সন্ধের মুখে পুরো বাগদি ভিটেয় নাম জানা ও না জানা অসংখ্য পাখির গল্পোৎসব শুরু হয়।
সেই ভোর থেকে গোধূলি পর্যন্ত সারাদিন কে কোথায় কী দেখেছে শুনেছে কিংবা খেয়েছে আপনজনের কাছে তারই বিস্তারিত বর্ণনায় মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। এই যেমন এখন তেমনই গল্পোৎসব চলছে এবং সেই কলকাকলির সম্ভাষণে মুগ্ধ হয়ে বাগদি ভিটেয় পা রাখল বাবলু! আর সঙ্গে সঙ্গে টের পেল এক ঝাপটা স্নিগ্ধ হাওয়া ওকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে! এখানকার হাওয়ার এই কোমল স্পর্শ ওর চেনা! যেমন চেনা এই ভিটের প্রতিটি কোণ।
গল্পে মগ্ন হলেও কোনো কোনো পাখি চঞ্চল চোখে ওকে ঠিকই দেখে নিলো। তারপর যেন পরিচিত কেউ এসেছে তাদের কাছে এমন ভঙ্গিতে আবারও গল্পে ফিরে গেল! ‘শোনো, জল তোলা ভটভটের পেছনের যে একলা গাছ আজ তার নিচে বসে ছিল হাড্ডিসার লোকটা। আমি লাল ঝাল দেখে নিচে নামতেই তেড়ে এলো। তবু ছাড়িনি গো, এনেছি একখানা।’
‘আহা বেশ! তবে সাবধানে যেয়ো।’
‘টিনিরা খেয়ে মজা পেয়েছে। তাই না রে?’
‘টিউ টিউ, টি টি টি!’
পেয়ারা গাছের ডালে বসে গল্প করছে দুটো টিয়া। ডালটি বোল গামারীর গা স্পর্শ করে আছে। ওর ফোঁকরেই ওদের বাসা। বাসা থেকে ছোট্ট ছোট্ট দুটো ছানা মায়ের কথায় সায় দিলো। তখুনি একটি ফিঙে ওদের পাশ দিয়ে সাঁই করে উড়ে গিয়ে দক্ষিণের জারুল গাছের ডালে বসে থাকা নিজেদের দলে ভিড়ল। টিয়ে ছানাদুটো ভয় পাওয়ার বদলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলে ওদের সাহসের প্রশংসা করে ফিঙেদল হর্ষধ্বনিতে মাতিয়ে তুলল চারপাশ! গল্প রেখে ওদের সঙ্গে যোগ দিলো সব গাছের সকল পাখি।
বাবলু আগে মাঝেমধ্যেই এখানে আসত; কখনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, আবার কখনো একা। সবচেয়ে বেশি আসত আমের সময়টায়। এই ভিটের আমগাছগুলোর কোন গাছের আম কেমন তা ওর চেয়ে ভালো এই অঞ্চলের আর কেউ জানে না। তাছাড়া পূর্ব-দক্ষিণের কোনার গাছের কাঁঠাল সবচেয়ে সুস্বাদু, গোলাঘরের উপরের গাছের পেয়ারা ডাঁসা, একমাত্র আতাগাছটির আতাও দারুণ; এসবই ওর নখদর্পণে!
বাগদি ভিটের পরিচিত হাওয়া বাবলুকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়তেই সে শুনতে পেল পেছনের আমগাছের সবচেয়ে নিচু ডালে, প্রায় ওর মাথা ছুঁই-ছুঁই জায়গায়, বসে নিরাতঙ্কে একটি মা শালিক তার ছানা দুটোর সঙ্গে কথা বলছে। আসলে এই ভিটের স্থায়ী-অস্থায়ী সব বাসিন্দাই জানে বাবলু তাদের বড্ড আপনজন। কেউ কেউ তো ওকে ওর ছোটবেলা থেকে চেনে। মাঝে দীর্ঘদিন সে এই ভিটেয় পা না রাখায় সেসব পরিচিতজনই নতুন অতিথিদের কাছে ভীষণ চুপচাপ, পরোপকারী ও ভয়ডরহীন এই যুবকের কথা গল্পে গল্পে তুলে ধরেছে। ফলে নতুন পুরনো সবার কাছেই বাবলু বেশ পরিচিত একজন মানুষ।
মা শালিক তার কলিজার টুকরো দুটোকে বলল, ‘সে-রাতের ঝড়ে দক্ষিণ পাড়ায় বাসা বাঁধা আমার বড় বোনটি মারা পড়েছে রে!’
