কৈলাস দর্শন

ফাইল চিত্র

দেবাশিস ভট্টাচার্য

কৈলাসের কথা বললে প্রথম যেটা মাথায় আসে তা হল মানস কৈলাস। যা তিব্বতে অবস্থিত। একে মাউন্ট কৈলাস‌ ও বলা হয়, এখন চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। আমি এবং আমার এক সহকর্মী অনেকদিন আগে থেকেই ঠিক করছিলাম কিভাবে এই কৈলাসে যাওয়া যায়। নানাভাবে খোঁজখবর নিচ্ছিলাম কিন্তু করোনা বাধা, পরবর্তী সময়ে এই মানস যাওয়ার সুযোগ একেবারেই কমে যায়। তারপর পরবর্তী সময়ে লাদাখ অঞ্চলে চীনের সঙ্গে ভারতের যে সামরিক সমস্যা তৈরি হয় তখন থেকেই চীন আর কোনো ভারতীয়কে মানস কৈলাস যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।  আমরা ঠিক করলাম আমরা আদি কৈলাস যাব। এবং প্রসঙ্গত বলা যায় যে, আদি কৈলাশ নিয়ে করোনা সময়ের পর থেকেই পর্যটনের একটা জায়গা করে নিয়েছে। বছর কয়েক হল পর্যটনকারীরা এই জায়গায় যেতে শুরু করেছে।  সেই অর্থে এইসব জায়গায় থাকা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার খুব একটা বেশি প্রসার ঘটেনি। আমরা জানি, হিমালয়ের সুদীর্ঘ রেঞ্জের যে পর্বতমালা তাতে পাঁচটি কৈলাস আছে, তার একটি তিব্বতে মানস কৈলাস, আমাদের দেশে আর চারটি কৈলাস আছে তার মধ্যে আদি কৈলাস সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু বাকি তিনটি কৈলাসে যথা মনিমহেশ কৈলাস,  শ্রীখণ্ড কৈলাশ ও কিন্নর কৈলাস, প্রায় ১৪/ ১৫ কিলোমিটারের উপর ট্র্যেকিং করে যেতে হয়। সেখানে গাড়িতে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তাছাড়া এই রাস্তা অত্যন্ত বিপদসংকুল। ফলে এখন আদি কৈলাসে যাওয়ার একটা ঢল নেমেছে, প্রচুর মানুষ আদি কৈলাস যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।  আদি কৈলাস শিব কৈলাস বা ছোট কৈলাস, উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায়  ভারত তিব্বত সীমান্তে হিমালয় রেঞ্জের জংলিংকং-এ অবস্থিত একটি পর্বতমালা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৯৭০০ ফিট। হিন্দু ও জৈন ধর্মের মানুষের কাছে এক ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থল। ভগবান শিবের আবাস, শিব পার্বতীর বিবাহের আগে তাঁরা এখানে অপেক্ষা করেছিলেন বলে তাদের বিশ্বাস। এরকম অনেক গল্পকথা চাউর আছে।  আমি নেহাতই পর্যটক হিসেবে এই জায়গাটাকে দেখতে যাওয়ার বহু দিনের ইচ্ছে ছিল। সেটা পূরণ করতে বেরিয়ে পড়েছিলাম কলকাতাস্থিত একটি ট্রাভেল এজেন্ট সংস্থার সঙ্গে। তাদের সঙ্গে আমরা ঠিক করেছিলাম, তারা আমাদের লালকুয়া থেকে নিয়ে পুরো আদি কৈলাস ও পঞ্চচুল্লি দর্শন করিয়ে আবার লালকুয়াতে নামিয়ে দেবে। মোট ১০ দিনের যাত্রা ছিল। সেই মতো আমরা অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্রেনে হাওড়া থেকে লালকুয়া পৌঁছাই। এবং তারা আমাদের লালকুয়া থেকে পিকআপ করে নেয়।  প্রথম দিন আমরা লালকুয়া থেকে গাড়িতে আড়াইশো কিলোমিটার দূরে  পিথোরাগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সেখানেই আমাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।  