রক্তাপ্লতা
সমর সুর
রাস্তার পাশ দিয়ে আর একটা একটা রাস্তা
হেঁটে যাচ্ছে
আড়চোখে দেখি তন্বী শরীর।
নিবিড় অন্ধকার। ঝিঁঝিপোকার গানে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সাঁকো।
ঝুলে থাকা স্বর্ণলতাকে মাধবীর চুল ভেবে
অস্ত্র লুকিয়ে রাখি।
দূর থেকে কাঁঠালচাঁপার গন্ধ ভেসে আসে
ঠিক যেন প্রথম কাছে আসা মেয়েটির শরীরের ঘ্রাণ।
বাড়ি ফিরি
ঘুমের ভিতর হেডমাস্টাররে মেয়ের সঙ্গে দেখা হল
এত বছর বাদেও আমায় মনে রেখেছে
ঘুমের ভিতর তো সে এল।
সে আমায় হাত ধরে নিয়ে গেল রক্তদান শিবিরে।
কীকরে বোঝাই
আমি বহুবছর ধরে রক্তাপ্লতায় ভুগছি
ঘুম ভেঙে যেতেই দেখি
সাঁকোর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
প্রিয়জন
সুতপা পূততুণ্ড
এসো, আগুন জ্বালাই
চকমকি ঠুকে!
মনে যত বসন্ত আছে
সবুজ ঘাসের বুকে।
সুখ যদি নাই দিলাম
প্রিয়জনে
অন্তত বৃষ্টি বুনি
অতি সংগোপনে।
রাগ হয় গ্রীষ্মের
পাথুরে বাতাস দেখে
বৈশাখের বীজ বোনা
প্রকৃতি রোখে।
অহেতুক সংশয়
কেন জাগে মনে
মনের অধীন হলে
অতিদূর থাকে না প্রিয়জনে।
নিভৃত
কিরণময় পাত্র
ঢেউ থাকে চিরদিন—
সাগরের জলে,
মরমিয়া ভালোবাসা ঢেউয়ের তলে।
জলের সাগর আর মানুষের মন,
ডুবুরি চায় পেতে অমূল্য রতন।
একদিন সব ভুলে—
নেমে যাবো জলে,
ঢেউ ভেঙে ডুব দেবো অন্তর তলে।
প্রতিচ্ছবি
রিয়াদ হায়দার
জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ালে
একটা আকাশ জুড়ে
অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি।
তোমার মুখের মানচিত্রে তখন
ঘোর অমাবস্যা
অন্ধকারে এভাবেই প্রতিনিয়ত
হারিয়ে যাই আমরা…
প্রলেপের অন্ধকার ক্ষত
অভিজিৎ রায়
যখনই মুখর হবে তুমি,
তখনই নীরব হতে হতে
আমি শুধু তোমাকেই শুনি
প্রলেপের অন্ধকার ক্ষতে।
প্রলেপের সুর লাগে দেহে
ক্ষতে জাগে প্রাণের আরাম,
ভালবাসা আর কত স্নেহে
দিয়ে যাবে সময়ের দাম?
কাহিনির শুরু থেকে শেষ
তারা খসা রাতের আকাশ
ভুলে থাকে ঘৃণা আর দ্বেষ,
পড়ে থাকে মুখরিত লাশ।
মুখরিত ভালবাসা জানে
ঢেকে রাখা বিষাদ, বিস্ময়;
তারা খসে চেনা অভিমানে,
প্রলেপের দামে পরাজয়।
যখনই মুখর হব আমি,
তখনই নীরব থাকো যদি;
ভালবাসা হবে আরও দামী
ক্ষতের প্রলেপে ভেজে নদী।
সুরের সাধনা
দুর্গাদাস মিদ্যা
তোমার মনের উদ্বেল বাগিচায়
ওই যে ভিনদেশী পাখি গান গায়
তার সুর তুমি বেঁধে নাও তারে।
বাজুক সেই সুর সপ্তম সুরে, বেজে যাক
দেখো কী মধুর লাগে
মনের গোপন অলিন্দে যে অনাবিল আনন্দ জাগে
তাতে তোমার জীবন হবে আনন্দে ভরপুর
সেই সুরের সাধনায় জীবন হবে ভীষণ মধুর।
যদি চিনতে পারো
তন্ময় কবিরাজ
যদি চিনতে পারো
নাম রেখো তার সুখ—
আমি তো ভাঙছি পথ
সুখের বালিশে মৃত্যু শুয়ে—
আর কটা দিন বেঁচে থেকো
সুখের ভেতর কুয়াশা তখন—
নদীর পাশে বসেছি
নৌকো রেখে মরেছে স্রোত—
আমি চিনতে পারি সুখ
হঠাৎ যেমন শিশির ঝরে গেল—
প্রথা
মাহমুদ নজির
কিছু কিছু ভুল
সহজেই মেনে নিতে হয়,
কিছু কিছু মন্দ দোষ
চোখ বুজে দিতে হয় ছাড়।
কিছু কিছু কথা
অনায়াসে ভুলে যেতে হয়,
কিছু কিছু অপ্রিয় স্মৃতি
মনে করতে নেই আর।
কিছু কিছু দীর্ঘশ্বাস
চাপা রেখে বুকে
চলতে হয় বলতে হয় কথা,
কিছু কিছু কারণে
ভাঙতে হয় রীতি নীতি
পুরোনো ভুল প্রথা।
সুরের সাধনা
দুর্গাদাস মিদ্যা
তোমার মনের উদ্বেল বাগিচায়
ওই যে ভিনদেশী পাখি গান গায়
তার সুর তুমি বেঁধে নাও তারে।
বাজুক সেই সুর সপ্তম সুরে, বেজে যাক
দেখো কী মধুর লাগে
মনের গোপন অলিন্দে যে অনাবিল আনন্দ জাগে
তাতে তোমার জীবন হবে আনন্দে ভরপুর
সেই সুরের সাধনায় জীবন হবে ভীষণ মধুর।
গ্রহণকাল
বর্ণালী ভৌমিক দে
ছেয়ে যায় তমসা— গ্রহণকাল।
আমি বারবার এই বিষণ্ণতার প্রেমে পড়ি
ক্ষয়ে যেতে যেতে হারিয়ে যাওয়া।
বিলীয়মান চাঁদেরও হয়তো
মনে পড়ে পূর্ণিমার রাত।
ভিজে গিয়েছিল পৃথিবীর প্রান্তর
চুঁইয়ে পড়া নরম আলোতে।
জোৎস্নায় মুখ তোলে উত্তুঙ্গ
পর্বত ঐশ্বরিক আশ্লেষে
ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেরা চরাচর জুড়ে।
অতঃপর কোনো কিছুই স্থবির নয়।
অন্তহীন প্রতীক্ষারাও আহ্নিক গতিতে পথ হারায়।
অব্যক্ত কথাদের ভারে চাঁদ
ডুবে যায় অশুভ গ্রহণে।