সঙ্গে সঙ্গে ছানা দুটো, ‘কী বলো, কী বলো, হায় হায়!’ বলে কিচিরমিচির করে উঠল। ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাশের ডালের শালিক ছানাগুলোও গলা ছেড়ে চেঁচাতে লাগল। আর কিছু না জেনেও অন্যান্য পাখিরা ওদের সঙ্গে যোগ দিলে কিছুক্ষণের জন্য গল্পোৎসব হট্টগোলে পরিণত হলো!
এসবের মধ্যেই মা শালিকটি করুণ স্বরে বলতে থাকল, ‘তোরা উড়তে শিখলে ওদিকে গিয়ে দেখবি বড় একটি শিমুলগাছ আছে। ওটার পাশেই বাসা বেঁধেছিল বোন আমার। ঝড়ে শিমুলের একটি ডাল ভেঙে পড়ে চুরমার করে দিয়েছে ওদের বাসা, আর ওর দেহটাও! উহ্!’
মায়ের ডানার আশ্রয়ে থেকেই মুখ বাড়িয়ে মাদি ছানাটি ভয় পাওয়া গলায় চিঁচিঁ করে জিজ্ঞেস করল, ‘আমাদের বাসা আবার ভেঙে পড়বে না তো মা?’
মা শালিকটি ডানা দুটো আরেকটু প্রসারিত করে আরও মমতা ঢেলে তার ছানাদের আগলে রাখল এবং চঞ্চু দিয়ে ওদের সদ্য ওঠা পালকে বিলি কেটে অভয় দিতে চাইল।
পাশের ডাল থেকে নিঃসঙ্গ বুড়ো পেঁচাটি হুম হুম করে উঠল, ‘বাসা থাকলেও যা, না থাকলেও তা। সবচেয়ে বড় হলো নিরাপত্তা। আমরা কেউ কোথাও নিরাপদ নই, নিরাপদ নই!’
তখুনি বাবলু ঘাড় ঘুরিয়ে শালিকের বাসার দিকে তাকাল। মা শালিকটিও তাকাল ওর দিকে। তারপর বাবলুর ঠোঁট নাড়ানো দেখে ছানাদের বলল, ‘দেখ তোরা, ওকে দেখ। ও আমাদের ভয় পেতে মানা করে বলছে, তোমরা তো মাঠের উত্তরদিকে থাকো, আর তোমাদের উত্তরে অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা আছে। কালবৈশাখী উত্তর, উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে ছুটে এসে মাঠ পেরিয়ে সোজা গিয়ে দক্ষিণে হানা দেয়! এই ভিটেয় সেভাবে লাগে না।’
সঙ্গে সঙ্গে পাখিদের তুমুল হর্ষধ্বনিতে আরও একবার মুখরিত হয়ে উঠল বাগদি ভিটে। আর সব ছাপিয়ে মা শালিকের মনে পড়ল তার মা-বাবাও দক্ষিণ পাড়ায় এমন একটি খবর শুনেই অল্প অল্প উড়তে শেখা তাদের দুই বোনকে নিয়ে এই ভিটেয় এসে বাসা বেঁধেছিল।
হঠাৎই খুব মনখারাপ হয়ে যাওয়ায় পড়ন্ত বিকেলে ফরাক্কা খালের ওপরের উঁচু ব্রিজ, যেটিকে এই অঞ্চলের মানুষ হিমালয় বলে ডাকে, তাতে এসে বসেছিল বাবলু। সে ভাবতেই পারেনি সুফিয়া বেগম তার সঙ্গে এমন রূঢ় ব্যবহার করবেন! গত পরশু ঝড়ের পর পুরনো অভিমানের যে বরফ গলে জলে পরিণত হয়েছিল আজ তা ততোধিক কঠিন ও ধারালো হয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে!