যাওয়ার পথে ভীমতাল হয়ে জাগেশ্বর মন্দির হয়ে আমরা প্রায় সন্ধ্যা বেলায় পিথোরাগড় পৌঁছলাম। ভীমতাল পান্না সবুজ বিশাল লেকের জলে সবুজ দ্বীপ। এরই কাছাকাছি কাঁচিধাম এখন একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান, বিশেষ করে স্টিভ জোবস, বিরাট কোহলি এখানে এই মন্দিরে আসার পর থেকেই এই মন্দিরগুলোর রমরমা বেড়ে যায়। প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। সবার বিশ্বাস এখানে এলে তাদের অপূরণ হওয়া মনস্কামনা পূর্ণ হয়। পিথোরাগড় যাওয়ার পথে জাগেশ্বর মন্দিরও বৌদ্ধ শৈলীর ভাস্কর্য স্থাপত্য বেশ সুন্দর। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে জটাগঙ্গা নদী। সেখানে আমাদের দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। আমি এই পিথোরাগড় বছর কুড়ি আগে একবার এসেছিলাম। দেখে অবাক হয়ে গেলাম সেই ছোট্ট জনমানবহীন জায়গার এত পরিবর্তন হয়েছে। প্রচুর হোটেল দোকানপাট ঘরবাড়ি প্রচুর মানুষ, আগের সেই নিরিবিলি চেহারাটাই বদলে গেছে। এখন দিল্লির সঙ্গে ফ্লাইটের যোগাযোগও হয়েছে, সপ্তাহে তিন দিন দিল্লি থেকে ছোট প্লেন ওঠানামা করে। রাস্তায় চলার পথে হিমালয়ের রেঞ্জটা পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। গাড়িতে চলতে চলতে সাদা বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়ের চূড়াগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম, ড্রাইভার জানালো সেটা হিমালয়ের নন্দা দেবী রেঞ্জ। মনে পড়ে গেল নবনীতা দেবসেনের কথা, ‘হিমালয় একেবারে অন্য ব্যাপার অন্য এক লোক! যার ছবি ভূগোলের খাতায় বাদামী রঙের কিরি কিরি করে আঁকা যায় না। তার তো মানচিত্র হয় না তার হয় সম্মান চিত্র, হিমালয়কে দেখা যায় না, হিমালয় দেখা দেন।’

ঘন পাইন বনের ঘেরা লম্বা লম্বা চওড়া রাস্তা, দিগন্তবিস্তৃত হিমালয়ের শৃঙ্গরাজি প্রকৃতিকে মহিমামণ্ডিত করে তুলেছে। পিথোরাগড় জেলাকে কাশ্মীরে মিনি সংস্করণ বলা হয়। পাঁচটা পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই পিথোরাগড় জেলা।  একটা রাত্রি কাটিয়ে পরের দিন সকালে আমরা প্রস্তুত হলাম আদি কৈলাসের আগে নাবি বলে একটি গ্রামে যাবার। সেখানে আমাদের পরের দিনের রাত্রে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। তার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। নাবি থেকেই আমরা আদি কৈলাস যাত্রা করবো। দীর্ঘ পথ, গাইড বলল আমাদের পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, ধসপ্রবণ এলাকা, পিথোরাগড় থেকে ধারচুলা পর্যন্ত ভালোই গেলাম। ধারচুলা আদি কৈলাস যাবার পথে গেটওয়ে। এর পরের রাস্তা যা অবস্থা দেখলাম তা মারাত্মক। মাঝে মাঝেই ধস নেমেছে রাস্তাতে, সারাইয়ের কাজ চলছে। কোন রকমে খুবই সন্তর্পণে গাড়ি চলছে। একদিকে যেমন বিশাল পাহাড়ের সারি আর একদিকে তেমনি অতল গহ্বর, খাদ। অজস্র ছোট বড় ঝর্না। কালী নদী দুই দেশকে ভাগ করে দিয়েছে একদিকে ভারত আর অন্যদিকে নেপাল। যাবার পথে বেশ কিছু নাম জানা না জানা ছোট ছোট গ্রাম চোখে পড়ল।  