লেখক-গবেষক-অভিধানকার ড. গোলাম মুরশিদ প্রয়াত

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র গোলাম মুরশিদ প্রয়াত। আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টে এবং লন্ডন সময় সকাল ১১টায় লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ সময় তাঁর কাছে ছিলেন স্ত্রী এলিজা মুরশিদ এবং কন্যা বিপাশা গার্গী মুরশিদ ( অমিতা)। তাঁর ছেলে পাণিনি মুরশিদ (অন্তু) বর্তমানে আমেরিকায়। তিনি লন্ডনে পৌঁছানোর পর গোলাম মুরশিদকে লন্ডনেই সমাহিত করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ঢাকার বাংলা একাডেমি সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশি লেখক, গবেষক, সংবাদ উপস্থাপক এবং আভিধানকার গোলাম মুরশিদ চিন্তার ব্যাপ্তি, গভীরতা, ঋজুতা ও স্বকীয়তায় এক অনন্য বাঙালি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন নতুন গ্রন্থ। মানসিকভাবে তিনি ভীষণ দৃঢ়চেতা মানুষ।
১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামে গোলাম মুরশিদ জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেছেন। তাঁর প্রথম কর্মজীবন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পরে প্রায় দুই দশক অধ্যাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন লন্ডনের বিবিসি বাংলা বিভাগে। এছাড়া ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

গোলাম মুরশিদ তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন প্রাচীন ঋষিদের মতো জ্ঞান আহরণে, গবেষণায় আর লেখায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে : ‘আশার ছলনে ভুলি’, ‘কালান্তরে বাংলা গদ্য’, ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারীপ্রগতির একশো বছর’, ‘সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’, ‘রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ প্রভৃতি।


সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে প্রবন্ধ গবেষণার জন্য ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক লাভ অন্যতম। তাঁর মৃত্যুসংবাদে সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।