গতকাল সারাদিন সে আরও কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড গ্রামটিকে গুছিয়ে তোলার কাজ করেছে। আজও তা-ই করছিল। কিন্তু বিকেল হয়ে এলে হঠাৎ টুম্পার পোষা ময়নাপাখিটি এসে বাবলুর কাঁধে বসে চুলে চঞ্চু ঘষে ঘষে শুনিয়েছিল মন কেমন করা কিছু কথা! ফলে সব ফেলে ছুটে টুম্পাদের বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছিল সে।
বাড়ির বাইরের উঠোনে উঠার সময় ওর দেখা হয়েছিল অপরিচিত কয়েকজন মানুষের সঙ্গে। তাদের হাসিমুখ বড় বিঁধছিল বাবলুর বুকে। অবশ্য সেসব উপেক্ষা করে সে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। আর সেখানেই তার জন্য চূড়ান্ত আঘাতটি অপেক্ষা করছিল নির্দয়ভাবে! ওকে দেখে সুফিয়া বেগম কঠোর গলায় বলেছিলেন, ‘তুমি সুসময়ে মাছির মতো আর ভনভন করতে আইসপা না আমাগো বাড়িতে, বুঝলা? নিজের দুঃসময় তাড়ানের চেষ্টা করো, যাও। জেল খাটা আসামি….!’
সুফিয়া বেগমের মুখের কাঠিন্য বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লেগেছিল বাবলুর। কিন্তু বুঝতে পারার পরও কেন যেন তার পা সরছিল না। মন হয়তো চাইছিল কেউ এসে পাশে দাঁড়াক, তার হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টাটুকু করুক! তবে তক্ষুনি কেউ বেরোয়নি। ফলে তাকে নত মস্তকে, পাহাড়সম ওজনের পা দুটো ঘষটে ঘষটে ফিরতি পথ ধরতে হয়েছিল! অবশ্য ফেরার পথে পেছন থেকে ভেসে আসছিল কিছু শব্দ, ‘আহ্ মা, ওকে এসব কী বললে?’
‘চালচুলাহীন লোকের জইন্য তোমার এতো দরদ দেখাইতে হইব না। ঘরে যাও।’
‘তোমার সবকিছুতে বাড়াবাড়ি!’
‘বাড়াবাড়ি হইলেও কিস্যু করার নাই। এই বিয়া ভাইঙ্গা যাক আমরা তা চাই না।’
দড়াম করে ঘরের দরজা লাগানোর শব্দ শুনেছিল বাবলু। অমন নির্দয় অপমানের বিপরীতে ওইটুকুই তার জন্য সান্ত্বনা হয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে হিমালয়ে পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু চৈত্রের শেষদিকের দুইরঙা ছাপা শাড়ি পরিহিতা বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তার মনে মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনি। সূর্যের বাবলুর রক্তাক্ত মনের রঙে মিলেমিশে একাকার হয়ে ডুবতে চলে গেলে হিমালয় পেরিয়ে সে হাঁটতে শুরু করেছিল বাগদি ভিটের দিকে।
একসময় এই ভিটেয় দুটো দখিন দুয়ারি এবং একটি পশ্চিম দুয়ারি ঘর ছিল। তাছাড়া ছিল গোলাঘর ও রান্নাঘর। সব ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কেবল সাক্ষ্য দিতেই যেন ভেঙেচুরে এখনো টিকে আছে ঘরগুলোর উঁচু মেঝে! আরও আছে বুজে যাওয়া কুয়ো এবং নুড়ি বিছানো গোসলখানা। তবে বাবলুর কাছে এই ভিটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হলো বাড়ির ভেতরের উঠোনের মস্ত পাথরটি। যেটিতে বসতেন
এ-বাড়ির মহান পূর্বপুরুষগণ।
জনশ্রুতি আছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার নির্মম মৃত্যুর খবরে সারা ভারতবর্ষ যখন শোকে বিহ্বল, এই অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম ছিল না, তখনই এক ভোরে যমুনার পূর্ব পারের একটি চরে একজন দশাসই মানুষকে দেখা গিয়েছিল একটি সাদা পাথরের উপর বসে থাকতে! সহসা কেউই সাহস করে তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেননি, কে আপনি? কিংবা এই পাথরটি কোথা থেকে কীভাবে এখানে এলো?
তবে সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলেন সেদিনের পর থেকেই আগ্রাসী যমুনা বছর বছর পশ্চিমে সরে যাচ্ছে। আর ধীরে ধীরে সবুজিমায় ভরে উঠছে এই অঞ্চল!