গাইড আমাদের বলে দিচ্ছিল এই গ্রামের নাম, এই নদীর নাম, এই পাহাড়ের নাম ইত্যাদি ইত্যাদি। ক্রমশ লোকালয় কমতে থাকলো, এক অনন্ত অন্তবিহীন পথে চলা শুরু হলো। এতক্ষণ পাহাড়গুলোতে নানা রকমের ওক পাইন দেবদারু গাছ ছিল। হিমালয় রেঞ্জের নাম না জানা পর্বতগুলো একটার পর একটা দূরে সরে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে পাহাড়ের চেহারাগুলো বদলে গেল। রঙগুলো বদলাতে শুরু করল। আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, আমরা অনেকটা উচ্চতায় উঠে যাচ্ছি। যেখানে আর বিশেষ গাছপালা নেই পাহাড়ের মাথাগুলো সব রুক্ষ। এতক্ষণ সবুজ পাহাড় গুলোর সব রং বদলে যাচ্ছে, ধূসর আকার নিয়ে নিয়েছে। রাস্তার অবস্থা এত মারাত্মক যে মাঝে মাঝে খুব ভয়ও লেগে যাচ্ছিল। পাহাড় থেকে নেমে আসা কয়েকটা ঝর্না মধ্যে দিয়েই গাড়ি গেল। গাড়ি ছিয়ালেখ পাস দিয়ে চলতে লাগল। প্রকৃতির এক ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য এখানে। দেখলেই মন উদাস হয়ে যায়। এইভাবেই আমরা পৌঁছে গেলাম বুধি গ্রাম। আদি কৈলাস যাওয়ার পথে প্রথম চেক পোস্ট। আমাদের পারমিট দেখানোর জায়গা। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এই পারমিট করানোর সময় শারীরিক সক্ষমতা আছে কিনা মেডিক্যাল অফিসারের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হয়। শ্বাসকষ্ট জনিত কোনও রোগ থাকলে  এখানে না যাওয়াই ভালো। লোকালয়ে যত কমে যাচ্ছে তত আর্মি ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ছে যেহেতু এটা ভারত চীন সীমান্তে অবস্থিত তাই বেশ কিছু আর্মি ক্যাম্প পর পর আমরা দেখতে পেলাম। বুধি গ্রামে চেকপোষ্টে ইন্দো তিব্বত বর্ডার পুলিশের, এদের কাছে পারমিট দেখিয়ে কাগজপত্র রেডি করার পর আমরা ঠিক করলাম এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেওয়া যাক। অল্প কয়েকটা বাড়ি নিয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম। গাইড জানালো এখান থেকে তিন কিলোমিটার ওপরে মানব কঙ্কাল সম্মিলিত একটা গুহা আছে। আসার পথে যে কটা গ্রাম আমরা দেখেছিলাম যার মধ্যে গার্বিয়াঙ, নেপালচু এইসব গ্রামেও হাজার কঙ্কালের গুহা আছে। বলা হয় এই কঙ্কালের গুহা প্রাচীন মানব দেহাবশেষের রহস্য যোগ করে। চলার পথে গাইডের কাছ থেকে এরকম অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যায় বা নানা রকমের গল্প শোনা যায় যা পথের ক্লান্তিকে অনেকটা দূর করে দেয়। এখানে খাওয়ার সবই নিরামিষ। ভাত রুটি ডাল বাঁধাকপির তরকারি লাউ পাঁপড় ভাজা, মূলত আমাদের খাবারের মেনু এরকমই ছিল। খেতে বসে গাইড মোরেল মাশরুমের কথা বলল মোড়ের মাশরুম বা গুচ্চি মাশরুম এগুলো খুবই দামি এই সমস্ত পাহাড়ি এলাকাতে পাওয়া যায় সাধারণত মে মাসে এগুলো দেখতে পাওয়া যায়। ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা কেজি, এরা বলে মোরেল মাশরুমের পোলাও খুবই সুস্বাদু এবং উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন।  