• facebook
  • twitter
Saturday, 5 April, 2025

রূপকথার শেষে

সে জানত না আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জাদুকরের লুকোনো পকেটে হাত দেওয়া নিষেধ

কাল্পনিক চিত্র

রাজেশ কুমার

ছেলেটা এসেছিল এক হারিয়ে যাওয়া শহর থেকে, যে শহরে রাত বাড়লে ঘুমের ভেতর ভেসে উঠত দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, মাঠের মধ্যে সাদা ঘোড়া। সেই ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেত মাথায় শিরস্ত্রাণ এক আশ্চর্য রাজপুরুষ। কোষবদ্ধ তরবারি, শিকারি জুতো, হাওয়ায় ওড়া রাজ-পোশাক।
ছেলেটার নাম জানা ছিল না কারও। এই মহানগরে সে তখন নতুন। আদব-কায়দা বুঝে উঠতে পারেনি সেভাবে, এমনকি মানুষজনের মুখের ভাষাও। গড়ে ওঠেনি বন্ধুত্ব। রাস্তাঘাটে সবাই তাকিয়ে থাকত তার দিকে, যেন কোনও এলিয়েন নেমে এসেছে শহরের বুকে। আর সে দেখত, আকাশছোঁয়া ঘরবাড়ি, কাঁচের জানালা, পড়ে থাকা রাস্তাঘাট। বিস্মিত হতো। নিজের সঙ্গেই কথা বলত নিজে। আনমনা বিড়বিড় করত, এই শহর বড়ই সুন্দর আর রত্নখচিত। নিজেই নিজেকে শোনাত একথা।

তার রক্তে মিশেছিল তার রূপকথার জগৎ। শিরায় শিরায় ছুটে বেড়াত শৈশবে শোনা সেই সব গল্পকথা। ঘোড়ার পিঠে কোটাল পুত্রের ছুটে যাওয়া, রাজায় রাজায় যুদ্ধ, সোনার কাঠি ছুঁইয়ে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙানো। কত বিচিত্রভাবে শুরু হত সেইসব গল্প। সহস্র এক আরব্য রজনীর মতো মিশে যেত একটার সঙ্গে আর একটা। কখন যেন নিঃশব্দে ঘুরে যেত গল্পের গতিপথ। খুলে যেত অকল্পনীয় সব জগৎ।
সে কখনও সত্যিকারের রাজা দেখেনি। রাজায় রাজায় যুদ্ধ ঠিক কেমন হয়, অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটে গেলে কতখানি ধুলো ওড়ে এসবের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা গড়ে ওঠেনি তার। কারা যেন বোঝাত তাকে। বলত, হারিয়ে যাওয়া সেই শহরের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে রাজাদের পুরোনো বাহ্যিক রূপও। সেই ধড়াচূড়া, মাথার মুকুট, কোমরের তলোয়ার, মোটা গোঁফ আর রত্নখচিত সিংহাসন সে-সবই থেকে গেছে পুরোনো ইতিহাস বইয়ের পাতায়। আর পরিবর্তিত নতুন পাঠ্যক্রমে এই মহানগরের সব রাজাই মুকুটহীন। ঠান্ডা ঘর, লুকানো অস্ত্রশস্ত্র, কালো কাঁচ তোলা গাড়ি, আধুনিক, কেতাদুরস্ত পোশাক, রঙ করা চুল।

সে তাকিয়ে থাকত দেওয়ালের বড় বড় পোস্টার, ব্যানারের দিকে। বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে। সংবাদপত্র, টিভির পর্দায়। জনসভায় লুকিয়ে লুকিয়ে লক্ষ্য করত তাদের চলা ফেরা, কথা বার্তা, এমনকি হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ার ভঙ্গিমাও। একমনে শুনত তাদের বাচনভঙ্গি। বন্ধুগণ বলে আওয়াজ তোলা কিম্বা ভাইয়োঁ আর বেহেনোঁ। অবাক তাকিয়ে থাকত রাজাদের লম্বা চওড়া, সাফারি স্যুট পরা সদা ব্যস্ত বডিগার্ডগুলোর দিকে। এক একটা যেন সব দৈত্য দানো। মানুষগুলোকে মাটি থেকে তুলে লিলিপুটের মতো চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা। আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করত সে— এই মহানগরে মেয়েরাও রাজা হয়। ছোট করে ছাঁটা চুল, চোখে সানগ্লাস। কারও কারও বা নিপাট সাদা শাড়ি। তাদের কথাবার্তা, আচার আচরণও রাজাদের মতোই শৌর্য বীর্যে ভরা। নারীসুলভ কোমলতা সেখানে নেই। ছেলেটা জানত না ‘রাজা’ আসলে এক পুরুষ শব্দ। এর মধ্যে লিঙ্গ ভেদের স্থান নেই কোনও।