তারপর থেকে বাগদি ভিটে বরাবর এই অঞ্চলের মানুষের কাছে রহস্যময় জায়গা হয়ে আছে। আর মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে, বহুকাল আগে ভিটের প্রতিষ্ঠাতা বলরাম বাগদি সাদা পাথরটির ওপর বসে উড়ে উড়ে এখানে এসেছেন। তারপর ধীরে ধীরে সেটি কালো হয়ে উঠেছে! তিনি অনেক কিছু জানতেন। জ্বীন-ভূত তাঁর বশে ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর একমাত্র ছেলে বিশুরাম বাগদিকে কিছুই শেখাননি। তবু তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া গুণ এবং পিতাকে লুকিয়ে-চুরিয়ে বিশুরাম বাগদি যা শিখেছিলেন, সবমিলিয়ে তিনিও একজন আধ্যাত্মিক মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ছেলে বিষ্ণুরাম বাগদি সবসময় আধ্যাত্মিক সাধনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তবু বংশগতির ধারায় তাঁর রক্তেও বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই ছিল। ফলে তাঁকেও সমীহ করত সবাই। কিন্তু ইয়াহিয়া সরকারের মদদপুষ্ট যে উঠতি মাস্তানদের নজরে পড়েছিলেন তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বিন্তি, তারাই একরাতে দেহ থেকে তাঁর মস্তক ছিন্ন করে ফেলে গিয়েছিল বাড়ির পাশে! আর হয়তো ওই রক্তাক্ত জমির টানেই একরাতের মধ্যে পশ্চিম থেকে এসে পূর্বে বেরিয়ে গেছে ফরাক্কা খাল। আজও ঠিক ওখানেই সারাবছর অথৈ জল থাকে এবং কেউ কেউ দেখতে পায় ছোট ছোট কাঁচাপাকা কিংবা লম্বা লম্বা কালো চুল ভেসে উঠতে!
পাখিদের কোলাহল থেমে গেছে। কমে গেছে আলো। আর ভিটেয় নিশাচর প্রাণীদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। একটি ছুঁচো ছুটে চলতে গিয়ে বাবলুর পায়ে ধাক্কা খেয়ে চিক্ চিক্ করতে করতে পালাল কোথাও। ওটিকে তাড়া করা একটি সাপ হিস হিস করে এসে দাঁড়াল বাবলুর ঠিক পেছনে। অচেনা কেউ মনে করে বাবলুকে ছোবল দেবার জন্য যখনই ফণা তুলল তক্ষুনি বুড়ো ঈগল ছোঁ মেরে সাপটি তুলে নিয়ে কিছুটা দূরে আছড়ে ফেলল! সঙ্গে সঙ্গে ভিটে জুড়ে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল।
‘হায় হায়!’ সমস্বরে বলল সবাই।
দাঁড়কাক কা-কা করে বলল, ‘হিস হিস, তুই আগে অতিথিকে চিনে নিবি তো!’
একটি শেয়াল কাঁঠালগাছের শেকড়ের আড়াল থেকে মুখ বাড়িয়ে হুক্কা হুয়া করে বলল, ‘বেশ হয়েছে হিস হিস, তোর শিক্ষা হওয়া উচিত, ছোটদের পেছনে লাগিস।’
আরও কয়েকটি শেয়াল একসঙ্গে সমর্থন করল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। হায় হায়!’
সব পশুপাখি একসঙ্গে যার যার ভঙ্গিতে সাপটিকে ভর্ৎসনা করলে সাপটি লজ্জায় মাথা নামিয়ে পাশের ঝোপে লুকিয়ে গেল।
গ্রামে ফেরার পর ক’দিন পার হতেই বাবলু খুব ভালো করে টের পেয়েছে মানুষের চেয়ে পশুপাখির চোখে তার জন্য অনেক বেশি মায়া! নিজের পরিবারের কেউ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তার চোখেও তেমনই মায়া দেখতে পেত সে!
বাবলু আর দাঁড়াল না। মূলত সে বাগদি ভিটের বর্তমান নিবাসীদের দেখতে এবং কিছুক্ষণের জন্য ওই পাথরটিতে বসতে এসেছে যাতে অতীত নিবাসীগণের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে যায়!
