হাননান আহসান
আগামীকাল পয়লা বৈশাখ৷ ১৪৩১ সন শুরু হবে৷ তাই বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাব৷ এবার এইদিনটি ইংরিজি ১৪ এপ্রিল পড়েছে৷ কখনো প্রতি বছর ১৪ বা ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ শুরু হয়৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিশ্বের যেখানে বাঙালি বাস করে সেখানেই পয়লা বৈশাখকে অভ্যর্থনা জানাতে ভোলে না বাংলাভাষী মানুষ৷ আপামর বাঙালির কাছে এটি একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব৷ আর আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশে এই উৎসব তাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে৷ আমরা যেভাবে বড়দিন পালন করি পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষের কাছে তেমনি এক আবেগের উদ্দীপনার মহোৎসব৷
পয়লা বৈশাখের ইতিহাস অতি পুরোনো৷ জানা যায়, ষোড়শ শতকে এর সূচনা৷ তখন মুঘল যুগ৷ সম্রাট আকবর এক নতুন কর ব্যবস্থা চালু করে৷ ফসল কাটার মরশুমের ওপর ভিত্তি করে৷ বাংলা নববর্ষর সঙ্গে এটি মিলে যায়৷ তখনকার জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে এই উৎসব উদযাপন করে৷
সম্রাট আকবরের দূরদর্শিতা ও সম্প্রীতি রক্ষার তাগিদ ছিল৷ তিনি একটি ক্যালেন্ডার চালু করেন৷ যা ছিল ইসলামি ও হিন্দু ক্যালেন্ডারের সমন্বয়৷ বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আর্থিক বছর যোগ করার কারণে সম্রাট আকবরের সিদ্ধান্ত পরে উৎসবে পরিণত হল৷ আকবরের পঞ্জিকার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘তারিখ-এ-এলাহি’৷ এই পঞ্জিকার মাসগুলি বড়ো অদ্ভুত৷ নামগুলি ছিল আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া ও তীর প্রভৃতি নামে৷ যেটি অনেক পরে বঙ্গাব্দে রূপান্তরিত হয়৷ জানিয়ে রাখি, সম্রাট আকবরের ‘তারিখ-এ-ইলাহি’ শুরু হয় ১৫৮৪ সালের ২১ মার্চ৷ এইভাবে চলে আসছিল৷ তবে ক্রমে ক্রমে কখন যে আকবরের দেওয়া নাম বদলে গিয়ে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ইত্যাদি হল তা সঠিকভাবে কারোরই জানা নেই৷
অনেকের ধারণা, বাংলা বারো মাসের নাম এসেছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম থেকে৷ যেমন বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাড়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, মৃগশিরা থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন ও চিত্রা থেকে চৈত্র৷ বিশাখা নক্ষত্র অনুসারে বৈশাখ বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, সেই হিসাবে বৈশাখের প্রথমদিন নববর্ষ অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ ধরা হয়৷ তবে পয়লা বৈশাখের উৎপত্তি নিয়ে অন্য মতও আছে৷ অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, গৌড়বঙ্গের রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে বঙ্গাব্দের উৎপত্তি হয়েছে৷ ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ণসুবর্ণর সিংহাসনে বসেন শশাঙ্ক৷ সেই রাজ্যাভিষেকের বছর থেকেই অব্দ বা বছর গণনা চালু করা হয়, সেটাই আসলে বঙ্গাব্দ৷
পয়লা বৈশাখ সারা বিশ্বে বাঙালিরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেন৷ দিনটি শুরু হয় খুব ভোরে৷ মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরেন মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে পয়লা বৈশাখের সকালে৷ নতুন জামাকাপড়ের সঙ্গে দেদার খানাপিনার ব্যবস্থা থাকে৷ বের হয় শোভাযাত্রা৷ উৎসব খুশি গান বাজনাসহ আরো কত কী৷ তারপর ভগবান গণেশ আর দেবী লক্ষ্মীর পুজো করা হয় আগামী বছরের সমৃদ্ধি ও সুখের জন্য৷ ব্যবসায়ীরা পয়লা বৈশাকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে পুজো করেন, বিকেলে হালখাতার উৎসব হয়৷ পয়লা বৈশাখের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার৷ যার মধ্যে রয়েছে নানা রকমের ও নানা স্বাদের মিষ্টি৷ অবশ্য এই হালখাতা ব্যাপারটি শুরু করেন সম্রাট আকবর৷ হাল মানে নতুন আর হালখাতা হল নতুন খাতা৷ এইদিনে পুরোনো খাতা সরিয়ে দিয়ে নতুন খাতার শুভারম্ভ হয়৷