তবে রাজা সংক্রান্ত তার পুরোনো ধ্যান ধারণাগুলো যেহেতু থেকে গেছিল ছোটবেলার স্মৃতিতে, সে বিশ্বাস করতে পারত না রত্নখচিত সিংহাসন, হীরে বসানো মুকুট ছাড়া রাজা হওয়া সম্ভব। একটা অবিশ্বাসের বাষ্প বারেবারে জমে উঠত তার ভেতর। সেই সব লোকগুলো যারা তাকে আধুনিক রাজা সম্পর্কে বোঝাতে এসেছিল, তাদের কথা মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি সে। বিদেশী ভাষার ছবি দেখার মতো তাকিয়ে ছিল হাঁ করে। তবে কথা তো শুধু আর ভাষা নয়, তার মধ্যে মনের ভাবও মিশে থাকে খানিক। সেই কারণেই ছেলেটা হয়তো সামান্য কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিল বলেই মনে হয়। আর তার জন্যই সে মাঝে মধ্যে পকেট থেকে একটুকরো কাপড় বের করে চশমা মুছতো। তারপর সেটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তুলে ধরত তার দুই চোখ আর নাকের সংযোগস্থলে। কী যেন দেখার চেষ্টা করত খুঁটিয়ে। তার চশমার পাওয়ার ছিল অস্বাভাবিক রকমের বেশি। কাঁচদুটো সেকেলে হরলিক্সের শিশির মতো। যেন খসে গেলেই মুশকিল। হতে পারে ছেলেটা বর্ণান্ধও ছিল। তবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না কেউ।

এই মহানগরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই বলত, সে ছিল আসলে বেমানান। একটা অত্যাধুনিক ডিজাইনের ফ্যান্সি চশমা তৈরি করানোর কোনও প্রয়াস ছিল না তার কিম্বা কোনও বহুজাতিক সংস্থার ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট কেনার ইচ্ছা। এই শহরের চাল চলনের সঙ্গেও সে ছিল সামঞ্জস্যহীন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাতায়াত দূরের কথা একটা মোবাইল ফোন পর্যন্ত ছিল না তার হাতে। তাকে দেখলে মনে হত সে যেন শৈশব থেকে সরাসরি এসে দাঁড়িয়েছে যৌবনের দোরগোড়ায়। ফলে এক শিশুসুলভ অপরিণতভাব লেগেছিল তার চরিত্রে। সামান্য বিষয়েই সে মজা পেত খুব। আবার দুঃখও পেয়ে বসত যখন তখন। মহানগরের প্রান্তে কোনও এক ফাঁকা জায়গায় বসে হয়তো চোখের জল ফেলত সে, অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকিয়ে। তার মনে পড়ত ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে শোনা ব্যাঙ্গমা, ব্যাঙ্গমির গল্প, তেপান্তরের মাঠ, সাত সমুদ্র তেরো নদীর কথা। সেই যে ছোট্ট ছেলেটা নৌকা ভাসিয়েছিল ভয়ঙ্কর সমুদ্রে, দূর দেশে রাক্ষসের হাতে বন্দী বাবা মাকে উদ্ধারের জন্য, তার কথা ভেবে মাঝে মধ্যেই উতলা হত সে।

মানুষ এখানে আসত টাকা পয়সা, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভবিষ্যৎ সম্পদ কেনার জন্য। তাদের ছেলেমেয়েদের বলত, আর একটু মন দিয়ে সবকিছু লক্ষ্য করো বাছা। এখানে টাকা ওড়ে আকাশে, বাতাসে। জমি, জিরেতও। ভবিষ্যতে আরও বেশি ভোগ দখল করতে হবে তোমায়। নিদেনপক্ষে অর্জন করতে হবে নানাবিধ রাষ্ট্রীয় সুবিধা। ছেলেটার অবশ্য এসব কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। এই সমস্ত ভোগবাদ কিম্বা রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে কেউ কিছু বলেনি তাকে। আকাশে টাকা উড়তেও সে দেখেনি কখনও। সে এসেছিল হারিয়ে যাওয়া এক শহর থেকে, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার সন্ধানে। মহানগরের শরীর থেকে প্রতিদিনই খষে পড়ত ইট। বিপজ্জনক ঘোষণা করে ভেঙে দেওয়া হত পুরোনো ঘর বাড়ি। মুখে চাপা দিয়ে কিছু লোক হঠাৎ হঠাৎ কেটে নিয়ে যেত ছায়াদানকারী বট। তাদের আইডেন্টিফাই করা যেত না কিছুতেই। এক উঠতি মস্তান এ ব্যাপারে বলেছিল, বড় বড় শহরে এই সব ছোটখাট ঘটনা ঘটেই থাকে। সব বিষয়ে মাথা ঘামালে চলে না সবার।