প্রায় আড়াই শত বছর ধরে পাথরটি এখানে আছে। বাগদি বাড়ির লোকজন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওটি ব্যবহার করেছেন। ফলে হাজার হাজার স্মৃতি জমা হয়েছে ওটার বুকে এবং ধীরে ধীরে সেটি জামকালো হয়ে উঠেছে।
এই ভিটের চতুর্থ প্রজন্মের বিন্তি ও তাঁর বাবা বিষ্ণুরাম বাগদিকে নির্মমভাবে হত্যার পরের রাতে বাড়ি ঘেঁষে ফরাক্কা খাল তৈরি হলে বাকি সদস্যগণ ভয় পেয়ে দূরে কোথাও চলে গেছেন। তারপর থেকে গত ত্রিশ বছর নিঃসঙ্গ পাথরটি এখানেই পড়ে আছে। বাগদিদের ফেলে যাওয়া কিছু জিনিস দিনে দিনে চুরি হয়ে গেছে এবং বাকি সব বছরে বছরে ধসে পড়েছে। কিন্তু পাথরটি কিছুটা ঔজ্জ্বল্য হারালেও আজও কক্ষচ্যুত হয়নি। আর বাবলু ছাড়া ওটাতে কেউ বসার সাহস দেখানো দূরে থাক হাত লাগালেই বাউকুমটা বাতাসের তাড়া খেয়ে কোনোমতে পালিয়ে বাঁচে!
ধূলো ঝেড়ে পাথরটির ওপর বসল বাবলু। সঙ্গে সঙ্গে ওর শিরদাঁড়া বেয়ে একটি শীতল স্রোত বয়ে গেল। আর শান্ত পরিবেশের মধ্যেও খালের দিক থেকে দমকা হাওয়া ছুটে এসে ওকে ঘিরে দু’পাক দিয়ে একরাশ ধূলো ও শুকনো পাতা ছড়িয়ে থেমে গেল। ও বুঝল, বিন্তি বাগদি আশেপাশেই আছেন। নয়তো এ হাওয়া এত দ্রুত থামত না। কিন্তু ও প্রায় কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ভিটের বাইরে তবু কিছুটা আলো এখনো আছে, কিন্তু এখানে ঘন ঝোপজঙ্গল ও ঝাঁকড়া গাছের জন্য এখনই বেশ অন্ধকার জমে গেছে।
বুক পকেট থেকে ছোট্ট গ্যাসলাইটারটি বের করে জ্বালল বাবলু। দেখল, সামনের ঘরের বারান্দার অল্প উঁচু মাটি থেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন বিন্তি! চুলগুলো উসকোখুসকো, চোখেমুখে বিষণ্ণতা। তিনি বাবলুকে ধমকে উঠলেন, ‘আলো বন্ধ কর, চোখে লাগে! তুই বিড়ি ফুঁকিস?’
বাবলু লাইটার বন্ধ করে ঠোঁট নাড়াল, ‘না গো পিসি, কাজের সময় কে যেন হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।’
‘বোকার মতো বদলি জেল খেটে এলি?… আমি জানি তুই লুকিয়ে ছিলি। তোর সীমাবদ্ধতার সুযোগে শিল্পী যা করেছে সেটা
ঘেন্নার কাজ কিন্তু তুই পাল্টা আঘাত দিতে জেলে লুকোনোর পথটাই পেলি?’
‘তুমি সবই জানো।’
‘ইশ্, আমার কণ্ঠস্বর যদি তোকে দিয়ে আসতে পারতাম! প্রিয় বান্ধবীর ভাইপো তুই। কিছু একটা করতে পারলে ওর ঋণ একটু হলেও শোধ দিতে পারতাম!’
‘মানুষের জীবন তবে পুরোটাই আফসোসে পরিপূর্ণ?’
‘মরণেও তার সমাপ্তি নেই!’
তারপর ক্ষণিকের নীরবতা। বাবলু টের পেল পুরো ভিটে জুড়ে স্তব্ধতা নেমেছে। শত শত পাখি, কয়েক ধরনের পশু, অসংখ্য ইতর প্রাণী মিলেমিশে বসবাস করে এখানে। অথচ এতটুকু শব্দ শোনা যাচ্ছে না। যেন জোরে শ্বাসও ফেলছে না কেউ! আগেও যতবার বাগদিদের সঙ্গে ওর দেখা হয়েছে ততবারই এমন পিনপতন নীরবতা নেমেছে পুরো বাগদি ভিটেয়।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিন্তি আবার বললেন, ‘সুফিয়া বেগম তোর সঙ্গে হঠাৎ এমন আচরণ কেন করেছে জানিস?’
অন্ধকারে দেখা না গেলেও বাবলুর মুখে ঠিকই অসহায় ভাব ফুটে উঠল, ‘না তো পিসি!’
‘তুই তো আগেই শুনেছিস, কিন্তু সুফিয়া গতকালই শুনেছে তোর পিসির সঙ্গে টুকু মিয়ার সম্পর্কের ব্যাপারটা। রাতভর ও-বাড়িতে ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি চলেছে। তাই তো তোর জন্য সুফিয়ার চোখে জমে থাকা মেকি অশ্রু শুকিয়ে দিয়েছে তার ভেতরের আগুনের হলকা। আজ যার আঁচ পেয়েছিস কেবল, তোর আরও সর্বনাশ হবে!’