ওষুধের কাজে ও ব্যবহার হয়। মোড়েল মাশরুমের কথা শুনে শুনে বাঁধাকপি দিয়ে রুটি খেয়ে দুপুরের খাবার শেষ করলাম। আবার “কীরাজোরী” বলে এক ধরনের ফাঙ্গাসের কথা শুনলাম। মরা শুঁয়োপোকার মাথায়  এই ফাঙ্গাস তৈরি হয়। মে জুন মাসে যখন পাহাড়ের মাথা থেকে বরফ গলে তখন সেখানে এই মরা শুঁয়োপোকা থেকে ফাঙ্গাস গুলো তৈরি হয়। পাহাড়ের মানুষ এই ফাঙ্গাস সংগ্রহ করে যা বিভিন্ন রকমের ওষুধের জন্য ব্যবহার হয়। বিশেষ করে চীন তিব্বত এই এলাকাগুলোতে মানুষ ব্যবহার করে। তবে দাম শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেল, এগুলো নাকি কয়েক লাখ টাকা কেজি। আর এইসব সংগ্রহ করাও খুবই বিপদের। বহু মানুষ পাহাড়ে সংগ্রহ করতে গিয়ে মারা পড়ে। ঐ গ্রামে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর আবার গাড়ি চলতে শুরু করল। সন্ধের দিকে আমরা নাবি গ্রামে পৌঁছে গেলাম। বুধি গ্রামের তুলনায় এখানে জনসংখ্যা বেশি, ঘরবাড়ি বেশি। হয়তো আদি কৈলাশ যাওয়ার পথে এটাই শেষ গ্রাম কারণ এর পরে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই তাই হয়তো পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই এখানে বেশ কিছু ঘর বাড়ি তৈরি হয়েছে। আমাদের এখানে যেখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সেই বাড়িটি প্রায় ২১৮ বছরের পুরনো। বিশাল এলাকা জুড়ে বাড়িটি, বড় উঠোন রয়েছে পাশে রান্নাঘর খাবার জায়গা তারও পাশে কাঠের তৈরি কয়েকটি ঘর। জায়গাটি দেখে বেশ ভালই লাগলো। সুযোগ সুবিধা সেরকম নেই, ইলেকট্রিসিটি নেই। সোলার লাইট আর জেনারেটরের উপর নির্ভর করে রয়েছে। বুধি গ্রাম থেকে  বেরোনোর পর আমরা বুঝতে পারছিলাম যে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। এখানে পৌঁছে একদম হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে পড়লাম। এখান থেকেই চারিদিকে নাম না জানা অনেক পাহাড় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যাদের মাথাগুলো বরফে ঢাকা। আমরা একটা ঘরে পাঁচজন ছিলাম। থাকার ব্যবস্থা ভালই। এইসব জায়গায় আমরা সাধারণত যেভাবে হোটেলে থাকতে অভ্যস্ত, হোটেলের সেই সুযোগ সুবিধা না থাকলেও এই জায়গার কথা মাথায় রাখলে যেটুকু সুবিধে এর মধ্যেই দেওয়া হয়েছিল আমাদের কাছে তা যথেষ্ট। জলে হাত দেওয়ার উপায় নেই, মনে হচ্ছে হাত কেটে বেরিয়ে যাবে এত ঠান্ডা। বড় বড় ড্রামে গরম জল রাখা আছে। ঠান্ডা জলের সাথে মিশিয়ে সেটাই খাওয়া হাতমুখ ধোয়া বাথরুমে ব্যবহার করা, সব কিছুর জন্যই একই জল। বিশাল কাঠের আগুনে রান্না হচ্ছে। চা তৈরি করেই রাখা ছিল। চারিদিকে একটা উৎসবের চেহারা নিয়ে ছিল। প্রচুর মানুষ কৈলাসের পথে যাচ্ছে। আমাদের গ্রুপটা ছোট ছিল না, মোট ১৭ জনের এই গ্রুপ। স্নান জামাকাপড় চেঞ্জ করার কোন প্রশ্নই নেই ওই ঠান্ডায়, কোনও রকমে হাত মুখ ধুয়ে গরম গরম চা পকোড়া নিয়ে আমরা আগুন জ্বালিয়ে সামনে বসলাম। নানারকমের গল্প শুরু হল, কিছু উৎসাহী তারা গান বাজনা শুরু করলো সেখানকার স্থানীয় মানুষদের নিয়ে। মাঝে মাঝে কেমন অবাক লাগে, দুদিন আগেও কেউ কাউকে চিনতাম না আমরা অথচ এখন চলার সময় মনে হয় সবাই সবার কত পরিচিত। যে কারোর কোনো অসুবিধা হলে আরেকজন তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পরের দিন ভোরে  উঠতে হবে কারণ সূর্য ওঠার আগে যেতে না পারলে সকালের সেই সোনালি মুহূর্তকে ধরা যাবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে পড়তে হবে। সন্ধ্যা আটটার মধ্যে খাবারের ডাক