ছেলেটা ঘুরে বেড়াত রাস্তায় রাস্তায়। রেলিং ঘেরা ফুটপাথে। মহানগরের কোনও কিছুই তেমন ভাবে ভাবাত না তাকে। এমনকি সেই উঠতি মস্তানের কথাও। সবকিছুই যেন তার কাছে ছিল ভাসা ভাসা, অন্য কোনও জগৎ থেকে উঠে আসা। সে ছিল যেন যমালয়ে জীবন্ত মানুষ। মহানগরের কোনও কিছুই ছুঁতে পারেনি তাকে হারিয়ে যাওয়া সেই শহরের মতো করে। বিকেলে সূর্যের তাপ নিভে গেলে সে ঘুগনি মুড়ি খেত শালপাতার ঠোঙায়।

ভারি এক আশ্চর্য বিষয় এই সময় লক্ষ্য করত সে। কিছু দিন হল একদল লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত পরপর মিছিল করে, কাদের যেন উদ্দেশে। হাঁটতে হাঁটতেই তারা ফুটবল খেলত, গান গাইত, কবিতা বলত। কারাও আবার কিছুই করত না। সন্ধে হলে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে যেত শুধু। বড়জোর কারও কারও হাতে মোবাইলের জ্বলন্ত টর্চ। তারা হেঁটে যেত নিঃশব্দে। অত্যাচারিত, ধর্ষিত, মৃত লাশ যেন দৃঢ় পায়ে হেঁটে যাচ্ছে যমরাজের থেকে জবাবদিহি চাইতে। কারাও আবার হ্যাজ নামাত— ঘটি বাঙাল দিয়েছে ডাক, তিলোত্তমা বিচার পাক। খেলার মাঠ বন্ধ তবে, খেলার বদলে বিচার হবে।

ছেলেটা এইসব হ্যাজের মানে বুঝত না। ঘটি-বাঙাল কী! মানুষগুলো কোথা থেকে আসে, কোথায়ই বা যায় সেসব নিয়ে তার তেমন উৎসাহও ছিল না। সে কেবল এক আমুদে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, লোকগুলো যখন হেঁটে যায়। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, বলে চিৎকার করে সমবেত স্বরে। অজানা এক রোমাঞ্চ অনুভব করে সে। অনুভব করে, এইসব মিছিলের এক উষ্ণতা আছে। লোকগুলো যখন হেঁটে যায় তখন বসন্তকালের হাওয়া ওঠে। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে কচি কচি পাতা গজায়। মহানগরের মানুষজন বলে, পাতা নয় ওসব আসলে আশা, মরীচিকার মতোই। হাজার হাজার মানুষ সেই আশার টানেই বের হয়ে আসে নিজের নিজের ঘর ছেড়ে। কোথা থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসে ঘাড়ে পিঠে ক্যামেরা নিয়ে আরও একদল মানুষ। অদ্ভুত সব জটিল ঘটনা ঘটে যায় ছেলেটার চোখের সামনে দিয়ে। সে দাঁড়িয়ে থাকে জগতের একমাত্র বোকা মানুষের মতোই।

তার প্রায় সমবয়সি এক মেয়ে মাথায় চাঁটি মেরে বলে তাকে, বুদ্ধু, হ্যাজ না নামালে মানুষগুলো বোবা হয়ে যাবে। তেল ফুরিয়ে যাওয়া কেরোসিন স্টোভের আগুনের মতো ফোঁস ফোঁস করবে শুধু। ছেলেটার মহানগরের ভাষা জানা নেই। সে বোকা মানুষের মতোই হাসে। মেয়েটা বলে, হাসার জন্য যেমন লাফিং ক্লাব, দাবি জানানোর জন্যই তেমন হ্যাজ ট্যাগ। তুমি তো সোশ্যাল মিডিয়া করো না, করলে বুঝতে। মেয়েটার কথা মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে। তাকিয়ে থাকে হাঁ করে। অদ্ভুত এক সারল্য ঝরে পড়ে তার সেই দৃষ্টিতে। মেয়েটা এক উষ্ণ দিনে পথ চলতি দোকান থেকে ভেলপুরি কিনে দেয় তাকে। শেখায় কেউ কিছু দিলে ধন্যবাদ বলতে হয় আর তার প্রত্যুত্তরে স্বাগতম। মেয়েটার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ছেলেটার যদিও একে অপরের ভাষা সেভাবে বুঝত না তারা।