‘সেই জন্যই আমি বেরিয়ে আসার সময় টুম্পা ঘর থেকে বের হলেও দাদিমার কোনো সাড়া শব্দই পাওয়া যায়নি!’
‘তোর জন্য টুম্পার ছাড়া আর একমাত্র তাঁর ভালোবাসাতে কোনো খাদ নেই।… ছেলের একটি অতীতকে তাঁর বউমা তাঁরই সামনে ন্যাংটো করে ছেড়েছে বলে তিনি লজ্জায় ও দুঃখে মুষড়ে পড়েছিলেন।… তুই হয়তো জানিস না, টুকু মিয়ার দ্বারা আমার বান্ধবী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল!’
‘ভুল সংজ্ঞা বিন্তি!’ হঠাৎ বিষ্ণুরাম বাগদির ঘড়ঘড়ে গলা শোনা গেল। ‘দুটি মনের মিলনের পর দেহের মিলন হলে তাকে ধর্ষণ বলা যায় না।’
‘আহ্ বাবু, মাথাটা লাগিয়ে নাও না, ও ভয় পাবে তো!’
‘ছোকরা ভয় পেলে টুম্পাকে নিয়ে পালাবে কীভাবে?’
‘হুম, তা ঠিক।… কিন্তু স্বীকৃত মিলনের পর সম্পর্ক অস্বীকারের মুখে পড়লে তাকে কী বলা যায়? ওর পিসিকে কেন ও-জগৎ ছেড়ে আসতে হয়েছিল?’
‘তার বিচার হওয়া উচিত কিন্তু স্বীকৃত মিলনের পবিত্রতা নষ্ট করে অমন নামকরণ অনভিপ্রেত।’
বাবলু চুপচাপ বাবা মেয়ের বিতর্ক শুনছে। অন্ধকার আরও ঘনীভূত হয়ে এসেছে, তার মধ্যেই চলছে তাঁদের কথোপকথন। এমন অন্ধকারে মুখ না দেখে কথা বলা সে এখান থেকেই রপ্ত করেছে।
দূর থেকে ভেসে আসছে বাঁশির সুর। কে যেন তার হৃদয় উপচানো দুঃখ ছড়িয়ে দিচ্ছে সুরে সুরে! বাঁশিওয়ালা বুঝি ওর দুঃখের সারথি হয়েই অমন মন কেমন করা সুর ছড়াচ্ছে, মনে হলো বাবলুর। দুধের বলকের মতো উথলে উঠল তার হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তোলা দুঃখগুলো। সে আক্ষরিক অর্থেই কেঁপে উঠল। আর অনুভব করল সে বড্ড দুঃখী মানুষগুলোর সম্প্রদায়ভুক্ত! খুব ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে। তার সঙ্গে হারিয়ে ফেলেছে নিজের কণ্ঠস্বর। তারপর দাদার শাসনে-আদরে বড় হতে না হতেই ঝোঁকের মাথায় সংসার পেতে হারিয়েছে সেটাও। এখন নিজের পরিবারের কেউ আর বেঁচে নেই, এমনকি নেই তার থাকার ঘরও!
যে ফুপুর কোনো স্মৃতি মনে জমা নেই তাঁর করুণ পরিণতির খবরটি বাবলুকে এখন যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অচেনা কোনো এক বেদনা নগরে! যেখানে প্রবেশের অনুভূতি ওকে খুব দ্রুত বিমর্ষ করে দিলো। তবে ওর বিমর্ষ ভাব কাটাতেই যেন আকাশের আধখানা চাঁদের মুখ থেকে সরে গেল ছাইরঙা মেঘের টুকরোটি! আর মায়াভরা জোছনায় জেগে উঠল চারপাশ!