এসে গেল। অবশ্য পাহাড়িদের কাছে এটাই অনেক রাত। জেনারেটরের মৃদু আলো তাতেই সব কাজ সারতে হবে, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আবার সেই একই নিরামিষ খাবার, গরম গরম খেয়েই একদম বিছানায় চলে গেলাম। জুতোটা খুলে লেপের ভেতর নিজেকে ঢুকিয়ে দিলাম। ওই প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘুম আসতে চায় না। ঠান্ডার চোটে নাক গাল ঠোঁট সব ফেটে চৌচির। কোন ক্রিমেই কাজ হচ্ছে না। এখানে কোনও সৌখিনতার বা বিলাসিতার ব্যাপার নেই। অত তাড়াতাড়ি শোয়ার অভ্যেসও নেই তবে সারাদিন যাত্রার এক ধকল ছিল, শরীরও ক্লান্ত ছিল তো বটেই। নিজেদের মধ্যেই আমরা গল্প করছিলাম। আমাদের মধ্যে দুজন ছিলেন যাদের বিভিন্ন পাহাড়ে ঘোরার ও ট্র্যেকিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে। তাঁরা তাদের সেই সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলছিলেন। সেসব শুনতে শুনতে কখন চোখ লেগে গেছিল।


ভোর তিনটে নাগাদ উঠে পড়লাম। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি অন্ধকারের মধ্যে চাঁদের আলোয় পাহাড় গুলোর অপরূপ দৃশ্য। বরফের উপর চাঁদের আলো পড়ে সে এক অপার সৌন্দর্য। কোনরকমে গরম জল ঠান্ডা জল মিশিয়ে মুখ হাত পা ধুয়ে নিজেদের তৈরি করে  গাড়িতে উঠলাম। তখন ঠান্ডা অনেকটা সয়ে গেছে, শরীর অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। আমাদের কৈলাস যাত্রা শুরু হল। নাবিগ্রাম থেকে আদি কৈলাস  ৩২ কিলোমিটার। ভেতরে ভেতরে তখন একটা উত্তেজনা কাজ করছে। এত কষ্ট এত ঠান্ডা এরকম বন্ধুর পথ অতিক্রম করে চলা সব কষ্টকে তখন ছাপিয়ে মনে হচ্ছে কখন দেখবো কখন দেখবো! কখন সেই কৈলাসের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো! কিছুদূর যাওয়ার পরে শেষ গ্রাম এল কুটি গ্রাম। ইন্দ তিব্বত সীমান্তে এই ছোট্ট কুটি গ্রাম। শুধু আর্মির বেশ বড় একটা ইউনিট রয়েছে এখানে। গাইড বললো পাণ্ডবদের মা কুন্তীর নামে রাখা হয়েছে এই গ্রামের নাম। মজার কথা হলো এখানকার লোক এদের পদবী গ্রামের নাম অনুযায়ী হয়। যেমন কুটি গ্রামের কুটিয়াল, নাবি গ্রামের নাবিয়াল। এরকম রংখালি দুকতাল, সোনাল, দাবিয়াল ইত্যাদি। এখানে এক দূর্গ আছে যা পাণ্ডব দূর্গ নামে পরিচিত। আবার সেখানে এক প্রস্থ চেকিং পারমিট দেখানো, তখন আর দাঁড়াবার ধৈর্য্য থাকছিল না। মনে হচ্ছে এই বুঝি ভোর হয়ে গেল আর আমরা সেই সোনার মুহূর্ত দেখতে পাবো না। যেতে যেতে গাইড দেখাচ্ছে ব্রহ্মা পর্বত, পাণ্ডব পর্বত, আমাদের মাথায় তখন আর সেসব ঢুকছে না। তখন মনে হচ্ছে কত তাড়াতাড়ি কৈলাসের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। ধীরে ধীরে ভোর হচ্ছে,  সকালের আলো ফুটে উঠছে।  