। এদিকে রাত আটটার সময় বাড়ি ফিরে দাদা বৌদি দেখে দেবশ্রীর শরীর খারাপ, ঘরে শুয়ে আছে। মায়ের পায়ের ব্যথা দেখে শেষে বড় বৌ গিয়ে ঢুকল রান্না ঘরে আর সবার জন্য খাবার তৈরি করে আনল। অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই বৌদি বাড়ি ফিরেই এসে রান্না ঘরে রান্না করছে আর বৌ ঘরে শুয়ে আছে দেখেই অনুজ ভীষণ রেগে যায় আর ঠিক করে দেবশ্রীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে। এবার থেকে সমস্ত রান্না ও একাই করুক আর বুঝুক সংসার চালাতে গিয়ে কতটা দায়িত্ব নিতে হয়।
দেবশ্রীর কিন্তু তাতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। বাসবী বৌদির বরের সঙ্গে ঝগড়া লাগানো বা বড়দার মেয়েকে বাড়ি গেলেই একান্তে ভয় দেখিয়ে কাঁদানো, এসব চলতেই লাগল। এক রবিবার দেবশ্রীর বড়দিকে নিমন্ত্রণ করল অনুজ। এ বাড়িতে আলাদা হয়ে আসবার পর ওদের আর নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়নি। সেই রাতে দিদি জামাইবাবুকে খাবার পরিবেশন করবার সময় হঠাৎ দেবশ্রী বলে উঠল, ‘কীরে দিদি, এবার একটা বাচ্চা হলে ভাল হয় না? কী প্ল্যান করেছিস তোরা। কী কোনও খবর-টবর আছে নাকি?’
ওদের বিয়ে হয়েছে চার বছরের উপর। কিন্তু দেবশ্রীর বিয়ে হয়েছে তারও আগে। অনুজের দেবশ্রীর এই আদিখ্যেতা একদমই ভাল লাগে না। জামাইবাবু দেবশ্রীর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে হঠাৎ দেবশ্রী একটু নিচু গলায় দিদিকে বলে ওঠে, ‘কীরে, তোদের কি কোনও সমস্যা আছে নাকি? তাহলে ভাল ডাক্তার দেখাচ্ছিস না কেন?’ বলবার সময় ভুলেই গেল যে ওদের নিজেদেরও এখনো কোনও সন্তান হয়নি।
কথাটা শুনতে পায় ওর জামাইবাবু। ভীষণ অপমানিত বোধ করে শেষ পাতের খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ‘কী হল, তাড়াতাড়ি করো। বাড়ি ফিরতে হবে তো?’
অঞ্জন বেশ বুঝতে পারে যে দেবশ্রীর জামাইবাবু বেশ অপমান বোধ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, ‘আরে যাবেন খন। দিদির খওয়াটা শেষ হোক আগে। আর আপনি তো ভাল করে খেলেনও না।’ কথাটা বলে কটমট করে তাকাল দেবশ্রীর দিকে। কী দরকার ছিল ওর এ ভাবে দিদিকে বাচ্চা হবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার?
দু’দিন বাদেই ওর দিদি ফোন করে জানায় যে ওর কত্তার সঙ্গে এই কথা নিয়ে সেই রাতে বেশ অশান্তি হয়েছে ওর। দেবশ্রীকে ওর দিদি পরিষ্কার জানায় যে ভবিষ্যতে ওর জামাইবাবু আর কোনোদিন এই বাড়িতে আসবে না বলে দিয়েছে। দেবশ্রী রাতেই কথাটা জানায় অনুজকে আর সেই শুনে অনুজ দেবশ্রীকে ভীষণ বকাবকি করে। তারপর ফোন করে ওর ভায়রার কাছে দেবশ্রীর হয়ে ক্ষমা চায় আর সম্পর্কটা স্বাভাবিক করবার চেষ্টা করে বলে পরের রবিবার ওরা দিদির বাড়িতে আসছে ডিনার করতে।
দেবশ্রীর এই সমস্ত কুচুটেপনা অনুজ যতই ম্যানেজ করবার চেষ্টা করুক না কেন দেবশ্রীর কিন্তু তেমন কোনও পরিবর্তন হয় না। এখনো সে তার মতই এর কথা তার কাছে আর ওর কথা এর কাছে করে অশান্তির বীজ বপন করেই চলেছে। ওর জীবনের যেন একটাই লক্ষ্য যে ওর চার পাশের লোকেরা যেন কিছুতেই ওর চেয়েও বেশি সুখী না হতে পারে। কেউ যদি বেশ সুখে থাকে আর সেটা প্রকাশ করে ফেলে, তাহলে তার উপর শনির দৃষ্টির মত দেবশ্রীর দৃষ্টি গিয়ে পড়বে।
অথচ দেবশ্রী নিজে কিন্তু কখনো কাউকে বলে না— ‘আমি বেশ ভাল আছি’। বলে— ‘না, ভাল আর আছি কই। জানো তো… এই তো দেখো না…।’ বলে কোনো না কোনো একটা অসুবিধার কথাই বড় করে দেখাবে। যেন সেই অসুবিধা আর কারোরই হয় না, ও একাই বিপদে পড়েছে এবং খুব অশান্তিতে রয়েছে। অনুজ মনে মনে আশ্চর্য হয় ওর স্বভাবের এই অদ্ভুত বহিঃপ্রকাশ দেখে। নিজে ভীষণ বুদ্ধিমান হবার কারণে অনুজ ওর স্ত্রীর সব রকমের দুর্বলতাই ম্যানেজ করে চলেছে এখনো। কিন্তু আর কতদিন এভাবে পারবে কে জানে। ভাবে, ভগবান হয়ত সব কিছু ভেবে চিন্তে তবেই দেবশ্রীর মত মেয়েকে ওর হাতে তুলে দিয়েছেন মেয়েটির ভালর জন্যই। একদিন ও ভাল হবেই।