বিষয়টি বিন্তির দৃষ্টি এড়াল না। তিনি তাকিয়ে ছিলেন ভিটের ঝোপঝাড় ছাড়িয়ে ফরাক্কার ওপারের ধানখেতের দিকে। হঠাৎই চাঁদের আলোয় ওগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠলে তিনি চোখ ফিরিয়ে এনে তাঁর মাথার উপরের গাছগুলোর দিকে তাকালেন। সেখানে জোড় বেঁধে থাকা আম কাঁঠালের দুটো বড় বড় ডাল তক্ষুনি আলাদা হয়ে গেলে জোছনা নামল বাগদি বাড়ির ধুলো-মলিন উঠোনে! তাতে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য ফুটে উঠল। যদিও কিছু বছর আগেও এই উঠোন ঝকঝকে তকতকে ছিল, ছিল দারুণ প্রাণবন্ত।
ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া ঘরগুলোর একটির বারান্দা থেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন বিন্তি এবং তার পাশের বারান্দা থেকে একই ভঙ্গিতে বিষ্ণুরাম। দু’জনের গায়েই পরপারে যাবার সময়ের সেই রক্তমাখা কাপড়! জোছনায় রক্তের দাগগুলো কাপড়ের ওপর ছোপ ছোপ কালো রং বলে মনে হচ্ছে!
বাবলুর মনে প্রশ্নে ছিল, বিতর্কে যে স্বীকৃত মিলনের কথা তাঁরা বলছিলেন তা কোনটি দ্বারা স্বীকৃত, আইন নাকি ধর্ম? কিন্তু এক্ষুনি ওর মনে হলো, এই প্রশ্নটি তুললেই বিষ্ণুরাম বাগদি নিশ্চয়ই খেঁকিয়ে উঠবেন, ‘পড়াশোনা একদম ছেড়ে দিয়েছিস হে ছোকরা? একটু পড়াশোনা করে দেখ্, কোনো সভ্য দেশের আইনে প্রাপ্তবয়স্ক দুটি মানুষের সমঝোতায় স্থাপিত সম্পর্ককে অস্বীকার করা হয়নি।’
তারপর উত্তেজনার বশে হয়তো ভুলভাল বকবেন, ‘আর তোকে আগেও শুনিয়েছিলাম এই বাণী, মানুষ এনেছে ধর্ম, ধর্ম আনেনি মানুষ কোনো।’
বাবলু যদি শুদ্ধ করে দিয়ে বলে, ওটা ‘মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো’ হবে দাদু। তাহলে হয়তো আরেক প্রস্থ বক্তৃতা চালিয়ে দেবেন বিষ্ণুরাম বাগদি এবং ধর্ম, ধার্মিক ও ধর্মান্ধতা নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ উগরে দিতে দিতে উত্তেজনার শিখরে পৌঁছে যাবেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিন্তিকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এমনটা আগেও হয়েছে। কিংবা তিনি হয়তো তাচ্ছিল্যের সুরে বলবেন, ‘তোদের কর্মকাণ্ড দেখে দেখে নজরুলের ওই বিখ্যাত পঙক্তির বিষ্ণুরাম বাগদি সংস্করণ বানাতেই হলো, মূর্খ!’
বাবলু উঠে পড়ল। এবার তাকে ফিরতে হবে। কিছু কথা বুকের ভেতরটায় তড়পাচ্ছে খুব। ছটফট করছে কিছু প্রশ্ন। টুম্পার সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু সুফিয়া বেগমের অমন রূঢ় আচরণের পর ও-বাড়িতে যেতে মন সায় দিচ্ছে না ওর। অথচ টুম্পার দেখা না পেলে, ওর স্পর্শ না পেলে যে দু’জনের দুটো অস্তিত্ব মিলে এক হতে পারবে না, আর সে কণ্ঠস্বরও খুঁজে পাবে না! তাহলে আলোচনা করবে কী করে? কী করে বুকের ভেতরে ছটফট করতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করবে দু’জন?