ওই ৩২ কিলোমিটার রাস্তা যেতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লেগে গেল। গাইড দেখাচ্ছে ওই দূরে কৈলাস দেখা যাচ্ছে যার মাথায় সূর্যের আলো পড়েছে। আমি কয়েক সেকেন্ড বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম দেখে। এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম যে আমাদের কারোরই মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছিলো না। প্রকৃতি এত সুন্দর হতে পারে! সূর্যের প্রথম আলো যখন কৈলাসের মাথায় পড়ছে মনে হচ্ছে কেউ তরল সোনা ঢেলে দিচ্ছে! কী অপূর্ব শোভা। গাড়ি পৌঁছে গেল একদম আদি কৈলাসের সামনে। আমরা নেমে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কৈলাস পর্বতের দিকে। ধীরে ধীরে সূর্যের আলো তীব্রতা বাড়ছে কৈলাসের রঙ পরিবর্তন হচ্ছে। আশপাশের পাহাড়গুলো তখন আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। ব্রহ্মা পর্বত, পাণ্ডব পর্বত সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত কাছ থেকে কৈলাস দেখতে পাবো কল্পনাও করতে পারিনি। সমস্ত দুঃখ কষ্ট কোথায় উধাও হয়ে গেল, ভীষণ ভালোলাগায় মনটা ভরে গেল। বুঝলাম যে কষ্ট সার্থক হয়েছে। কিছুদিন আগে হাঁটুতে অপারেশন হয়েছে তাই আসতে পারবো কিনা, ঠান্ডার ধকল  নিতে পারব কিনা, আত্মীয়-স্বজনের চিন্তা সমস্ত আশঙ্কা কোথায় উড়ে গেল। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কতক্ষণ যে চুপচাপ ওই পর্বতসারির সামনে এক পাথরের উপর বসে ছিলাম, জানিনা। আসলে এখানে এসে মনে হয় সময় স্থির হয়ে গেছে। কোনও কিছুরই কোনও তাগিদ নেই। দুঃখ কষ্ট সুখ ভালোবাসা সব একাকার হয়ে গেছে।

সবাই নিজের নিজের মতন করে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। জায়গাটার নাম জলিংকং, ভারতীয় সেনার বেশ বড় ইউনিট রয়েছে। তাদের ঘোরাফেরা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে সময় কাটানোর পর আমরা হাঁটতে শুরু করলাম পার্বতী কুন্ডর দিকে যা প্রায় ওখান থেকে তিন কিলোমিটার। হেঁটেই যেতে হবে এখানে আর গাড়ি যায় না। পার্বতী কুণ্ড এক সরোবর, এখানে  শিব পার্বতীর মন্দির আছে। হেঁটে যাওয়া খুব সহজ নয়, বেশ চড়াই তবে এক অদ্ভুত ভালো লাগা সেই হাঁটার কষ্ট আর কোনও গায়ে লাগছিল না। সবাই যে যেতে পারলো তাও নয়, অনেকেই হাঁটার ঝুঁকি নিল না। এত সুন্দর আবহাওয়া, ঝকঝকে নীল আকাশ। হেঁটে উপরে উঠতে শুরু করলাম। প্রচুর ভারতীয় সেনার দল এখানে রয়েছে যারা খুব সহজেই হাঁটাচলা করছিল কিন্তু আমাদের বেশ কষ্টই হচ্ছিল। প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমরা পার্বতী কুন্ড  পৌঁছলাম। গাইড জানালো, এখানে এই সরোবরে নাকি পার্বতী স্নান করে মহাদেবের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল। উত্তরাখণ্ড ঈশ্বরের দেশ হিসেবে পরিচিত। এরকম প্রচুর গল্প কথা প্রচলিত আছে। আদি কৈলাসের প্রতিচ্ছবি জলের মধ্যে দেখতে পেলাম। অনেকে এখান থেকে জল নিয়ে যায়। জলে আদি কৈলাসের প্রতিচ্ছবি আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম যে কত কাছ থেকে আদি কৈলাসকে দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে আরো তিন কিলোমিটার দূরে গৌরী কুন্ড। আমাদের অনেকেই সেখানে গেল কিন্তু আমার আর যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না ফলে আমি পার্বতী কুণ্ড থেকেই ফিরে এলাম। আদি কৈলাসের একদম গোড়ায় অবস্থিত এই গৌরী কুণ্ড। সেখানে যাবার পথে ভীম কি খেতী বলে একটি জায়গা আছে সেখানে নাকি এখনো ধান গাছ ফলে নিজে থেকেই কেউ কোনো চাষ করে না। এর মধ্যেই আমাদের মধ্যে একজনের