তারা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াত রাস্তায়। গ্রীষ্ণের দুপুরে পাশাপাশি হেঁটে যেত হাত ধরাধরি করে। শহরের রাস্তায় তখন পান বিড়ির দোকানি অভ্যস্ত ঝাঁপ নামিয়ে ঝিমিয়ে নিত খানিক। মুটে মজুরের দল বোঝা বইত মানুষের ভিড়, গাড়ির হর্ন অস্বীকার করে। রাস্তার পাইস হোটেল থেকে ভেসে আসত মাছ ভাজার তীব্র আঁশটে গন্ধ। তারা হেঁটে যেত এসবেরই মধ্যে দিয়ে। নিত্যদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে যেভাবে হেঁটে যায় প্রেম। বিকেলের আকাশে কখনও হয়তো উড়ে যেত দু-একটা ঘুড়ি। বহুদূর থেকে ভেসে আসত মন কেমন করা ভোঁকাট্টা স্বর। সেই স্বর মিশে যেত দুজনের মনে। উড়ে যেত পেটকাটি, চাঁদিয়াল হয়ে। তারা বসত গঙ্গারঘাটে, জলের খুব কাছাকাছি। ছেলেটা শোনাত তার সেই রূপকথার গল্প। এক ছিল রাজা। তার দুই রানি। শুয়োরানি আর দুয়োরানি। ছেলেটার কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনত মেয়েটা। এক হৃদয়ের উষ্ণতা পৌঁছে যেত আর এক হৃদয়ে। তখন আশপাশের কোনও কিছুই কানে আসত না তাদের। এমনকি সেই মিছিলের ডাকও। রাস্তায় নামা জনগণের দৃপ্ত কন্ঠস্বরও। তারা পৌঁছে যেত এক অলীক জগতে। রূপকথার প্রায় কাছাকাছি।

এক রাতে এক অস্বাভাবিক ঘটনা। রূপকথা থেকে ফেরার পথে রাস্তাজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ। হাজার হাজার মানুষ। চিৎকার, চেঁচামেচি। একটাই হ্যাজ— দাবি এক দফা এক…। পুলিশের ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। ছেলেটা আর মেয়েটা দেখে ভিত চোখে। তাকায় একে অপরের দিকে। তারা পালিয়েই যেত অন্ধকার কোনও গলিপথ ধরে। মেয়েটা হঠাৎ দেখে বড় জোব্বা পরা সেই জাদুকর যার নাম মহানগরে সবার জানা। সেও যেন পথ ভুলেই চলে এসেছে হঠাৎ। ব্যারিকেডের ভেতর খেলা দেখাচ্ছে নিজের মনে যেভাবে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে কোনও জনপ্রিয় ফুটবলার বল নাচায় ভরা গ্যালারির সামনে। জনগণ বিক্ষোভ ভুলে অবাক তাকায়। পালিয়ে যেতে ভুলে যায় ছেলেটা আর মেয়েটা। জাদুকর জোব্বা থেকে একে একে বের করে আনে রঙিন শিকলি, জাদুবল, ছাতা, কাপড় এমনকি ডানা ঝাপটানো সাদা পায়রা। অগণিত মানুষ বসে পড়ে ব্যারিকেডের ওধারে। তাদের হাত থেকে খসে পড়ে ‘বিচার চাই’ প্ল্যাকার্ড। সকলের যেন এভাবেই বসে পড়ার কথা ছিল। জাদুকর মিটিমিটি হাসে। জোব্বা থেকে বার করে আনা জাদুবল উড়িয়ে দেয় সাদা পায়রা বানিয়ে।

ছেলেটা গোগ্রাসে গিলছিল সেই সব জাদু, একেবারে সামনের সারিতে। জাদুকর হঠাৎ ডাক পাঠায় তাকে এক নতুন খেলার সহকারি হিসাবে। ছেলেটা জাদুবিদ্যার বিন্দু বিসর্গ জানত না। এমনকি পুলিশ, আধুনিক রাজা সম্পর্কেও সঠিক ধারণা গড়ে ওঠেনি তার। সে জানত না জাদুর ময়দানে কী করা উচিত আর কী উচিত নয়। অতি উৎসাহে সে হাত ঢুকিয়ে দেয় জাদুকরের জোব্বার লুকোনো পকেটে। বের করে আনে যা ছিল সেখানে। আরও একপ্রস্থ রঙিন শিকলি, জাদুবল, অবাক করা সাদা পায়রা। এই পকেটের অস্তিত্ব হয়তো কল্পনা করতে পেরেছিল সে। কিন্তু পারেনি সেখানে লুকোনো হাজার হাজার জাদু কৌশলের অস্তিত্বের ধারণা করতে।

সে জানত না আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জাদুকরের লুকোনো পকেটে হাত দেওয়া নিষেধ। হাজার হাজার পুলিশ ঘিরে ধরে তাকে। তাক করে বেয়নেট। আগামী কয়েক ঘন্টায় তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে আধুনিক রাজা আর রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমস্ত বৈধ আইন-কানুনের কথা। রূপকথার রাজত্ব ভুলে খুব শীঘ্রই সে হয়ে উঠবে এই মহানগরের প্রকৃত বাসিন্দা।

News Hub