ভিটে থেকে বেরিয়েই বাবলু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, বাড়িতে ফিরে সে টুম্পাকে একটি চিঠি লিখবে। তারপর দেখা হলেই টুম্পার পোষা ময়নাপাখিটির গলায় সেটি ঝুলিয়ে দেবে টুম্পার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
বিষ্ণুরাম কিংবা বিন্তি কেউই বাবলুকে পিছু ডাকলেন না। দু’জনই মৌন হয়ে স্মৃতি রোমন্থন করছেন। বিন্তি ফিরে গেছেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শেষ শ্রেণির সময়টায়। তখন সবেমাত্র বাবলুর ফুপু ও টুকু মিয়ার মধ্যে ‘প্রেম’ লাজুক-লাজুক চোখে তাকাচ্ছে। স্কুলের পথে, বারান্দায়, ক্লাসে সহপাঠীদের আড়াল থেকে চলছে চোরা চাহনিতে পরস্পরকে দেখাদেখি। তারপরের ছোট ছোট অনেকগুলো দৃশ্য দমকা হাওয়ার মতো বিন্তির চোখের সামনে দিয়ে ছুটে গেল। সব দেখে তিনি ছোট্ট একটি শ্বাস ফেললেন।
বিষ্ণুরাম ফিরে গেছেন তাঁদের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতির কিছুদিন আগের সময়টায়। বাড়ির পাশের ত্রিশ কাঠা জমির মালিকানা নিয়ে তখন সরকার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে তাঁর তুমুল বিরোধ চলছে। কিন্তু তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি শহর থেকে প্রতিপক্ষের লতা-পাতায় সম্পর্ক ধরে আসা ছেলেপুলেগুলো তাঁদের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে! সেই কালরাত্রির দৃশ্য সামনে আসতেই তিনি চোখ ঘুরিয়ে নিলেন এবং তাঁর মেয়ের দিকে তাকালেন। একই সময়ে বিন্তিও তাকালেন তাঁর বাবার দিকে। দৃৃষ্টি বিনিময় হতেই দু’জনের মনে প্রশ্ন জাগল, ‘ভিটে থেকে নেমে বাবলু খালের দিকে কেন গেল?’
তাঁরা হাওয়ার বেগে খাল পারে গিয়ে দেখলেন বাবলু জলে নামছে! অবাক হয়ে বিন্তি ওকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই জলে নামছিস কেন রে?’
পেছন ফিরে বিড়বিড় করল বাবলু, ‘পুকুরের মাছে আনুজার অরুচি ধরে গেছে পিসি। অসুস্থ বোন আমার কিস্যু খেতে পারে না। দেখি
দু-চারটা….।’
এবার সত্যিই খেঁকিয়ে উঠলেন বিষ্ণুরাম বাগদি, ‘আহা, কী মহান জেলে এলেন উনি! অই ছোকরা, এতটা পথ ভেজা কাপড়ে ফিরবি?’
‘আর এগোস না বাবা। দু’হাতে কাদাজলে একটু খোঁজ, কিছু একটা নিশ্চয়ই পাবি।’ স্মিত হাসি ছড়িয়ে পড়ল বিন্তির চোখেমুখে।
বাবলু আর এগোলো না। উবু হয়ে আধ হাঁটুজলে দু’হাত ডুবিয়ে একটু খুঁজতেই ওর হাতে আটকে গেল বেশ বড়সড় একটি রুই!
মাছটি নিয়ে সে পানি থেকে উঠে এলো এবং দু’হাতের চাপে ওটার ছটফটানো সামলাতে সামলাতে বিষ্ণুরাম বাগদির দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি ছুঁড়ে দিলো, ‘টুম্পাকে নিয়ে পালানোর কথা কেন বললেন দাদু?’
উত্তর দেবেন না বলেই হয়তো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন বিষ্ণুরাম!
আকাশ থেকে পরম যত্নে জোছনা ঢালছে আধখানা চাঁদ। সেই আলোয় বিন্তির মুখে ‘উত্তর পাওয়া যাবে’ এমন ইঙ্গিত খুঁজে না পেয়ে ফিরতি পথ ধরল বাবলু। আর তক্ষুনি পেছন থেকে ভেসে এলো ছোট্ট একটি শ্বাস ফেলার শব্দ। ঠিক একই সময় বাবলুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকা বাগদি ভিটেয় অসংখ্য পশুপাখির দীর্ঘশ্বাস পড়ল এবং সকলের দীর্ঘশ্বাস মিলে তৈরি হলো এক ঝাপটা হাওয়া, যা ছুটে এসে ছুঁয়ে ফেলল ওকে! সেই হাওয়ায় মিশে আছে আশীর্বাদের অসংখ্য বাণী।
বাগদি ভিটের বর্তমান অধিবাসীগণ তাদের প্রিয় মানুষটির জন্য শুভকামনা পাঠিয়ে কিছুটা স্বস্তি নিয়েই ঘুমের আয়োজন শুরু করল।
বিষ্ণুরাম বাগদি এবং বিন্তি ফরাক্কা খালের জলে নেমে গেলেন। অথচ জলে একটুও কাঁপন লাগল না! তেমনই শান্ত ও নিটোল হয়ে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে! যেখানে বাবলুর জন্য পাঠানো শুভকামনাগুলো ইতোমধ্যেই তারা হয়ে ফুটতে শুরু করেছে, যাতে আলোকিত হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের দিকে এগোনো ওর পথগুলো!