উচ্চতাজনিত শ্বাসকষ্ট শুরু হল তাকে যথাশীঘ্র সম্ভব উপর থেকে নিচে নামানোর ব্যবস্থা করা হলো। কাছেই আর্মি ইউনিট ছিল সেখানে মেডিকেল সাহায্য পাওয়া গেল। দেখা গেল তার অক্সিজেনের লেভেল অনেক কমে গেছে। ভদ্রমহিলা যেহেতু নিজেই ডাক্তার ছিলেন তাই উনি জানতেন যে এই অবস্থায় তাকে কী চিকিৎসা করা দরকার। উনি সেই রকমই আর্মির লোকজনদের বলছিলেন কিন্তু ওখানে সেই সমস্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা ছিল না ফলে ওঁকে গাড়ি করে আরো নিচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থাগুলো হলো বলেই যথেষ্ট বিপদের সম্মুখীন হয়েও সে বিপদকে সামাল দেওয়া গেল। এটা ঠিক যে প্রায় ১৫ হাজার ফুট উপরে কিছুটা অক্সিজেন কম থাকার ফলে আমাদের কিছুটা হাঁফ লাগছিল। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছিল। জলিংকং ওই সমতল ভূমির একদিকে যেমন  পাহাড়ের চূড়াগুলো সাদা বরফে ঢাকা আবার ঠিক তার উল্টোদিকে একদম রুক্ষ ধূসর পাহাড়গুলো রয়েছে। বলা বাহুল্য, এখানে গাছপালা নেই। অক্সিজেনের লেভেল কম থাকার কারণে গাছপালা নেই। যাঁরা লাদাখ অঞ্চলে গেছেন তাঁরা সেখানে যেমন রুক্ষ ধূসর পাহাড় দেখেছেন সেই রকমই এখানেও রয়েছে। ভোর থেকে সকাল, সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল যেন কোনও সময় এখানে কাউকে বেঁধে রাখতে পারছে না। কারোর কোনও খেয়াল নেই। যদিও এরা বলে যে এইসব জায়গায় এলে নাকি সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত চলে, নখ চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যদিও আমাদের সেরকম কিছু মনে হয়নি। টিমের আর সবাই যখন গৌরীকুণ্ড দেখে ফিরে এলো তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। এবার ফেরার তোড়জোড় শুরু হল। দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের ওখানেই হয়েছিল। যেহেতু পাহাড়ি এলাকায় ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তন হয় তাই গাইড বললো এখান থেকে খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ফিরে যাব। কিছু টেন্ট ফেলা হয়েছে ওখানে যেখানে রান্না ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই ঠান্ডার মধ্যে রোদ্দুর বেশ চড়াই লাগছিল, আবার ভালোও লাগছিল। পিঠে রোদ লাগিয়ে চেয়ারে বসে কৈলাসের দিকে তাকিয়ে আকাশ-পাতাল ভেবে চলেছিলাম। হঠাৎ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা লেখা মনে পড়ে গেল, “অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ কিন্তু পাহাড়কে বিক্রি করে তা জানি না যদি তার দেখা পেতাম দামের জন্য আটকাতো না। আমার একটা নিজস্ব নদী আছে সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে”। ঠান্ডা হাওয়া বইলেও ঠান্ডাটা তখন সহ্য হয়ে গেছে। এখানে দিনের বেলায় যখন রোদ্দুর থাকে তখন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১, কিন্তু রাত্রের দিকে তাপমাত্রা কমতে কমতে মাইনাসে পৌঁছে যায়, দিনের বেলা বয়ে চলা জলাধার রাতে হয়ে যায় কঠিন বরফ।  হঠাৎ দেখলাম বেশ কিছু কালো ময়নার মতন পাখি উড়ে এলো। গাইড বললো এই পাখিগুলো পর্বতরোহীদের  আত্মা। জানলাম এগুলো হচ্ছে আলপাইন চোঘ, কাকেদের মতনই এক পাখি। পাহাড়ি অঞ্চলই দেখা যায়। ধর্মীয় কারণে কৈলাসের মতন পর্বতে কেউ অভিযান করতে পারে না। কৈলাস পর্বতে কেউ উঠতে পারে না, আজ পর্যন্ত নাকি কোনও অভিযান সফল হয়নি। আদি কৈলাসকে তারা শিব কৈলাশ বা শিবের বাসস্থান বলে জানে। এরকম অনেক গল্প বসে বসে শুনছিলাম। আমাদের খাবার দেওয়া হল। এবার ফিরে আসার পালা। ভালো লাগছিল না ফিরতে।

মনে হচ্ছিল যদি এখানেই থেকে যেতে পারতাম। তবে ভালোবাসার সবটুকু মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েই এক ভয়ঙ্কর সুন্দর আনন্দের রেশ নিয়ে আমরা ফিরতে শুরু করলাম। ক্যামেরায় কত ছবি তুললাম, শয়ে শয়ে ছবি তুলেও  ছবি যেন শেষ হয় না। প্রতিমুহূর্তে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি এখানে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। যেখানে সব সভ্যতা স্তব্ধ হয়ে গেছে সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ফিরে আসতে লাগলাম। গাড়িতে কেউ কোনো কথা বলছে না সবাই চুপচাপ। সন্ধের অনেক আগেই আমরা বেস ক্যাম্পে পৌঁছে গেলাম। আজকের রাত্রিটা অনেকটা রিল্যাক্স্‌ড মুডে রয়েছি। এত সুন্দর কৈলাস দর্শন হবে আমরা ভাবতেও পারিনি, প্রত্যেকেই খুব আনন্দে রয়েছে।

পরের দিন সকালে আবার এখান থেকে বেরিয়ে পড়বো পঞ্চচুল্লির উদ্দেশে, পথে পড়বে ওম পর্বত। প্রকৃতির কী অপূর্ব সৃষ্টি! কোথাও গণেশের মুখ কোথাও ওম লেখা পর্বত নিজে নিজেই তৈরি হয়ে উঠেছে। আর সেখানকার মানুষ সেই পাহাড়গুলোকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজো করে। ওম পর্বত থেকে আরো তিন কিলোমিটার ওপরে লিপুলেক পাস, গাড়িতে যাওয়া যায়। তারপর আরো এক কিলোমিটার হেঁটে প্রায় ১৮ হাজার ফুট উপরে, সেখান থেকেও মানস কৈলাস দর্শন হয়। তবে এখানে যাওয়া খুব সোজা ব্যাপার নয়। যথেষ্ট শারীরিক ক্ষমতা ও মনের জোর না থাকলে এখানে না যাওয়াই ভালো। সেনাবাহিনীর পারমিশনের প্রয়োজন হয়। এরা খুবই নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখে। ১৮ বছর থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত মানুষদেরই ওরা অনুমতি দেয়।

পাহাড় বরাবরই আমাকে টানে। আমি জানিনা কেন পাহাড়ের কোলে এলেই আমি এক অপার শান্তির খোঁজ পাই। আসলে পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে এতই ছোট মনে হয় যে, আমি আমার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট এই পাহাড়ের বিশালতার কাছে সমর্পণ করতে পারি। বলতে পারি আমার সব কথা, বলতে পারি আমার সব অপরাধ তুমি ক্ষমা করো, আমার  ঔদ্ধত্য আমার অহংকার তোমার পায়ের তলায় থাকুক। জীবনে আমার কোনও কিছু না পাওয়ার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট সবকিছুই এই পাহাড় ভুলিয়ে দেয়। আর এই জীবনের প্রান্তিক সময়ে এসে কী-বা পাওয়ার আছে! শুধু প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্যই তো আসা, যা আমি দুহাত ভরে তুলে নিয়েছি। বহুদিনের ইচ্ছে এইভাবে পূরণ হবে আমার কল্পনার মধ্যেই আসেনি। এক ভীষণ ভালোলাগা নিয়ে একরাশ স্মৃতি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।